ধ্বনিবিজ্ঞান
Phonetics

মানুষের বাগ্‌যন্ত্রজাত ক্ষুদ্রতম ধ্বনি একক হলো বাগ্‌ধ্বনি (phone)। আর একটি ভাষার বাগ্‌ধ্বনিগুলো যে সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনিত হয়, তার সবই বাগ্‌যন্ত্রের (vocal organs) অংশ। এই সকল বাকপ্রত্যঙ্গের মধ্যে রয়েছে, বাক্‌যন্ত্র, ঠোঁট, জিহ্বা, কণ্ঠ, নাসিকা ইত্যাদি। সাধারণভাবে বাগ্‌যন্ত্রের দ্বারা উচ্চারিত ধ্বনিসমূহের উচ্চারণ প্রক্রিয়াকে বলা হয় ধ্বনির উচ্চারণ (articulation)। বাগ্‌ধ্বনি উচ্চারণের ক্ষেত্রে মানুষ বাগ্‌যন্ত্রের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে। বাগ্‌যন্ত্রের বিভিন্ন অংশের গঠন এবং এগুলোর সাহায্যে মানুষ কিভাবে বাগ্‌ধ্বনি তৈরি করে এবং এসকল বাগ্‌ধ্বনির প্রকৃতি নির্ণয় যে শাস্ত্রে করা হয়, তাই হলো  ধ্বনিবিজ্ঞান (phonetics)।

ধ্বনিবিজ্ঞান সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য, আরও কিছু সহায়ক বিষয় জানার প্রয়োজন হয়। যেমন- পদার্থবিজ্ঞানের অন্তর্গত শব্দবিজ্ঞান। মূলত উচ্চারিত বাগ্‌ধ্বনি শ্রবণেন্দ্রিয়ের বহির্কর্ণে পৌঁছার পূর্ব-কাল পর্যন্ত শক্তি হিসেবে কোনো মাধ্যমের ভিতর দিয়ে তরঙ্গাকারে চলে। এক্ষেত্রে ধ্বনিতরঙ্গ বিষয়ক বিজ্ঞান (
acoustics) বলা হয়। আবার শব্দতরঙ্গ স্নায়ুতন্ত্রের ভিতর দিয়ে মস্তিষ্কের শব্দ প্রক্রিয়ক অংশে প্রবেশ করে। এরপর মানুষ যে অনুভবের অভিজ্ঞতা লাভ করে, তাকে বলা হয় ধ্বনি-শ্রবণ (audition)। আর একটি ভাষায় যত বাগ্‌ধ্বনি ব্যবহৃত হয়, তার সবগুলো একই প্রকৃতির হয় না। বাগ্‌ধ্বনির প্রকৃতি আলোচনা করা হয় যে শাস্ত্রে তাকে বলা হয়- ধ্বনিবিচার (phonemics)।

মানুষের কথিত বাক্যের ক্ষুদ্রতম অংশ হিসেবে স্বরধ্বন ও ব্যঞ্জনধ্বনি ব্যবহৃত হয়। শব্দের স্বরধ্বনি হলো- ভিত্তি ধ্বনি। এর সাথে ব্যঞ্জনধ্বনি যুক্ত হয়ে মিশ্রধ্বনির সৃষ্টি করে। আর উভয়ের প্রবহমান দশায় তৈরি হয় শব্দরূপ। এইভাবে সৃষ্টি ধ্বনির সকল ধরনের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয় ধ্বনি-বৈশিষ্ট্য অংশে। মানুষের ভাষার ধ্বনিসমূহ অর্থবহ হতে হয়। তা না হলে ভাষায় কোনো ধ্বনিই শব্দ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।  তাই ধ্বনির উচ্চারণের সাথে এর সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। কণ্ঠস্বরের উত্থান-পতন, বাক্যের সুরের হেরফেরে বাক্যের ভাবগত রূপ ভিন্ন ভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়।


 


সূত্র :
ভাষা-প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। রূপা। বৈশাখ ১৩৯৬।
ভাষার ইতিবৃ্ত্ত।
সুকুমার সেন। আনন্দ পাবলিশারস্ প্রাইভেট লিমিটেড। নভেম্বর ১৯৯৪।
বাঙ্গালা ব্যাকরণ
। ডঃ মুহম্মদ শহীদউল্লাহ। মাওলা ব্রাদার্স। আগষ্ট ২০০৩
বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত
। ডঃ মুহম্মদ শহীদউল্লাহ। মাওলা ব্রাদার্স। জুলাই ১৯৯৮
বাংলা সাহিত্যের কথা
। ডঃ মুহম্মদ শহীদউল্লাহ। মাওলা ব্রাদার্স।
সাধারণ ভাষা বিজ্ঞান ও বাংলা ভাষা
। ডঃ রামেশ্বর শ।
সরল বাঙ্গালা অভিধান। সুবলচন্দ্র মিত্র
বঙ্গীয় শব্দকোষ। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঙ্গালা ভাষার অভিধান। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস
বাংলা একাডেমী ব্যাবহারিক বাংলা অভিধান