সাইমন কমিশন
ব্রিটিশ ভারতের সংবিধানিক অনুশাসন
পর্যবেক্ষণ এবং সংস্কারের উদ্দেশ্যে গঠিত একটি কমিশন।
১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষে নির্বিগ্নে শাসন করার উদ্দেশ্যে মন্টেগু
চেমসফোর্ড সংস্কার আইন প্রবর্তন করেছিল। এই সংস্কার আইনে ভারতের স্বাধীনতাকামী
মানুষের আন্দোলন প্রশমিত হওয়ার পরিবর্তে আরও তীব্রতর হয়েছিল। এক কথায় অসহযোগ আন্দোলনের তীব্রতা, সশস্ত্র্র বিপ্লবীদের তৎপরতা ইত্যাদির সূত্রে
সুস্থিরভাবে ভারতে ব্রিটিশ শাসন অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। এই অবস্থা নিরসনের জন্য এই
কমিশন গঠন করা হয়েছিল।
১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশবন্ধু চিত্তরণ্জন দাস ও মতিলাল নেহেরুর গঠিত
স্বরাজ দল ব্রিটিশ সরকারের কাছে কেন্দ্রীয় আইনসভা সংস্কারের জন্য একটি গোলটেবিল
বৈঠকের প্রস্তাব রাখে। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে অনুরূপএকটি দাবি তুলেছিল মুসলিম লীগ।
১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ
পার্লামেন্টের সরকারি এবং বিরোধীদলের সাতজন সদস্য নিয়ে এই কমিশন গঠিত হয়েছিল। এর
নাম ছিল- Indian Statutory Commission।
এই
কমিশনের সভাপতি ছিলেন উদারপন্থী স্যার জন সাইমন। এই কারণের এই কমিশনকে 'সাইমন কমিশন' নামে
অভিহিত করা হয়। দলের অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন- লর্ড স্ট্র্যাথকোনা, ভাইকাউন্ট বার্নহ্যাম, কর্নেল স্টিফেন ওয়েলিস, লেনফক্স, মেজর এটলি ও এডওয়ার্ড ক্যারোগান।
এই সময় ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড আরউইন (১৯২৬-১৯৩১)।
১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে এই দলটি তৎকালীন বোম্বাই বন্দরে পৌঁছালে। ভারতের সমস্ত রাজনৈতিক
দল বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষোভে কালো পতাকা প্রদর্শন করা হয়ে এবং
'Go Back Simon'
প্রচারপত্রে
১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ অক্টোবর লালা লাজপত রায় এই কমিশনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
প্রদর্শন করেন। এই বিক্ষোভের সময় পুলিশের লাঠিচার্জে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। এই
আঘাতের কারণে ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এতসব বিক্ষোভের ভিতরেও এই কমিশন কাজ অব্যাহত রাখে। উল্লেখ্য এই কমিশনের প্রতিবেদনের
উপর ভিত্তি করে ১৯৩৫ খ্রিষ্টব্দের ভারত শাসন আইন প্রণীত হয়েছিল।