মহাজনপদ
খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর পূর্বকালে
ভারতবর্ষের ধারাবাহিক ইতিহাস পাওয়া যায় না। কারণ ভারতবর্ষের
প্রকৃত রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর পরে। সে সময়ে
উত্তরভারতে রাষ্ট্র হিসাবে ১৬টি মহাজনপদের নাম পাওয়া যায়। মহাবীর এবং গৌতম বুদ্ধের
জন্মের আগের (আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৫৬৭ অব্দে বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেছিলেন) এই সকল
মহজনপদের নাম পাওয়া যায়–
'ভগবতীসূত্র' এবং 'অঙ্গুত্তরনিকাই' নামক দুটি গ্রন্থে। এই জনপদগুলো বিস্তৃত
ছিল কাবুল থেকে দাক্ষিণাত্যের গোদাবরী নদী পর্যন্ত। এই জনপদগুলো হলো–
১. কাশী : ষোড়শ জনপদসমূহের মধ্যে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী জনপদ। এর রাজধানী ছিল বারানসী।
২. কোশল : বর্তমান অযোধ্যা নিয়ে এই রাষ্ট্র গঠিত হয়েছিল। এর রাজধানীর নাম ছিল শ্রাবস্তী।
৩. অঙ্গ : মগধররাজ্যের পূর্বে এবং রাজমহলের পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে এই রাষ্ট্র বিস্তৃত ছিল। এর রাজধানীর নাম ছিল চম্পা (বর্তমান বিহার রাজ্যের ভাগলপুর)।
৪. মগধ : বর্তমান পাটনা ও গয়া জেলা নিয়ে মগধ রাজ্য ছিল।
৫. বজ্জি (বৃজি গণতন্ত্র) : আটটি জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে এই রাষ্ট্র গঠিত হয়েছিল। এই জাতিগুলোর ভিতরে উল্লেখযোগ্য জাতিগুলো ছিল– লিচ্ছবি, জ্ঞাতক, বজ্জি ও বিদেহ। এর রাজধানীর নাম ছিল বৈশালী (বর্তমান মজঃফরপুর জেলা)।
৬. মল্ল (মালব) : এই রাজ্য দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। এই দুই রাজ্যের রাজধানীর নাম ছিল যথাক্রমে– কুশীনারা ও পাবা।
৭. চেদী : বর্তমান বুন্দেলখণ্ড ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়েছিল চেদীরাজ্য। এর রাজধানীর নাম ছিল শুক্তিমতি (উত্তরপ্রদেশের এই শহরে বর্তমান নাম বান্দা)।
৮. বৎস (বংশ) : যমুনা নদীর দক্ষিণে এবং অবন্তীরাজ্যের উত্তর-পূর্বে এই রাজ্য অবস্থিত ছিল। এর রাজধানীর নাম ছিল কৌশাম্বী।
৯. কুরু : বর্তমান দিল্লির নিকটবর্তী এই রাজ্য অবস্থিত ছিল। এর রাজধানীর নাম ছিল ইন্দ্রপ্রস্থ।
১০. পাঞ্চাল : বর্তমান রোহিলাখণ্ডে (মধ্য-ভারতের দোয়াব অঞ্চলের কিছু অংশ) ছিল এই রাজ্য। এই রাজ্যের ভিতর দিয়ে গঙ্গানদী প্রবাহিত হওয়ার কারণে, রাজ্যটি উত্তর ও দক্ষিণাংশে বিভক্ত ছিল। এর উত্তরংশের রাজধানীর নাম ছিল অহিচ্ছত্র এবং দক্ষিণাংশের নাম ছিল কাম্পিল্য।
১১. মৎস্য : জয়পুর অঞ্চলে এই রাজ্য অবস্থিত ছিল। এর রাজধানীর নাম ছিল বিরাটনগর।
১২. শুরসেন : যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত ছিল এই রাজ্য। এর রাজধানীর নাম ছিল মথুরা।
১৩. অম্মক : দাক্ষিণাত্যের গোদাবরী নদীর তীরে এই রাজ্য অবস্থিত ছিল। এর রাজধানীর নাম ছিল পোটান বা পেটালি।
১৪. অবন্তী : মধ্যভারতে এই রাজ্যটি অবস্থিত ছিল। বিন্ধ্যাপর্ব্বত এই রাজ্যকে দুটি ভাগে বিভক্ত করেছিল। এর উত্তরাংশের রাজাধানীর নাম ছিল উজ্জ্বয়িনী ও দক্ষিণাংশের রাজধানী নাম ছিল মহিস্মতী।
১৫, গান্ধার : তক্ষশীলা (বর্তমান রাওয়ালপিণ্ডি) ও কাশ্মীর উপত্যাকা নিয়ে এই রাজ্য গঠিত ছিল। এর রাজধানীর নাম ছিল তক্ষশীলা।
১৬ কম্বোজ : গান্ধাররাজ্য সংলগ্ন অঞ্চলে এই রাজ্য অবস্থিত ছিল। এর রাজধানীর নাম ছিল রাজপুর।
উল্লিখিত মহাজনপদগুলোরে ভিতরে ভারতবর্ষের বহু অঞ্চলের নাম পাওয়া যায় না। যেমন- আসাম, বঙ্গদেশ, উড়িষ্যা, গুজরাট, সিন্ধু, মধ্য পাঞ্জাব ইত্যাদির নাম নেই।