কর্ড
ইংরেজি: chord
পাশ্চাত্য সঙ্গীতে কর্ড হলো এক প্রকার স্বরসঙ্গতির সেট (harmonic set) । পাশ্চাত্য চিরায়ত ও আধুনিক গানে স্বরসঙ্গীত ধ্বনি মাধুর্য সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করা হয়। ইউরোপ, আফ্রিকা এবং ওসানিক অঞ্চলের গানে ব্যাপকভাবে কর্ডের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া পৃথিবীর নানা প্রান্তের আধুনিক গানে কর্ড ব্যবহার করা হয়।

স্বরসঙ্গতিই হলো কর্ডের ভিত্তি। তাই কর্ডে ব্যবহৃত সকল স্বর এক সাথে বাদিত হয়। এই সেটে থাকতে পারে দুই বা ততোধিক স্বর। এক্ষেত্রে নান্দনিক বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। দুই স্বরের সঙ্গতি যদি সঙ্গীতোপযোগী না হয়ে উঠে, তা কোলাহলের সৃষ্টি করবে।

দ্বিস্বরসঙ্গতি
দুই স্বরের স্বরসঙ্গতিকে পাশ্চাত্য সঙ্গীত পদ্ধতিতে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। ভাগ তিনটি হলো-





 


কর্ড স্বরসঙ্গতি,  তবে দুই স্বরে কর্ডের ব্যবহার খুব বেশি দেখা যায় না।  কর্ডের অতি সাধরণ রূপ তৈরি হয় তিনটি স্বর দিয়ে। পাশ্চাত্য সঙ্গীতে তিনটি স্বরের কর্ডকে ত্রয়ী
triad বলা হয়। এছাড় তিনের অধিক সংখ্যক স্বরের সংখ্যার বিচারে চতুর্থী বা পঞ্চমী কর্ড হতে পারে।

কর্ডের স্বরবিন্যাস
কর্ডে ক্ষেত্রে স্বরক্রম নির্ধারণ হয়ে থাকে উলম্ফন  নিয়মে। এই কারণে পরপর দুটি  স্বর কর্ডে ব্যবহৃত হয় না। যদিও কর্ডের সকল স্বর একই সাথে বাদিত হয়, কিন্তু এর স্বরক্রম নির্ধারিত হয় আরোহ পদ্ধতিতে। যেমন সা-গা-পা যদি একটি কর্ড হয়, তাহলে আরোহের নিয়মে প্রথম স্বর হবে সা। এক্ষেত্রে সা হবে মূল স্বর (
root note)। পরবর্তী স্বরটি হবে তৃতীয় স্বর ( third note)। কারণ মাঝের দ্বিতীয় স্বর ঋষভ বর্জন করা হয়েছে। এর পরের স্বরকে বলা হবে পঞ্চম স্বর (fifth note)। কারণ তৃতীয় স্বরের পরের চতুর্থ স্বর হিসেবে মধ্যম বর্জিত হয়েছে।

স্বরের সংখ্যা এবং স্বরস্থানের বিন্যাসের বিচারে কর্ডকে নানাভাবে ভাগ করা হয়। এক্ষেত্রে নিচের স্বরটিকে মূল স্বর হিসেবে বিচার করা হয়। কিন্তু যখন এরূপ দুটি স্বরের ব্যবধান


দুই স্বরের বিন্যাসে সাধারণ স্বরসঙ্গতি হতে পারে দুই ভাবে। এর একটি হলো 'ষড়্‌জ-পঞ্চম', অপরটি 'ষড়্‌জ-মধ্যম'।

 

প্রতিটি স্কেলের মূল স্বরস্থান হিসেবে ধরা হয় সাতটি। যেমন- সি মেজর স্কেলের মূল স্বর C। এই স্কেলের স্বরগুলো হবে- C D E F G A B। এক্ষেত্রে C ছাড়া অন্যান্য স্বরগুলো পৃথক স্কেলের নাম হিসেবে বিবেচিত হবে না। তাই C স্কেলের বিচারে E হবে তৃতীয় স্বর এবং G হবে পঞ্চম স্বর। এই বিচারে সা-গা-পা হবে  C Major কর্ড এবং এর স্বর-সদস্য হবে C E G। স্কেলের স্বরের বিচারে একই স্কেলের ভিতরে মূল স্বরের বিচারে নানা ধরণের কর্ড হতে পারে। ধরা যাক C Major স্কেলের ভিতরে D F A একটি কর্ড।

মেজর ও মাইনর কর্ড
স্বরের অবস্থানের উপর এর মেজর বা মাইনর হিসেবে নির্ধারিত হয়। মূল স্বর থেকে পরবর্তী স্বরের অবস্থানের বিচারে মেজর মাইনর নির্ধারিত হয়ে থাকে। পাশ্চাত্য সঙ্গীত পদ্ধতিতে মূল স্বর থেকে চার সেমিটোন দূরত্বে দ্বিতীয় স্বর ব্যবহার করলে মেজর কর্ডের প্রাথমিক শর্ত পূরণ হয়। যেমন
C Major কর্ডের স্বর-সদস্যরা হলো-C E G। এখানে C মূল স্বর। এর দ্বিতীয় স্বর E। দ্বাদশ স্বরাণুক্রমে C থেকে E এর স্বরবিন্যাস হবে C, C♯, D, D♯, E। অর্থাৎ C মূল স্বর থেকে -E স্বরটি চার সেমিটোন দূরে অবস্থিত।  এই বিচারে C কর্ডের C E স্বরের অবস্থান হিসেবে C Major কর্ডকে উপস্থাপন করবে। এর সাথে  G যুক্ত করলে C E G যে ত্রয়ী সৃষ্টি করবে, তা C Major কর্ড হিসেবে বিবেচিত হবে।

মাইনর কর্ডের ক্ষেত্রে মূল স্বর ও দ্বিতীয় স্বরের ব্যবধান হবে তিন সেমিটোন। ধরা যাক D F A  একটি কর্ড। এখানে মূল স্বর D। এর পরবর্তী স্বর F। এই দুই স্বরের মধ্যে রয়েছে D♯,E,F নামক তিনটি সেমিটোন। তাই এই কর্ডে মাইনরের অন্তর্গত হয়ে যাবে। এর সাধারণ নাম হবে minor triad এবং আদ্য স্বর D-এর বিচারে এর নাম হবে D minor

সপ্তম কর্ড (Seventh chords):
কোনো ত্রয়ী কর্ডের সাথে মূল স্বরের সাত স্বরের ব্যবধানে চতুর্থ স্বর ব্যবহার  করলে সপ্তম কর্ডের সৃষ্টি হয়।  সাধারণভাবে ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে একে 'সা-গা-পা-না' বলা যেতে পারে।

সাথে চতুর্থ স্বর যুক্ত করলে এই কর্ডের প্রাথমিক রূপ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে চতুর্থ স্বরটির অবস্থান হয় ত্রয়ী কর্ডের পঞ্চম স্বরের উপরে।