স্বর | উৎস (পশুপাখির কণ্ঠস্বর) | শরীরের স্থান | অধি দেবতা | জাতি |
ষড়্জ | ময়ুর | কণ্ঠ | অগ্নি | ব্রাহ্মণ |
ঋষভ | বৃষ | শির | অগ্নি | ক্ষত্রিয় |
গান্ধার | ছাগ | নাসিকা | সোম | বৈশ্য |
মধ্যম | সারস | ঊরঃ | বিষ্ণু | ব্রাহ্মণ |
পঞ্চম | কোকিল | ঊরঃ, শির ও কণ্ঠ | নারদ | ব্রাহ্মণ |
ধৈবত | হাতি | ললাট | তম্বরু | ক্ষত্রিয় |
নিষাদ | ঘোড়া | সর্বসন্ধি | তম্বরু | বৈশ্য |
নারদ বৈদিক ও লৌকিক সাত স্বরের উৎপত্তির উৎস এবং শরীরের স্থানকে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে- এই উৎপত্তির উৎস এবং শরীরের স্থানগুলো হলো-
নারদীয় শিক্ষায় ২২টি শ্রুতির পরিবর্তে ৫টি শ্রুতির নাম পাওয়া যায়। এগুলো হলো- দীপ্তা, আয়তা, করুণা, মৃদু ও মধ্য। এগুলোর পরিণতি হতি হয় পাঁচটি রসে।
নারদীয় শিক্ষায় সামগানের প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। তিনি মার্গ ও দেশী
সঙ্গীতের ক্ষেত্রে সাতটি স্বর, ৩টি গ্রাম, ২১টি মূর্চ্ছনা, ৫১ট তানের কথা
উল্লেখ করেছেন। এ সকল উপকরণের সমবেত রূপের নাম ছিল 'স্বরমণ্ডল'। নারদ যদিও ষড়্জ,
মধ্যম ও গান্ধার গ্রামের কথা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু সে সময়ে গান্ধার গ্রামের প্রচলন
ছিল না। তবে গান্ধার গ্রাম সম্পর্কে নারদ বিশেষভাবে অবগত ছিলেন।
গ্রাম থেকে উৎপন্ন ২১টি মূর্চ্ছনাকে মোট তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো- দেবতা
ও গান্ধর্ব গণের মূর্চ্ছনার নাম একই ছিল। কিন্তু পিতৃগণের নাম ছিল ভিন্ন।
নন্দী-বিশালা-সুমুখী-চিত্রা-চিত্রবতী-সুখা।
বলা যা চাথ বিজ্ঞেয়া দেবানাং সপ্তমূর্ছনাঃ॥
আপ্যায়নী-বিশ্বভৃতা-চন্দ্রা-হেমা-কপর্দিনী।
মৈত্রী-বার্হতী চৈব পিতৃণাং সপ্তমূর্ছনাঃ॥
* * *
উপজীবন্তি গন্ধর্বা দেবানাং সপ্তমূর্ছনাঃ।
পিতৃণাং মূর্ছনা সপ্ত তথা যক্ষা ন সংশয়ঃ।
ঋষিণাং মূর্ছনা সপ্ত যাস্তিমা লৌকিকাঃ স্মৃতা ॥
মূর্চ্ছনা সংখ্যা | দেবগণ | পিতৃগণ | গান্ধর্গণ |
১ | নন্দী | আপ্যায়নী | নন্দী |
২ | বিশালা | বিশ্বভৃতা | বিশালা |
৩ | সুমুখী | চন্দ্রা | সুমুখী |
৪ | চিত্রা | হেমা | চিত্রা |
৫ | চিত্রবতী | কপর্দিনী | চিত্রবতী |
৬ | সুখা | মৈত্রী | সুখা |
৭ | বলা | বার্হতী | বলা |
নারদীয় শিক্ষায় বৈদিক ও লৌকিক গানের ক্ষেত্রে দশ রকম গুণের কথা বলেছেন। এই গুণগুলো
হলো- রক্ত, পূর্ণ, অলঙ্কৃত, প্রসন্ন, ব্যক্ত, বিক্রুষ্ট, শ্লক্ষ্ণ, সুকুমার ও মধুর।
এই গ্রন্থে প্রথম শ্রুতির উল্লেখ পাওয়া যায়। নারদ শ্রুতি সম্পর্কে বলেছেন–১, রক্তা: বেণু ও বীণা একত্রিত ধ্বনি বা স্বর যা সকলকে আনন্দ দান করে।
তত্র রক্তং নাম বেণুবীণাস্বরাণামেকীভাবে রক্তমিত্যুচ্যতে২, পূর্ণ: স্বর (মধ্যামদি) ও শ্রুতির করণ বা পূরণ হয় এবং ছন্দের পাদ ও অক্ষরের পরস্পরের সংযোগে উচ্চারণ হয়।
স্বরশ্রুতিপূরণাছন্দঃ পাদাক্ষরসংযোগাৎ পূর্ণমিত্যুচ্যতে৩. অলঙ্কৃত: ক্ণ্ঠ থেকে নির্গত স্বরকে নিম্ন ও উচ্চ উচ্চারণ
উরসি শিরসি কণ্ঠযুক্তমিতালঙ্কৃতম্
৪. প্রসন্ন:_কণ্ঠকে নিপীড়ন ক'রে গদগদ ধ্বনি
অপগতগদ্গদ্নির্বিশঙ্কং- প্রসন্নমিত্যুচ্যতে*।
৫. ব্যক্ত-শব্দ বা ধাতু ও প্রত্যযঘৃক্ত এবং ছন্দ, রাগ, পদ ও স্বরসমূহের দ্বারা ধ্বনির অভিব্যক্তি
পদপদার্থপ্রকৃতিবিকারাগমলোপকৃত্তদ্ধিসমাসধাতুনিপাতোপসর্গস্বরলিঙ্গবৃত্তিবার্তিক
বিভক্ত্যর্চনানাং সম্যগুপপাদনে ব্যক্তমিত্যুচ্যতে॥
৬. বক্রুষ্টা বা বিকৃষ্ট: উচ্চ ভাবে উচ্চারণ করলে যেখানে পদের অন্তর্গত অক্ষরের স্পষ্টতা থাকে অব্যক্ত বা অস্পষ্ট হয় না। প্রকৃতপক্ষে তারস্বরে বা উচ্চস্বরে উচ্চারণ করাকেই বিক্রষ্টা বলে
উচ্চৈঃরুরচ্চারিতং ব্যক্তপদাক্ষরমিতি বিক্রুষ্টম্।)
৭. শ্লক্ষ্ণ: দ্রুত, বিলম্বিত, উচ্চ, নীচ, প্লুত, সমাহার প্রভৃতির সম্পাদন।
দ্রুতম্বিলম্বিতমুচ্চনীচগ্লুতসমাহারং হেলতালোপনয়ানাদিভিরপপাদনাদিভিঃ শ্লক্ষ্ণমিত্যুচ্যতে
৮. সম: স্থায়ী, সঞ্চারী, আরোহ ও অবরোহ প্রভৃতি বর্ণগুলিকে লয়ের সঙ্গে একীভূত করা।
'আবাপনির্বাপপ্রদেশং প্রত্যন্তরস্থানানাং সমাসঃ সমমিত্যুচ্যতে
৯. সুকুমার: অব্যক্ত অস্পষ্ট বা কণ্ঠ চেপে স্বর নির্গত না করা, এবং উচ্চ, নীচ ও মধ্যস্থানে কণ্ঠের স্বরকে স্বচ্ছন্দগতিতে লীলারিত করা
১০. মধুর: স্বভাবত সাবলীল গতিতে পদের ও অক্ষরের উচ্চারণ । এই উচ্চারণে কণ্ঠের স্বভাবসুন্দর মাধুর্য ও কমনীয়তা বজায় থাকে ।
দীপ্তায়তা করুণানাং মৃদুমধ্যময়োস্তথানারদের এই শ্রুতি মূলত স্বরের নামান্তর। ৫টি শ্রুতি ছিল মূলত স্বরের জাতি। তাই একে বলা হয় জাতি শ্রুতি।
শ্রুতিনাং যোহবিশেষজ্ঞো ন স আচার্য উচ্যতে।
[দীপ্তা, আয়তা, করুণা ইত্যাদি পঞ্চশ্রুতি বিষয়ে যিনি বিশেষজ্ঞ নন, তাঁকে আচার্য বলা যায় না।]
তান রাগ স্বর গ্রাম মূর্চ্ছনাং তু লক্ষণম্
পবিত্রং পাবণং পুণ্যং নারদেন প্রকীর্তিতম।
এই শ্লোকে তান রাগ গ্রাম মূর্চ্ছনাকে পবিত্র ও কল্যাণকর বলে
আখ্যায়িত করেছেন।
শ্রেণিকরণে গ্রামের উল্লেখ পাওয়া যায়।
এই গ্রামগুলোর নাম পাওয়া
ষড়্জ, গান্ধার ও মধ্যম (ষড়্জ-মধ্যম-গান্ধারা ত্রয়ো গ্রামঃ প্রকীর্তিতঃ)। এই তিনটি
গ্রামের আদ্যস্বরের নামকরণ করেছেন 'রাগস্বর'। গ্রামের অধীনস্থ মূর্চ্ছনা রাগের
অনুরূপ। তাই মূর্চ্ছনাকে রাগের আদ্যরূপ ধরলে, গ্রামকে ঠাট হিসেবে বিবেচনা করা যেতে
পারে। এই গ্রামের অধীনে ছিল
গ্রামরাগ। নারদীয় শিক্ষায় গ্রামরাগের তালিকা পাওয়া যায়। এগুলো হলো ষড়্জগ্রাম,
পঞ্চম, কৈশিক, কৈশিকগ্রাম, মধ্যমগ্রাম, সাধারিত, ষাড়ব ইত্যাদি। উল্লেখ্য গ্রামের
মূর্চ্ছনা থেকে এই গ্রামরাগের উৎপত্তি হয়েছিল।