শাস্ত্রীয় নাম |
স্বরসঙ্কেত |
ষড়্জ |
স |
কোমল ঋষভ |
ঋ |
ঋষভ |
র |
কোমল গান্ধার |
জ্ঞ |
গান্ধার |
গ |
মধ্যম |
ম |
কড়ি মধ্যম বা তীব্র মধ্যম |
হ্ম |
পঞ্চম |
প |
কোমল ধৈবত |
দ |
ধৈবত |
ধ |
কোমল নিষাদ |
ণ |
নিষাদ |
ন |
২. স্বর-সপ্তকে ব্যবহৃত স্বরচিহ্ন : স্বরসপ্তক উদারা,
মুদারা ও তারা অনুসারে স্বরচিহ্ন নির্ধারিত হয়। উদারা সপ্তকের জন্য স্বরচিহ্নের
নিচে হসন্ত চিহ্ন বসে। মুদারা সপ্তকে কোনো বাড়তি চিহ্ন বসে না। তারা সপ্তকে স্বরের
উপরে বাংলা রেফ্ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন–
উদারা সপ্তক : স্
ঋ্ র্
জ্ঞ্ গ্
ম্
হ্ম্
প্
দ্ ধ্
ণ্
ন্ মুদারা সপ্তক : স ঋ র জ্ঞ গ ম হ্ম প দ ধ ণ ন তারা সপ্তক : র্স র্র র্জ্ঞ র্গ র্ম র্জ্ঞ র্প র্দ র্ধ র্ণ র্ন |
৩. শ্রুতি প্রকাশক স্বরচিহ্ন : কোন স্বর থেকে এক শ্রুতি-পরিমিত নিম্ন-স্বরকে বলা হয় অতি কোমল এবং এক শ্রুতি-পরিমিত ঊর্ধ্ব স্বরকে বলা হয় অণুকোমল। একটি মূল স্বরের সাথে ১ ও ২ সংখ্যামানকে ঊর্ধ্বলিপি দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেমন–
জ্ঞ১
অতিকোমল গান্ধার
[কোমল গান্ধারের চেয়ে এক শ্রুতি নিচের ধ্বনি]
জ্ঞ২
অণুকোমল গান্ধার
[কোমল গান্ধারের চেয়ে এক শ্রুতি উপরের ধ্বনি] |
৩. স্পর্শস্বর : কোনো স্বরের পূর্বে যখন অন্য স্বর নিমেষকালস্থায়ী হয়, তবে তা মূল স্বরের বামপ্রান্তে ঊর্ধ্বলিপিতে যুক্ত থাকবে। যেমন–
গা মূল স্বর
র স্পর্শ স্বর
স্বরলিপিতে তা
প্রকাশিত হবে–
রগা।
৪. রেশস্বর : কোনো স্বরের পরে যখন অন্য স্বর নিমেষকালস্থায়ী হয়ে, একটি রেশ
সৃষ্টি করে মাত্র, তখন তা মূল স্বরের ডানপ্রান্তে ঊর্ধ্বলিপিতে যুক্ত থাকবে।
যেমন–
গা মূল স্বর
ম রেশ স্বর
স্বরলিপিতে তা
প্রকাশিত হবে- গাম।
৫. মীড় চিহ্ন :
গানের সুর যখন এক স্বর থেকে গড়িয়ে অন্য স্বরে যায়, তখন তা মীড় হিসাবে গণ্য করা হয়।
এক্ষেত্রে যতমাত্রা এবং যে স্বর পর্যন্ত গড়িয়ে যাওয়ার বিষয় ঘটে, ঠিক সেই পর্যন্ত
স্বরের নিচে মীড় চিহ্ণ বসে। যেমন–
৬. স্বরচিহ্নে মাত্রা প্রকাশক সঙ্কেত : সাধারণ স্বরজ্ঞাপক চিহ্নের সাথে তালের মাত্রার জন্য কোনো পৃথক চিহ্ন নেই, তাই আকার মাত্রিকস্বরলিপিতে এই জাতীয় চিহ্ন স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হয় না। মূল স্বরচিহ্নের সাথে বিভিন্ন সহায়ক চিহ্ন বসিয়ে তালের মাত্রা নির্দেশ করা হয়। যেমন–
একমাত্রা : | মূল স্বরচিহ্নের সাথে আকার যুক্ত করা হয়। যেমন– | |
মূল স্বরচিহ্ন : স এক মাত্রা চিহ্ন : া একমাত্রার স্বরস্বিহ্ন হবে : স + া = সা। সপ্তক ভেদে এক মাত্রার স্বরগুলো হবে– উদারা সপ্তক : সা্ রা্ গা্ মা্ পা্ ধা্ না্ ইত্যাদি মুদারা সপ্তক : সা রা গা মা পা ধা না ইত্যাদি তারা সপ্তক : র্সা র্রা র্গা র্মা র্পা র্ধা র্না ইত্যাদি |
||
অর্ধমাত্রা : | মূল স্বরচিহ্নের সাথে একটি ঃ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন– | |
মূল স্বরচিহ্ন : স অর্ধ-মাত্রা চিহ্ন : ঃ অর্ধমাত্রার স্বরস্বিহ্ন হবে : স + ঃ = সঃ। সপ্তক ভেদে অর্ধমাত্রার স্বরগুলো হবে– উদারা সপ্তক : স্ঃ র্ঃ গ্ঃ ম্ঃ প্ঃ ধ্ঃ ন্ঃ ইত্যাদি মুদারা সপ্তক : সঃ রঃ গঃ মঃ পঃ ধঃ নঃ ইত্যাদি তারা সপ্তক : র্সঃ র্রঃ র্গঃ র্মঃ র্পঃ র্ধঃ র্নঃ ইত্যাদি |
||
সিকিমাত্রা : | মূল স্বরচিহ্নের সাথে একটি বৃত্ত ব্যবহৃত হয়। যেমন– | |
মূল স্বরচিহ্ন : স অর্ধ-মাত্রা চিহ্ন : ৹ অর্ধমাত্রার স্বরস্বিহ্ন হবে : স + ৹ = স৹। সপ্তক ভেদে অর্ধমাত্রার স্বরগুলো হবে– উদারা সপ্তক : স্৹ র্৹ গ্৹ ম্৹ প্৹ ধ্৹ ন৹ ইত্যাদি মুদারা সপ্তক : স৹ র৹ গ৹ ম৹ প৹ ধ৹ ন৹ ইত্যাদি তারা সপ্তক : র্স৹ র্র৹ র্গ৹ র্ম৹ র্প৹ র্ধ৹ র্ন৹ ইত্যাদি |
||
৭. মাত্রানুসারে স্বরের বিভাজন ও উপস্থাপন : স্বরলিপিতে স্বরগুলি একক মাত্রা অনুসারে ফাঁক রেখে রেখে লেখা হয়। সাধারণত একক স্বরের ক্ষেত্রে 'া' যুক্ত থাকে। যেমন–
সা রা গা মা [এখানে চারমাত্রায় চার স্বর, এখানে প্রতিটি স্বর এক মাত্রা হবে।]
যখন একাধিক
স্বর নিয়ে কোন সুর তৈরি হতে পারে। যেমন–
সর, সরগ, সরগম, সরগপম ইত্যাদি। এক্ষেত্রে প্রতিটি গুচ্ছ পৃথকভাবে একক মাত্রায়
প্রকাশ করতে হবে।
যেমন–
সর সরগ সরগম সরগম [এক্ষেত্রে চারটি ভাগে
বিভাজিত হয়ে মাত্রাস্থানকে প্রকাশ করবে]
৭.১. স্বরগুচ্ছে একমাত্রাভিত্তিক সঙ্কেত : আকারমাত্রিক স্বরলিপিতে একমাত্রা
প্রকাশের ক্ষেত্রে, স্বরগুচ্ছের শেষ স্বরের সাথে
'া' যুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে এই স্বরগুচ্ছের সংখ্যার উপর ভিত্তি
করে গুচ্ছের প্রতিটি স্বরে মাত্রা মান নির্ধারিত হবে।
যেমন–
সা
[প্রতিটি স্বর হবে ১/২ মাত্রা]
সরা [প্রতিটি স্বর
হবে ১/২ মাত্রা]
সরগা [প্রতিটি স্বর হবে ১/৩
মাত্রা]
সরগমা [প্রতিটি স্বর হবে ১/৪ মাত্রা]
সরগমপা [প্রতিটি স্বর হবে ১/৫ মাত্রা]
৭.২.
স্বরগুচ্ছে
অর্ধমাত্রাভিত্তিক সঙ্কেত :
আকারমাত্রিক
স্বরলিপিতে অর্ধ্বমাত্রা প্রকাশের ক্ষেত্রে, স্বরগুচ্ছের শেষ স্বরের সাথে
'ঃ'যুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে এই স্বরগুচ্ছের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে
স্বরগুচ্ছের প্রতিটি স্বরে মাত্রাও মান নির্ধারিত হবে।
যেমন–
সঃ
[অর্ধমাত্রা]
সরঃ
[অর্ধমাত্রা বিভাজিত হয়ে প্রতিটি স্বর হবে ১/৪ মাত্রা]
৭.৩. স্বরগুচ্ছে সিকিমাত্রাভিত্তিক সঙ্কেত : আকারমাত্রিক স্বরলিপিতে সিকিমাত্রা প্রকাশের ক্ষেত্রে, স্বরগুচ্ছের শেষ স্বরের সাথে '৹' যুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে এই স্বরগুচ্ছের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে স্বরগুচ্ছের প্রতিটি স্বরে মাত্রাও মান নির্ধারিত হবে। যেমন–
স৹
[সিকিমাত্রা]
সর৹
[সিকিমাত্রা বিভাজিত হয়ে প্রতিটি স্বর হবে ১/৮ মাত্রা]
উপরের এই সূত্রে স্বর ও মাত্রার মধ্যে ভগ্নাংশ নির্ধারিত হয়।
যেমন–
সঃ
[অর্ধমাত্রা]
সঃ সরঃ [অর্ধমাত্রা + অর্ধমাত্রা= এক মাত্রা]
যদি একমাত্রাযুক্ত
('া') স্বরের সাথে অর্ধমাত্রা সিকিমাত্রার চিহ্ন বসে, তবে তা অতিরিক্ত মাত্রামান
হিসাবেই প্রকাশ পাবে। যেমন–
সাঃ [একমাত্রা + অর্ধমাত্রা= দেড়মাত্রা]
৮.
তাল
নির্দেশনা
: নিয়মিত তালে নিবদ্ধ গানের
ক্ষেত্রে, প্রতিটি তাল নির্দিষ্ট মাত্রা এবং মাত্রা-বিভাজনে নির্দিষ্ট থাকে।
আকারমাত্রিক স্বরলিপিতে এইসব বিষয় লক্ষ্য রেখে তাল নির্দেশনা অনুসারে স্বরের
বিন্যাস করা হয়।
৮.১. তালের আবর্তন চিহ্ন : তালের প্রতি আবর্তন (সম্ থেকে অপর সম্ পর্যন্ত
ফেরা অবধি) শেষে
I
চিহ্ন দ্বারা আবদ্ধ করা হয়। ধরা
যাক ছয় মাত্রায় আবর্তন হয়, এমন একটি গানের আবর্তন দেখানো হবে–
I
সা রা গা
মা পা ধা
I
৮.২. তালের ছন্দোবিভাজন চিহ্ন : তালের প্রতিটি আবর্তন ছন্দের বিচারে যে কয়টি
ভাগে বিভাজিত থাকে তার নির্দেশনা দেওয়া হয় দাঁড়ি (।) চিহ্ন দ্বারা। যেমন দাদরা তাল
ছয় মাত্রায় আবর্তন সম্পন্ন হয়, এবং তা ৩।৩ মাত্রা ছন্দে নিবদ্ধ থাকে। এক্ষেত্রে তাল
নির্দেশনা হবে।
I
সা রা গা । মা
পা ধা
I
৮.৩. তালের সম্
তালি ও ফাঁক চিহ্ন : ছন্দের বিচারে তালের প্রতিটি আবর্তন যে কয়টি ভাগে বিভাজিত
থাকে, তার প্রতিটি বিভাগের প্রথম মাত্রাতে সম্, তালি ও ফাঁক নির্দেশনা থাকে। তালের
প্রতিটি তালিকে ধনাত্মক অঙ্ক দ্বারা (১, ২, ৩ ইত্যাদি) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এবং
প্রতিটি ফাঁককে শূন্য (০) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এক্ষেত্রে সম নির্দেশনার জন্য সমের
উপরের অঙ্কের উপরে একটি রেফ যুক্ত হয়। নিচে ২।২।২।২।২।২ ছন্দের চৌতালের তাল বিভাজন
দেখানো হলো।
০ ২
০ ৩
৪
I
সা রা । রা
গা । গা
মা ।
মা
পা
।
পা
ধা
।
ধা
না I
৯. গানের সাথে বাণীর সমন্বয়
: বাদ্যযন্ত্রের বাদিত সুরের ক্ষেত্রে শুধু স্বরলিপির বিন্যাস হলে চলে। কিন্তু
যদি বাণী নির্ভর গান হলে, গানের সুরের সাথে বাণী অংশ সমন্বয় করে দুই পংক্তিতে লেখা
হয়। এক্ষেত্রে গানের বাণী অংশের প্রতিটি একক ধ্বনি যে সুরকে অবলম্বন করে থাকে এবং
তা যত মাত্রামানের হয়, তার সমন্বয় করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে যে সকল বিধি অনুসৃত হয়,
তা হলো–
৯.১. স্বর ও বাণীর বিন্যাস : সুরের স্বরলিপিটি প্রথম পংক্তিতে বসে এবং
তার পরের পংক্তিতে উক্ত স্বরের নিচ নিচে সুর অনুসারে বাণী বসে। যেমন–
I
গা গা
মা | পা না
না | না
র্সা র্সা |
না না পা
I
অ ম ল ক
ম ল স হ
জে জ লে
র
কোনো স্বর একাধিক মাত্রা নিয়ে রেশ রেখে চলতে থাকলে, তাহলে উক্ত স্বরের পরবর্তী মাত্রাগুলো আকার হিসাবে দেখানো হয়, এবং এর বাম পাশে হাইফেন (-) বসে। আর 'বাণী অংশ'-এ কোনো বাণীর অংশ না থাকলে সেখানে ০ বসে।
৯.২.
গানের তুক নির্দেশনা : যে কোন গানের অন্তত দুটি থাকা প্রয়োজন। তার একটি স্থায়ী,
অপরটি অন্তরা। প্রতিটি আবর্তনের শুরুতে দুটো
I
চিহ্ন দিয়ে শুরু হয় এবং একই
ভাবে দুটি I
চিহ্ন দিয়ে শেষ হয়। এই চিহ্নটি
দেখায়,–
II
।
আর পুরো গানের শেষে দুই জোড়া
I
চিহ্ণ বসে। এই চিহ্নটি
দেখায়,–
II II
।
৯.৩.
পুনরাবৃত্তি নির্দেশনা :
যদি গানের
কোন অংশ যদি দুইবার গাইতে হয়, তা হলে–
ওই অংশকে দ্বিতীয় বন্ধনীর মধ্য রাখা হয়। যেমন–
I
{সা রা গা । মা
পা ধা
}I
যে তে
হ বে দূ
রে
কিন্তু পুনরাবৃত্তিকালে কোনো অংশকে যদি দ্বিতীয়বার পরিবেশন না করতে হয়, তাহলে অংশকে
প্রথম বন্ধনীর ভিতরে রাখা হয়।
যেমন–
I {সা
রা গা । (মা
পা ধা)।
পা গা পা
}I
যে তে
হ বে
দূ রে বে দূ
রে
কিন্তু পুনরাবৃত্তিকালে কোনো স্বরের পরিবর্তন হলে, তা মূল অংশে উপরে তৃতীয় বন্ধনীর
ভিতরে দেখানো হবে।যেমন–
[মজ্ঞা]
I {সা
রা গা । মা
পা ধা
}I
যে তে
হ বে
দূ রে
কোন তুক বা কলির শেষে স্বাভাবিকভাবে
II
বসে এবং এক্ষেত্রে স্থায়ীতে ফিরে আসতে হয়। যদি স্থায়ীতে ফিরে যাওয়ার পর, স্থায়ীর
কোন অংশ নতুন সুরে পরিবেশন করতে হয়, তবে ওই নতুন অংশটি তৃতীয় বন্ধনীর ভিতরে
রাখা হয় এবং কলির শেষের দুটি
I
চিহ্নের ভিতরে তৃতীয় যুগল
বন্ধনী রাখা হয়। এই চিহ্ন দেখায়
I
[] I
। গানের
সর্বশেষ তুকের পরে এই সঙ্কেত হয়
II
[] II
।
৯.৪.
অবসান চিহ্ন : গান শুরু করার পর যে স্থানে থামতে হয় বা এই স্থানে থেমে অন্য
কলিতে যেতে হয়, সেখানে স্বরের উপরে যুগল দাঁড়ি (॥)
ব্যবহার করা হয়।
যেমন–