বিশেষণের অতিশায়ন
যখন দুই বা ততোধিক বিশেষ্য পদের গূণ বা ভাববাচক অবস্থাকে তুলনা করা হয়
, তখন তাকে বিশেষণের অতিশায়ন বলা হয় এক্ষেত্রে দুটি ব্যাকরণগত পরিভাষা ব্যবহার করা হয়এ দুটো পরিভাষা হলো- উপমান এবং উপমেয়

            উপমান : যার সাথে তুলনা করা হয়
            উপমেয় : যাকে তুলনা করা হয়

যেমন রূপার চেয়ে সোনা দামী এখানে রূপা উপমান এবং সোনা উপমেয়

অতিশায়ন নির্ণয় বা ব্যবহারের সূত্রাবলী

দেশী শব্দের অতিশায়ন
দুই বা ততোধিক দেশী শব্দের ক্ষেত্রে কিছু অব্যয় (অনুসর্গ বাচক) ব্যবহার করে অতিশায়ন হয়ে থাকেএই শব্দগুলো হলো- হতে, থেকে, চেয়ে, অপেক্ষা ইত্যাদিযেমন

            দুইয়ের ভিতর তুলনা : হাতির চেয়ে ঘোড়া দ্রুত দৌড়ায়
            বহুর ভিতর তুলনা : গরুগুলোর চেয়ে ঘোড়াগুলো ভালো ছিল

এক্ষেত্রে বাংলা অতিশায়নের ক্ষেত্রে নিজস্ব রীতি অনুসৃত হয়যেমন

তুলনার সময় অতিশায়ন বিশেষণ যদি উপমান ও উপমেয়-র মধ্যে বসে তবে, উপমানের সাথে ষষ্ঠী বিভক্তি যুক্ত হয় যেমন           

ভেড়ার চেয়ে গরু বড়
তার চেয়ে ও ভালো

তুলনার সময় অতিশায়ন বিশেষণ যদি উপমান ও উপমেয়-র মধ্যে বসে এবং তা ক্রিয়াপদের সাথে সক্পর্ক স্থাপন করে, তা হলে উপমেয় পদের সাথে কোম বিভক্তি বসে নাঅন্যথায় উপমেয়-র সাথে ষষ্ঠী বিভক্তি বসেযেমন

            হাতির চেয়ে ঘোড়া দ্রুত দৌড়ায়         দৌড়ায় ক্রিয়াপদের সাথে সম্পর্কযুক্ত
            জামের চেয়ে আমের দাম বেশি
          এখনে দাম ক্রিয়াপদ নয়

যদি অতিশায়ন উপমেয় পদের পরে উপমান থাকে, তবে উপমানের সাথে ষষ্ঠী বিভক্তি বসে
           
রহিম করিমের চেয়ে বুদ্ধিমান
           
এখানে রহিম উপমেয় এবং করিম উপমানতাই শব্দটি হয়েছে করিমের

উৎকর্ষ বা অপকর্ষের আধিক্যের বিচারে উপমানের পরে অধিক, অনেক, অত্যন্ত, বেশি, খুব, অল্প, কম ইত্যাদি বিশেষণীয়-বিশেষণ মূল বিশেষেণের পূর্বে বসে

            যেমন সুমন রাজিবের চেয়ে বেশ ছোট

বহুর ভিতর তুলনা করার ক্ষেত্রে উপমানের পরে সর্বাপেক্ষা, সর্বাধিক সবে থেকে ইত্যাদি মূল বিশেষেণের পূর্বে বসেযেমন         নন্দিতা বোনদের ভিতর সবচেয়ে বড়
                    মিলু ক্লাসের ভিতর সবচেয়ে মেধাবী

যে ক্ষেত্রে উপমান পদটিতে প্রচ্ছন্ন বা অপ্রত্যক্ষ অবস্থায় থাকে, সেখানে উপমানের সাথে ষষ্ঠী বিভক্তি বসে না  যেমন
           
শৃগাল সবচেয়ে চালাক প্রাণী

মূলত এর ভাবটি হলো- শৃগাল প্রাণীদের ভিতর সবচেয়ে চালাক এখানে প্রাণীদের শব্দটি প্রচ্ছন্ন হয়ে প্রাণী শব্দ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে

তৎসম শব্দের অতিশায়ন

১. তৎসম শব্দের অতিশায়নে দুইয়ের ভিতরে তুলনা করলে, মূল শব্দের পরে -'তর' এবং দুয়ের অধিক হলে -'তম' ব্যবহৃত হয়। যেমন-

এক                    দুই                    দুয়ের অধিক
গুরু                        গুরুতর                    গুরুতম
দীর্ঘ                        দীর্ঘতর                    দীর্ঘতম

কোনো শব্দের সাথে শ্রুতিকটুর বিচারে এই নিয়মে শব্দ গঠিত হয় না। যেমন 'সুন্দরতম' শব্দ ব্যবহৃত হলেও 'সুশ্রীতম' শব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় না।

২. কিছু কিছু সংস্কৃত শব্দের অতিশায়নের সকল রূপ বাংলাতে ব্যবহৃত না হলেও অংশবিশেষ ব্যবহৃত হয়। যেমন

এক                                দুই                                দুয়ের অধিক
লঘু                                        লঘীয়ান (বাংলায় ব্যবহার নেই)     লঘিষ্ঠ
অল্প                                      কনীয়ান (বাংলায় ব্যবহার নেই)     কনিষ্ঠ
যুবন (বাংলায় ব্যবহার নেই)         কনীয়ান (বাংলায় ব্যবহার নেই)     কনিষ্ঠ
বৃদ্ধ                                        জ্যায়ান (বাংলায় ব্যবহার নেই)      জ্যেষ্ঠ
শ্রেয়                                       শ্রেয়ান (বাংলায় ব্যবহার নেই)        শ্রেষ্ঠ

কিন্তু এই জাতীয় শব্দের সাথে ইষ্ট প্রত্যয়যোগে শব্দ গঠিত হওয়ার পরে পুনরায় অতিশায়ন হয়। বাংলাতে এর ব্যবহার আছে। যেমন-
        শ্রেষ্ঠ        শ্রেষ্ঠতর            শ্রেষ্ঠতম

ঈয়স প্রত্যয়জাত কোনো কোনো শব্দ স্ত্রীলিঙ্গ হিসেবে বাংলাতে ব্যবহৃত হয়। যেমন ভূয়সী।