গমক
সঙ্গীতে ব্যবহৃত অলঙ্কার বিশেষ। স্বরের বিশেষ ধরনের কম্পন যা কোনো সুর রচনায় অলঙ্কার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সঙ্গীত বিষয়ক ভারতীয় প্রাচীন গ্রন্থগুলোতে নানা ধরনের গমকের উল্লেখ পাওয়া যায়। শার্ঙ্গদেব রচিত 'সঙ্গীতরত্নাকর'-এ গমকের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে 'স্বরের কম্পের নাম গমক'।
এই গ্রন্থে ১৫ প্রকার গমকের উল্লেখ রয়েছে। এই গমকগুলো হলো-

১. তিরিপ: এর ধ্বনিরূপ ডমরুর শব্দের মতো। একটি দ্রুত মাত্রায় একই স্বর চার বার ধ্বনিত হয়। যেমন- সসসসা, ররররা, গগগগা

২. স্ফুরিত: একটি দ্রুত মাত্রায় একই স্বর তিন বার ধ্বনিত হয়। যেমন- সসসা, রররা, গগগা ইত্যাদি

৩. কম্পিত: একটি দ্রুত মাত্রায় একই স্বর দুই বার ধ্বনিত হয়। যেমন- সসা, ররা, গগা ইত্যাদি

৪. লীন: একটি দ্রুত মাত্রায় একই স্বর এক বার ধ্বনিত হয়। যেমন- সা, রা, গ, মা ইত্যাদি

৫. আন্দোলিত: একটি দ্রুত মাত্রায় একই স্বর অর্ধমাত্রায় ধ্বনিত হয়। যেমন- সরা, গমা ইত্যাদি

৬. বলি: নানা প্রকারের স্বরের কম্পন বক্ররূপে ধ্বনিত হয়। বক্ররূপে স্বরের প্রকাশে যে কম্পন উপস্থাপিত হয়, তাকেই বলি বলা হয় যেমন- সসসা গগগা  পপপা ররা গগগা ইত্যাদি।

৭. ত্রিভিন্ন: মন্দ্র, মধ্য ও তার স্থানে- একটি দ্রুত মাত্রায় তিনটি স্বরের গমক যখন অবিশ্রান্তভাবে ধ্বনিত করা হয়। যেমন-ন্‌ন্‌ন্‌া সসসা গগগা মমমা, গগগা পপপা সসর্সা ইত্যাদি

৮. কুরুল: বলির মতো বক্র স্বরের কম্পন। তবে এই জাতীয় মন্দ্র, মধ্য ও তার স্থানে- একটি দ্রুত মাত্রায় তিনটি স্বরের গমক যখন অবিশ্রান্তভাবে ধ্বনিত করা হয়। যেমন-ন্‌ন্‌ন্‌া সসসা গগগা মমমা, গগগা পপপা সসর্সা ইত্যাদি।

৯. আহত: অগ্রে স্থিত স্বরকে দ্রুত একবার স্পর্শকরে যে কম্পন তৈরি করা হয়। যেমন- গর মগ।
১০. উল্লসিত: স্বরের উত্তরোত্তর অগ্রগমনের দ্বারা যে কম্পন তৈরি করা হয়। যেমন- স র গ ম ।
১১. প্লাবিত: প্লুত মাত্রায় একটি স্বরের কম্পন তৈরি করা হয়। উল্লেখ্য, প্লুত মাত্রা হলো- তিনমাত্রার সময়। যেমন- স-- র-- গ-- ।
১২. হুংফিত: যাহার গর্ভে হুং ধ্বনি থাকে। অর্থাৎ যে গমকে হুংকার ধ্বনি থাকে।
১৩. মুদ্রিত: যে স্বর মুখ বন্ধ অবস্থায় ধ্বনি হয়।
১৪. নামিত: অবরোহণ ক্ষেত্রে সৃষ্ট গমক। যেমন- র্স ন ধ প ম ইত্যাদি।
১৫. মিশ্র: বহুবিধ গমক মিশ্রিত করে যে গমক পরিবেশিত হয়।

সঙ্গীতপারিজাতে ২০ প্রকার গমকের পরিচয় পাওয়া যায়।


সূত্র
ভারতীয়  সঙ্গীতকোষ। শ্রীবিমলাকান্ত রায়চৌধুরী। কথাশিল্প প্রকাশ। বৈশাখ ১৩৭২। পৃষ্ঠা: ২৪-২৬

সঙ্গীতরত্নাকর। শার্ঙ্গদেব। অনুবাদ সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশ্বভারতী বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৪০৮ বঙ্গাব্দ। পৃষ্ঠা: ১২৪।
সঙ্গীতশাস্ত্র তৃতীয় খণ্ড। শ্রীইন্দুভূষণ রায়। ভারতী প্রকাশন। পৃষ্ঠা: ৫১-৫২