হিজরত আন্দোলন
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে অনুষ্ঠিত আন্দোলন বিশেষ।
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে মওলানা আবুল কালাম আজাদ রাচী জেল থেকে মুক্তিলাভের পর হিজরত আন্দোলন শুরু করেন। তার অনুসারী কওমী আলেমগণ ফতোয়া দেন যে, 'ভারত দারুল হারব এবং এখান থেকে হিজরত করে কোন দারুল ইসলামে যেতে হবে'। এই দারুল ইসলামের স্থান হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল 'আফগানিস্তান'কে। এই ফতোয়ার সূত্রে লক্ষ লক্ষ মুসলমান তাঁদের সকল সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে আফগানিস্তানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিল। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের কেবলমাত্র আগষ্ট মাসের দিকে প্রায় আঠারো হাজার মুসলমান আফগানিস্তানে চলে গিয়েছিল। এ ছাড়া প্রায় পাঁচ লক্ষ মুসলমান আফগানে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে তাদের ভিটেমাটি বিক্রয় করেছিলো।
এই সময় আহমাদীয়া জামাতের খলিফা
হযরত মুসলেহ মাওউদ মুসলমানদের এই হিজরতকে হটকারী সিদ্ধান্ত মনে করে বলেন-
'এই আন্দোলন দ্বারা তোমরা
এতখানি ক্ষতিগ্রস্থ হবে যে, দীর্ঘকাল ধরিয়া তোমাদিগকে ইহার খেসারত দিতে হইবে' [সূত্র:
পাক্ষিক আহমদী। ৩১ মার্চ ২০০০। পৃষ্ঠা: ২৩]
মুসলেহ মাওউদের আত্মীয়
তাজাম্মল হোসেন ছিলেন সে সময়ের হিজরত কমিটির সেক্রেটারি।
মাওলানা হিজরত কমিটির সাথে আলোচনা করে দেখেন যে, এই আন্দোলনের
জন্য কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় নি।
তাছাড়া আফগানিস্তানে এই বিপুল পরিমাণ মুসলমানের যাওয়ার ব্যাওআরে
আফগান সরকারের সাথে কোনো আলোচনাও করা হয়
নি। এ সকল ত্রুটি হিজরত কমিটির
কাছে উত্থাপিত হওয়ার পর, কমিটি মুসলেহ মাওউদকে একটি
পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্যে অনুরোধ করেন। এরপর তিনি যে পরিকল্পনার
খসড়া তৈরি করেন, তা হলো-
১. সর্বপ্রথম আফগান
সরকারের কাছ থেকে জানতে হবে যে-
হিন্দুস্তান থেকে হিজরতকারীদের পুনর্বাসনের জন্যে রাজী আছেন কি
না। যদি তারা
পুনর্বাসনে রাজি থাকে তাহলে তা কিভাবে কার্যকর হবে, তা জেনে
নেওয়া।
২. উল্লিখিত বিষয় নিয়ে আফগান রাষ্ট্রদূতের সাথ
যোগাযোগ করে, এই বিষয়ে আলোচনা করা।
আফগান দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ
করলে, রাষ্ট্রদূত বিব্রত বোধ করেন। একদিকে ইতোমধ্যে যাঁরা
আফগানিস্তানে চলে গেছেন তাদেরকে ফেরৎ পাঠাতে
সরকার দ্বিধাবোধ করছেন। আবার সরকারের পক্ষে
এত লোকের বোঝা বহন করা অসম্ভব।
এরপর হিজরত কমিটি হতাশ হয়ে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।
সে সময়ে আফগানিস্তানের আমীরও হিজরতের
উদ্দেশ্যে ভারতীয় মুসলিমদের আফগানিস্তানে যাওয়া বন্ধ করে
দেন। সবমিলিয়ে এই আন্দোলন চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছিল।
এর ফলে বহু মানুষ তাঁদের বসতবাটি বিক্রয় করে উদ্বাস্তু
হয়ে গিয়েছিল।