রাওলাট আইন
ব্রিটিশ ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন দমনেরর উদ্দেশ্যে প্রণীত আইন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ ভারতে, সরকার বিরোধী সকল প্রকার গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং
সশস্ত্র আব্দোলন দমন করার জন্য, ব্রিটিশ সরকার বিচারপতি সিনডে রাওলাট
(Sidney Rowlatt)
-এর নেতৃত্বে একটি পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট
সেডিশশন কমিশন
(Sedition Commission)
গঠন করে। এই কমিশন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে রক্ষা করার জন্য কতকগুলো সুপারিশ উপস্থাপন করে।
এই সুপারিশের উপর ভিত্তি করে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই মার্চ একটি সন্ত্রাস বিরোধী এবং দমনমূলক আইন প্রণয়ন করে।
এই আইনটিই হলো- রাওলাট আইন ১৯১৯
(The Rowlatt Act of 1919)
। ভারতের ভাইসরয় ও ইম্পিরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৬ এপ্রিল
(২৩ চৈত্র ১৩২৫ বঙ্গাব্দ) সেই আইন বলবৎ করে।
এই আইনের দ্বারা ভারতীয় জনগণের স্বাধীনতা ও অধিকার হরণ করা হয়।
এই সূত্রে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে যে-কোনো প্রচারকার্যকেও দণ্ডনীয় অপরাধ
হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এই আইন বলে কোনো রকম সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই
যে-কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার ও যতদিন খুশি আটক রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
একই সাথে ক্ষমতায় সন্দেহভাজন যে কোনো ব্যক্তির ঘরবাড়ি তল্লাসি এবং অত্যাচার করার অধিকার
সরকারকে দেওয়া হয়েছিল। ফলে ভারতবর্ষের সকল নাগরিক ন্যায়বিচার লাভের
অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল।
সরকারের নিপীড়নমূলক কার্যকলাপ এবং সরকার বিরোধী কোনো লেখা সংবাদপত্রে প্রকাশ করাও দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে
গণ্য হয়েছিল। এক্ষেত্রে পূর্বের কারকর্য সাধারণ আইনের প্রয়োগ স্থগিত হয়ে যায়।
এই আইন পাশ হওয়ার পর, সারা ভারত জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় ।
ভারতীয়দের জাতীয় স্বার্থবিরোধী আইন হিসেবে চারিদিকে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে ওঠে ।
কেন্দ্রীয় আইন সভার সমস্ত ভারতীয় সদস্য প্রতিবাদে করেন।
মদনমোহন মালাব্য, মহম্মদ আলি জিন্নাহ, মাজহার উল হক আইন পরিষদের সদস্য পদে ইস্তফা দেন ।
মহাত্মা
গান্ধী সর্বভারতীয় আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ৩০শে মার্চ এবং ৬ই এপ্রিল
(২৩ চৈত্র ১৩২৫ বঙ্গাব্দ) দেশব্যাপী বিক্ষোভ হরতাল ও জনসমাবেশের ডাক দেন এবং ব্যাপকভাবে পালিত হয়।
তিনি এর প্রতিবাদে সত্যগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন।
এপ্রিল মাসে সর্বভারতীয় সত্যগ্রহ আন্দোলন শুরু হয় এবং হরতাল পালিত হয়। এরপর
পাঞ্জাবে তাঁর প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে, তিনি পাঞ্জাবে প্রবেশের
চেষ্টা করেন। এই কারণে দিল্লী যাওয়ার পথে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।