নাম বিশেষণ
বাংলা ব্যাকরণে বিশেষণ নামক পদের একটি শ্রেণি বিশেষ। যে সকল শব্দ সর্বনাম ও বিশেষ্যকে বিশেষিত করে, তাকেই নাম বিশেষণ বলা হয়বিভিন্ন অবস্থা সাপেক্ষে এই জাতীয় বিশেষণ তৈরি হতে পারেযেমন

১. গুণবাচক বিশেষণ : এখানে গুণ বলতে শুধুমাত্র প্রশংসনীয় ভাবকে বুঝাবে নাএক্ষেত্রে অবশ্যই গুণবাচক শব্দটিকে ব্যাকরণের পরিভাষা হিসাবে বিবেচনা করতে হবেব্যাকরণের এই পরিভাষাটির সংজ্ঞা হবে- যার দ্বারা বিশেষ্যের  বৈশিষ্ট্য (দোষ, গুণ ও অবস্থা ইত্যাদি) প্রকাশ পাবে যেমন

দক্ষ শ্রমিকএখানে শ্রমিক শব্দটি দক্ষ দ্বারা বিশেষিত হয় বলে- দক্ষ বিশেষণ এই জাতীয় বিশেষণ পদপ্রকরণে যেভাবে নির্দেশিত হয়ে থাকে, তা হলো

            গুণ        দক্ষবিশেষণ {নাম-বিশেষণ | গুণবাচক}
           
দোষ      কপটবিশেষণ {নাম-বিশেষণ | গুণবাচক}
           
অবস্থা     রোগা বিশেষণ {নাম-বিশেষণ | গুণবাচক}   

সহজাতভাবে তৎসম নামবাচক বিশেষণের গুণবাচক পদগুলো পুংলিঙ্গ হয়এর সাথে আপ্ বা ঈপ্ প্রত্যয়যোগে উৎপন্ন শব্দ স্ত্রীলিঙ্গে পরিণত হয়তাই বিশেষণ {নাম-বিশেষণ (গুণবাচক)}-এর ক্ষেত্রে লিঙ্গ উল্লেখ করতে হবে এবং একই সাথে এর বিপরীত লিঙ্গেরও উল্লেখ করতে হবে  যেমন

আপ্ প্রত্যয়          নিন্দিত                                বিশেষণ {নাম-বিশেষণ (গুণবাচক)}পুংলিঙ্গ স্ত্রীলিঙ্গ : নিন্দিতা
                         নিন্দিতা   (নিন্দিত +আপ্)       বিশেষণ {নাম-বিশেষণ (গুণবাচক)}স্ত্রীলিঙ্গ
পুংলিঙ্গ : নিন্দিত

   ঈপ্ প্রত্যয়         সুন্দর                                বিশেষণ {নাম-বিশেষণ (গুণবাচক)}পুংলিঙ্গ স্ত্রীলিঙ্গ : সুন্দরী
                         সুন্দরী   (সুন্দর +ঈপ্)          বিশেষণ {নাম-বিশেষণ (গুণবাচক)}স্ত্রীলিঙ্গ
পুংলিঙ্গ : সুন্দর

২. সাদৃশ্য-গুণবাচক : যখন একটি বিষয়ের গুণের সাথে সাদৃশ্য বিবেচনা করে কোন গুণকে প্রকাশ করা হয়, তখন তাকে সাদৃশ্যবাচক বিশেষণ বিবেচনা করা হবেযেমন-চন্দ্রপ্রভএর অর্থ হলো- চন্দ্রের মতো প্রভা যাহার চন্দের প্রভার  সাথে সাদৃশ্য রয়েছে এমন বিবেচনা করে অপরের প্রভাকে নির্দেশিত করা হচ্ছেএক্ষেত্রে গুণবাচক ভাবটি থাকে বলেই এই জাতীয় বিশেষণকে এই নামকরণ করা হয়েছে এই জাতীয় বিশেষণ যেভাবে নির্দেশিত হবে, তা হলো

                        চন্দ্রপ্রভ   বিশেষণ {নাম-বিশেষণ (সাদৃশ্য-গুণবাচক)}

৩. সম্বন্ধবাচক : যখন কোন বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত হয়ে একটি গুণগত মান প্রকাশ করে তখন তাকে সম্বন্ধবাচক বিশেষণ হিসাবে বিবেচনা করা হবেযেমন- বংশীয়এই শব্দটি বংশের সাথে সম্পর্কিত হয়ে গুণবাচক শব্দে পরিণত হয় এই জাতীয় শব্দের নির্দেশনা হবে
                        বংশীয়    বিশেষণ
{নাম-বিশেষণ (সম্বন্ধবাচক)}

          
সম্বন্ধবাচক বিষয়টি ব্যাপককারণ সম্বন্ধ বা সম্পর্কিত বিষয় হতে পারে বহুবিধ যেমন
                       জাপানী কলমএখানে জাপানি হবে- বিশেষণ {নাম-বিশেষণ (সম্বন্ধবাচক, দেশ)}

এই সকল বিষয় বিবেচনা করে সম্বন্ধবাচক বিশেষণকে আরও যে সকল ভাগে ভাগ করা যায়, তা হলো

.১. উত্তরাধিকার : কোনো বিষয়ের সাথে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পর্ক আছে, এমন বিশেষণ যেমন

            জাতীয় =জাতির সাথে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পর্কিত
            বংশীয় =বংশের সাথে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পর্কিত

এই জাতীয় বিশেষণের পরিচয় হবে-
           বিশেষণ {নাম-বিশেষণ (সম্বন্ধবাচক, উত্তরাধিকার)}

.২. স্থানবাচক  :কোনো দেশ বা স্থানের সম্পর্ক আছে এমন বিশেষণ যেমন

            জাপানি = জাপান নামক দেশে উৎপন্ন বা জাত অর্থে জাপানি
           
ব্রিটিশ = ব্রিটেন নাম দেশে উৎপন্ন বা জাত অর্থে ব্রিটিশ

এরূপ হতে পারে, স্বদেশী, বিদেশী, বিলাতী ইত্যাদি এই জাতীয় বিশেষণের পরিচয় হবে
           বিশেষণ {নাম-বিশেষণ (সম্বন্ধবাচক, স্থানবাচক)}

.৩. সংস্কৃতি: কোনো দেশ বা জাতির সংস্কৃতির সাথে সম্পর্ক আছে এমন বিশেষণ যেমন

বাঙালি = বাঙালি জাতির আচরিত কর্মকাণ্ড অর্থে বাঙালি  বাঙালি সংস্কৃতি, বাঙালি মানসিকতাএরূপ হতে পারে, স্বদেশী, বিদেশী, বিলাতী ইত্যাদি এই জাতীয় বিশেষণের পরিচয় হবে-
          বিশেষণ {নাম-বিশেষণ (সম্বন্ধবাচক, সংস্কৃতি)}

জাতি, সংস্কৃতি, আচরণ ইত্যাদির বিচারে কোনো কোনো সময়ে গালি বা ব্যঙ্গার্থে কিছু বিশেষণ ব্যবহার করা হয়যেমন- কুচক্রী অর্থে ‘ব্রিটিশ’ এই জাতীয় বিশেষণের সাথে অতিরিক্ত শব্দ ‘মন্দ’ ব্যবহার করা হবে

বিশেষণ {নাম-বিশেষণ (সম্বন্ধবাচক, সংস্কৃতি)} 

এরূপ অন্যান্য বিশেষণ ব্রাহ্ম (ব্রহ্মন্ সম্বন্ধীয়), মনস্তাত্ত্বিক

. জাতিবাচক : জাতিগত নাম মূলত বিশেষ্যযেমন বাঙালি, জাপানি, ব্রিটিশ ইত্যাদি কিন্তু যখন এই নাম অন্য শব্দের পূর্বে বসে, উক্ত শব্দকে বিশেষিত করে তখন তা বিশেষণে পরিণত হয়যেমন জাপানি কলম এই জাতীয় শব্দের নির্দেশনা হবে

                        জাপানিবিশেষণ {নাম-বিশেষণ (জাতিবাচক)}

. যোগ্যার্থ : কোনো বিষয়ের উপযোগী বা কোন বিষয় সম্পন্ন করার সূত্রে উপযোগী হয়েছে, এমন ভাব বা গুণপ্রকাশক শব্দ যখন অন্য পদকে বিশেষিত করে, তখন তা যোগ্যার্থ বিশেষণ হবে যেমন

            বিতরিত = বিতরণের যোগ্য অর্থে এর পদ নির্দেশনা হবে
                     
বিতরিত   বিশেষণ {নাম-বিশেষণ (যোগ্যার্থ)}
           

. উপাদনবাচক : যে সকল শব্দ দ্বারা মৌলিক উপকরণ বা উপাদানকে প্রকাশ করা হয় এবং উক্ত উপাদান যদি কোনো বিশেষ্যকে বিশেষিত করে, তবে তা উপাদানবাচক বিশেষণে পরিণত হবেযেমন- স্বর্ণময় আসন, মৃন্ময় পাত্র ইত্যাদি এক্ষেত্রে এই জাতীয় শব্দের পদ-নির্দেশক বিন্যাস হবে

স্বর্ণময়বিশেষণ {নাম-বিশেষণ (উপাদানবাচক)

. উদ্ভবার্থ : কোনো বিষয় বা বস্তু থেকে যা উৎপন্ন হয়, তা যদি উৎসের নামসহ প্রকাশিত হয়, তবে তা উদ্ভবার্থকে প্রকাশ করেযেমন- উদ্ভিজএখানে উদ্ভিদ থেকে উৎপন্ন হয়েছে এমন বস্তুকে নির্দেশ করছেএক্ষেত্রে উৎপন্ন দ্রব্যটির সাথে উৎপত্তির উৎসও নির্দেশিত হচ্ছেএই জাতীয় শব্দকেই উদ্ভবার্থ বিশেষণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছেএই জাতীয় অন্যান্য শব্দ- প্রাণিজ, যোনিজ, পার্থিব ইত্যাদি এক্ষেত্রে এই জাতীয় শব্দের পদ-নির্দেশক বিন্যাস হবে
                 উদ্ভিজবিশেষণ {নাম-বিশেষণ (উদ্ভবার্থ)}

. সংখ্যাবাচক : যদি গণনযোগ্য বিষয়ের পূর্বে সংখ্যাবাচক শব্দ ব্যবহৃত হয় এবং উক্ত শব্দ যদি অন্য শব্দকে বিশেষিত করে, তবে তা সংখ্যাবাচক বিশেষণ হিসাবে বিবেচিত হবেযেমন:-এক সের, পাঁচ মন ইত্যাদি এক্ষেত্রে এই জাতীয় শব্দের পদ-নির্দেশক বিন্যাস হবে
                একবিশেষণ {
নাম-বিশেষণ (সংখ্যাবাচক)

. পরিমাণবাচক : সুনির্দিষ্ট সংখ্যার পরিবর্তে পরিমাণ-বোধক শব্দকে এই জাতীয় বিশেষণের অন্তর্ভূক্ত করা হবেযেমন অনেক টাকা, বহু লোক, অর্ধেক সম্পত্তি, সকল বিষয় ইত্যাদি এই জাতীয় শব্দের পদ-নির্দেশক বিন্যাস হবে-

                 অনেকবিশেষণ {নাম-বিশেষণ (পরিমাণবাচক)
                 ছোট । বিশেষণ {নাম-বিশেষণ (পরিমাণবাচক)}

১০. কালবাচক : সময়জ্ঞাপক শব্দকে যা বিশেষিত করে। গত, আগামি, বিগত ইত্যাদি শব্দ কাল বা সময়কে বিশেষিত করে। যেমন

                গত। গত পরশুদিন
                আগামি । আগমি মাস।

১১. পূরণবাচক : প্রথম (প্রথম স্থান), দ্বিতীয় (দ্বিতীয় দিন)

                        প্রথমবিশেষণ {নাম-বিশেষণ (পূরণবাচক)

১২. সর্বনামীয় বিশেষণ : যে (যে ব্যক্তি), এই (এই দিন), ঐরূপ

এইবিশেষণ {নাম-বিশেষণ | সর্বনামবাচক}

১৩. নিশ্চিতবাচক : অনস্বীকার্য, অনিবার্য, অপ্রতিকরণীয়, অপ্রতিকার্য, অপ্রতিবিধেয়, অপ্রতিরোধ্য, অবধারিত, অবশ্যম্ভাবী, অবসম্ভাব্য, অবিতর্কিত, অব্যর্থ, অমোঘ, অসংবর, অসংবরণীয়, অসংশয়, অসংশনীয়, অসংশয়িত, অসন্দিগ্ধ, ছিন্নদ্বৈধ, ছিন্নসংশয়, দ্বন্দ্বাতীত, দ্ব্যর্থহীন, নিঃসংশয়, নিরূপিত, নির্দিষ্ট, নির্দ্বিধ, নির্ধারিত, নির্বিকল্প, নিশ্চিত, প্রকৃত, প্রতীত, প্রত্যয়িত, প্রত্যয়ী, বিনিশ্চিত, প্রমিত, প্রশ্নাতীত, প্রশ্নহীন, ভাব্য, মোক্ষম, সংশয়হীন, সংশায়াতীত, সন্দেহহীন, সন্দেহাতীত, সুনিশ্চিত, স্থির

অনস্বীকার্যবিশেষণ {নাম-বিশেষণ (নিশ্চিতবাচক)}