বহুব্রীহি
বাংলা ও সংস্কৃত ব্যাকরণে বর্ণিত সমাস বিশেষ। পাণিনি ব্যাকরণ থেকে এই সূত্র বাংলাতে গৃহীত হয়েছে। বিদ্যাসাগর রচিত ব্যাকরণ কৌমুদীতে এর ইংরেজি সমার্থক শব্দ হিসাবে বলা হয়েছে- Attributive Compoundব্যাকরণ কৌমুদী মতে- একাধিক প্রথমান্ত পদ অন্য পদার্থের অর্থ বুঝাইলে বহুব্রীহি সমাস। এর সরলার্থ হলো- যে সমাস সমস্যমান পদগুলোর কোনটির অর্থ প্রধানভাবে না বুঝিয়ে অন্য কোন অর্থ বুঝিয়ে থাকে, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন
       দশ আনন যার= দশানন (রাবণ)

দশ মুখ যার আছে এমন কোন সত্তাকে দশানন শব্দ দ্বারা নির্দেশিত হলেও, দশানন বলতে হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র রাবণকে বুঝায়। পদগুলির বিন্যাস এবং এর প্রকৃতি অনুসারে এই মাসকে ১০টি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগগুলি হলো

. সমানাধিকরণ বহুব্রীহি

পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হলে তাকে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন
        সুন্দর হৃদয় যার= সুহৃদ;

        সুবুদ্ধি যার= সুবুদ্ধি ইত্যাদি।

এখানে সুন্দর ও সুবুদ্ধি পূর্বপদ এবং বিশেষ্য। উভয় মিলে এই সমাস গঠিত হয়েছে বলেই একে সমানাধিকরণ সমাস বলা হয়।

 

. ব্যধিকরণ বহুব্রীহি

পূর্বপদ বিশেষণ না হয়ে অন্যপদ হলে হলে তাকে ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন
       বীণা পাণিতে যার/বীণাপাণি

এখানে বীণা (বাদ্যযন্ত্র) বা পাণি (হাত) উভয়ই বিশেষ্যপদ।

 
. ব্যতিহার বহুব্রীহি

একই জাতীয় বিশেষ্যপদ পরপর বসে যে একই কাজের একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া বুঝালে ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন
       হাতে হাতে যে যুদ্ধ = হাতাহাতি;

হাত শব্দের পুনঃ ব্যবহার করে একটি কর্মপ্রক্রিয়াকে উপস্থাপন করা হয়েছে।

 
. মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি

হুব্রীহি সমাসের মধ্যস্থিতপদের লোপ হলে তাকে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন
        
সোনার মতো উজ্জ্বল মুখ যার/সোনামুখী

এখানে মধ্যপদের লোপে সমাস সৃষ্টি হয়েছে

 
. সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি

সংখ্যাবাচক শব্দের পূর্বে থেকে বহুব্রীহি সমাস হলে তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন
        সে (তিন) তার যার=সেতার;

        ত্রি (তিন) পদ যার=ত্রিপদ ইত্যাদি।

এখানে সংখ্যাবাচক শব্দ (তিন) শব্দের পূর্বে বসে একটি বিশেষ বস্তুকে বুঝানো হচ্ছে।

 
. নঞ্ বহুব্রীহি

না-বোধক অব্যয় পদের সাথে বিশেয্য পদের বহুব্রীহি সমাস হলে তাকে নঞ বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন

         বে () তার যার= বেতার;

         নি (নাই) দোষ যার= নির্দোষ ইত্যাদি।

উভয় ক্ষেত্রেই না-বোধক অব্যয় (বে, নি) বিশেষ্য পদের সামনে বসে সমাস সৃষ্ট হয়েছে।

. প্রত্যায়ান্ত বহুব্রীহি
বহুব্রীহি সমাসের পরে আ, এ, ও ইত্যাদি প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যে সমাস তৈরি হয়, তাকে প্রত্যায়ান্ত বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন

         এক দিকে চোখ যার =একচোখ+আ=একচোখা

. উপমান বহুব্রীহি

যে বহুব্রীহি সমাসে একটি উপমান পদ থেকে তুলনা বোঝায় তার নাম উপমান বহুব্রীহি সমাস বলে।

যেমন-
          কমলের ন্যায় অক্ষি যার=কমলাক্ষি।

কমল (পদ্মফুল) -এর সাথে অক্ষি (চক্ষুর) তুলনা করে বহুব্রীহি সমাস হয়েছে।

. সহার্থক বহুব্রীহি

যে বহুব্রীহি সমাসের সাথে অর্থের ‘স’ প্রভৃতি শব্দ পূর্বে যুক্ত থাকে তাকে সহার্থক বহুব্রীহি সমাস বলে।

যেমন-
         জলের সাথে বর্তমান= সজল
         বিনয়ের সাথে বর্তমান=সবিনয়

উভয় ক্ষেত্রে বর্তমানে যুক্ত আছে অর্থে 'স' ধ্বনি ব্যবহৃত হয়েছে।

১০. অলুক বহুব্রীহি

যে বহুব্রীহি সমাসে বিভক্তির লোপ হয় না তাকে অলুক বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন
         হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে= হাতেখড়ি ।

এখানে হাত শব্দের সাথে যুক্ত এ-প্রত্যয় লোপ পায় নাই। তাই একে অলিক বহুব্রীহি বলা হয়েছে