জাতি
ভারতীয় রাগ সঙ্গীতে স্বরের সংখ্যাভিত্তিক শ্রেণি বিশেষ।

প্রাচীন ভারতীয় রাগ সঙ্গীতের আদি অবস্থায় রাগের নাম ব্যবহার করা হতো না। তখন রাগের নামের পরিবর্তে জাতি উল্লেখ করা হতো। সঙ্গীত রত্নাকরের মতে- দুটি গ্রাম থেকে জাতি উৎপন্ন হয়। বর্ণ ও অলঙ্কার ব্যবহার করে যে সকল গান সঙ্গীত সৃষ্টি হয়, সে গানগুলোই জাতির অন্তর্ভুক্ত। এই জাতিগুলো শুদ্ধ এবং বিকৃত হিসাবে দুটি ভাগে বিভক্ত। শুদ্ধ জাতির সংখ্যা ৭টি। জাতির নামগুলো স্বরের নাম থেকে গৃহীত হয়েছে। এই নামগুলো হলো-
 
স্বরের নাম জাতির নাম
ষড়্‌জ
ঋষভ
গান্ধার
মধ্যমা
পঞ্চম
ধৈবত
নিষাদ
যাড়্‌জী
আর্ষভী
গান্ধারী
মধ্যমা
পঞ্চমী
ধৈবতী
নিষাদী

বৈদিক যুগে সাত শ্রেণির গানের বিকাশ ঘটেছিল স্বর-সংখ্যার সূত্রে। এই সংখ্যা-সূত্রটি ছিল নিচের ছকের মতো।

জাতি নাম স্বর সংখ্যা
আর্চিক
গাথিক
সামিক
স্বরান্তর
ঔড়ব
ষাড়ব
সম্পূর্ণ
এক স্বরের গান
দুই স্বরের গান
তিন স্বরের গান
চার স্বরের গান
পাঁচ স্বরের গান
ছয় স্বরের গান
সাত স্বরের গান


আধুনিক কালে রাগের আরোহণ ও অবরোহণে কয়টি একক স্বর ব্যবহৃত হয়, তার উপর ভিত্তি করে রাগের শ্রেণি বিভাজন করা হয়। এই সূত্রে ধরে নেওয়া হয়, পাঁচটি স্বরের কমে আরোহণ বা অবরোহণ তৈরি হয় না। এই বিচারে রাগের আরোহণ বা অবরোহণে জাতি বিবেচনা করা যে ভাবে, তা হলো

৫টি স্বর
৬টি স্বর
৭টি স্বর
ঔড়ব
ষাড়ব
সম্পূর্ণ

আরোহণ-অবরোহণের  বিচারে জাতি হতে প্রকার হতে পারে। যেমন

আরোহণে স্বর-সংখ্যা অবরোহণে স্বর-সংখ্যা জাতি
















ঔড়ব-ঔড়ব
ঔড়ব-ষাড়ব
ঔড়ব-সম্পূর্ণ
ষাড়ব-ঔড়ব
ষাড়ব-ষাড়ব
ষাড়ব-সম্পূর্ণ
সম্পূর্ণ-ঔড়ব
সম্পূর্ণ-ষাড়ব
সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ

রাগ সঙ্গীতে জাতি আরও একভাবে বিচার করা হয়। রাগের শুদ্ধ রূপ ও মিশ্র রূপের বিচারে রাগকে ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগগুলো হলো

১. শুদ্ধ জাতীয় রাগ : যে রাগে অন্য কোনো রাগের ছায়া বা আবেশ দৃষ্ট হয় না।
২. ছায়ালগ বা সালগ : যে রাগে অন্য রাগের ছায়া থাকে।
৩. সঙ্কীর্ণ জাতীয় রাগ : যে রাগে শুদ্ধ ও ছায়ালগের সংমিশ্রণ থাকে।


সূত্র :
ভারতীয় সঙ্গীতকোষ। বিমলাকান্ত রায়চৌধুরী। কথাশিল্প প্রকাশ। বৈশাখ ১৩৭২।
ভারতীয় সঙ্গীতের ইতিহাস। প্রথম ভাগ। স্বামী প্রজ্ঞানন্দ। শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ। জানুয়ারি ১৯৮৭।
সঙ্গীত রত্নাকর। নিঃশঙ্ক শার্ঙ্গদেব (কল্পিনাথ ও সিংহভূপাল টীকা)