পাশ্চাত্য স্বর পদ্ধতি
Western musical note

ইউরোপীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে, একটি স্কেলের অন্তর্গত ব্যবহৃত সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি। পাশ্চাত্য সঙ্গীত পদ্ধতি অনুসরণে স্বরের সংজ্ঞায় বলা যায়- যে কোনো সঙ্গীত
স্কেলের ভিতরে বিদ্যমান
সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনিসমূহকে ১২টি সমধ্বনি মানে ভাগ করলে, প্রতিটি ভাগকে স্বর বলা হবে। পাশ্চাত্য রীতিতে একটি স্কেলের ভিতরে ধ্বনিমানকে ১২০০ সেন্ট বিবেচনা করা হয়েছে। সমমানের বিচারে প্রতিটি স্বরের মধ্যবর্তী মান দাঁড়ায় ১০০ সেন্ট। বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে এই বিশেষ বিভাজনকে মান্য এবং ব্যবহার করা হয়।

পাশ্চাত্য শাস্ত্রীয়সঙ্গীতের শুরুর দিকে স্কেল এবং স্বরের অবস্থান এরূপ ছিল না। খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দী পর্যন্ত সঙ্গীত শাস্ত্রীয় বিন্যাসে শৃঙ্খলিত হয় নি। যতদূর জানা যায়, ১৪টি স্বর নিয়ে গ্রিক পণ্ডিত টলেমি (১০০-১৭০ খ্রিষ্টাব্দ) স্বরবিন্যাস তৈরি করেছিলেন। টলেমির এই বিন্যাস অনুসরণে এই খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে রোমান দার্শনিক এবং সিনেটর
Saint Anicius Manlius Severinus Boëthiu (৪৭৭-৫২৪ খ্রিষ্টাব্দ) সঙ্গীতের স্বরচিহ্ন হিসেবে ১৪টি রোমান বর্ণ ব্যবহার করেছিলেন। এই বর্ণগুলো হলো- A B C D E F G H I K L M N O। লক্ষ্যণীয় বিষয়, এই বর্ণানুক্রমে J  ধ্বনিটি নেই কারণ, খ্রিষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দী পর্ন্ত রোমান বর্ণমালায় J  ধ্বনিটি ছিল না। একালের বিচারে এই ১৪টি স্বর ছিল একালের দুই সপ্তকের সমান।

 

পাশ্চাত্য সঙ্গীতগুরুরা দেখলেন নানা ধরনের সুরকে স্বরের কাঠামোকে মাত্র ১৪টি স্বর দিয়ে বাঁধা যায় না। তাই দুই সপ্তকের পরিবর্তে ৩ সপ্তকের শরণাপন্ন হতে হলো। এক্ষেত্রে বর্ণ সঙ্কটের কথা বিবেচনায় রেখে- তাঁরা সপ্তকের স্বরগুলোকে চিহ্নিত করলেন তিনটি সঙ্কেত সেটের মাধ্যমে।

শাস্ত্রীয়ভাবে পাশ্চাত্য স্বরকে এই ভাবে শনাক্ত করার প্রক্রিয়া সচল হলেও, প্রথাগতভাবে ইতালি, স্পেন,  ফ্রান্স, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, গ্রিস, বুলগেরিয়া, তুরস্ক, রাশিয়া এবং অধিকাংশ ল্যাটিন আমেরিকার দেশসমূহসহ অনেক দেশে স্বরগুলোর ব্যবহারিক নাম ছিল Do–Re–Mi–Fa–Sol–La–Si

শাস্ত্রীয় পরিচয়ে
৭টি স্বরকে মূল স্বর হিসেবে রেখে বাকি ৫টি স্বরকে শার্প বা ফ্লাট হিসেবে উল্লেখ করা শুরু হয়েছিল ইউরোপের রেনেসা যুগের আগে থেকেই। এক্ষেত্রে মূল স্বরকে বলা হলো-natural। এর চিহ্ন হলো-() । এই ন্যাচারাল স্বরের এক ধাপ উপরের স্বরের নাম দেওয়া হলো- শার্প। এর চিহ্ন হলো- । যেমন A এর এক ধাপ উপরের স্বরের নাম হলো- A। আর মূল স্বরের এক ধাপ নিচের স্বরের না দেওয়া হলো- ফ্লাট। এর চিহ্ন । যেমন B এর এক ধাপ নিচের স্বরের নাম হলো স্বরের নাম হলো- B

পাশ্চাত্য স্কেলের বিচারে স্বর-পরিচিতি
পাশ্চাত্য সঙ্গীত জগতে একটি স্কেলে কতগুলো স্বর থাকতে পারে এ নিয়ে নানা তত্ত্বের বিকাশ ঘটেছিল রেনাসাঁ যুগের আগেই। ১৫৭৭ খ্রিষ্টাব্দে স্প্যানিশে সঙ্গীতজ্ঞ
Francisco de Salinas স্কেলকে ১৯টি ভাগে ভাগ করার প্রস্তাব করেন। এই প্রস্তাবে বলা হয়- প্রতিটি স্বরের মধ্যবর্তী দূরত্ব হবে ৬৩.১৬ সেন্ট। এবং কম্পাঙ্কের তূলাঙ্ক হয়ে 192। এই পদ্ধতিটি 19 equal temperament। নামে পরিচিতি লাভ করেছিল। এই বিধিতে ধ্বনি বিন্যাসের যে ছক পাওয়া যায়, তা হলো

 

A A B B B/
C
C C D D D E E E/
F
F F G G G A A

 

শেষ পর্যন্ত এই বিভাজন জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারে নি। এরপর ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ইতালির সঙ্গীতজ্ঞ Lemme Rossi -স্কেলকে ৩১ ভাগে বিভাজিত করে, '31 equal temperament'- পদ্ধতির প্রস্তাব রাখেন।  ই বিধিতে ধ্বনি বিন্যাসের যে ছক তৈরি হয়েছিল, তা হলো

 
A B♭♭ A B Ax B C B C D♭♭ C D Cx D E♭♭ D E Dx E F E F G♭♭ F G Fx G A♭♭ G A Gx A


ই সময় আরবীয় সঙ্গীতে ব্যবহৃত হয় ২৪ ধ্বনির সেট তৈরি হয়েছিল। একে বলা হয়
24 equal temperament।  উত্তর ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে শ্রুতির বিচারে এই বিভাজন দাঁড়ায় ২২-এ। কিন্তু এই শ্রুতিগুলো সমগুণান্বিত মানে স্থিরীকৃত ছিল কিনা এ নিয়ে বিতর্ক আছে। আধুনিক পাশ্চাত্য সঙ্গীত পদ্ধতিতে সমগুণান্বিত স্কেল (
equal tempered scale) ১২টি সম শব্দদূরত্বে বিভাজিত।  এটি বর্তমানে একটি আদর্শ স্বর-পদ্ধতি হিসেবেই মান্য করা হয়।

সেমিটোন-টোন

দ্বাদশ সমবিভাজন পদ্ধতিতে ১২০০ সেন্ট হলো একটি ধ্রুবমান। এর প্রতিটি ভাগের ভিতরের শব্দ-দূরত্বমান ১০০ সেন্ট। এই মানটিও স্বরের বিচারে  ধ্রুব। পাশ্চাত্য সঙ্গীতে সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনির বিচারে একে বলা হয় ১ সেমিটোন (semitone)। পাশ্চাত্য সঙ্গীতশাস্ত্রে দুই সেমিটোন পরিমিত শব্দ দূরত্ব হবে ১ টোন (tone)। পাশের চিত্রে সি স্কেলের বিচারে টোন-সেমিটোন দেখানো হলো।

 

শব্দবিজ্ঞানের সূত্রে, একটি স্কেলের শব্দ-দূর্ত্বকে কম্পাঙ্কের বিচারে ভাগ করলে, প্রতিটি ভাগের মান দাঁড়ায়- ১.০৫৯৪৬। এই মানের বিচারে ১০০ সেন্ট=১.০৫৯৪৬ হার্টজ ধরা যেতে পারে। আবার প্রতিটি সেমিটোনের মধ্যবর্তী শব্দদূরত্ব হবে ১.০৫৯৪৬। সুতরাং আমরা সরল সমীকরণে বলতেই পারি- ১০০ সেন্ট=১ সেমিটোন= ১.০৫৯৪৬ হার্টজ।

 

বাস্তবে দেখা যায়, কম্পাঙ্কের বিচারে প্রতি ১০০ সেন্টের মান- সমদূরত্বের কম্পাঙ্ক অনুসারে হয় না। একটি স্কেলের আদ্য স্বরের কম্পাঙ্ক অনুসারে শেষ স্বরের কম্পাঙ্ক দ্বিগুণ হবে স্বরের গাণিতিক সূত্রানুসারে। কিন্তু বাস্তবে ১.০৫৯৪৬ হার্টজের হিসেবে তা হয় না। যেমন A4 স্কেলের কম্পাঙ্ক ৪৪০ হার্টজ। এই বিচারে A5 হবে ৮৮০ হার্টজ্। কিন্তু ১ সেমিটোন= ১.০৫৯৪৬ হার্টজ, এই সূত্রে  A5 এর কম্পাঙ্ক মান হয় ৮৭৯.৯৬৯৭ হার্টজ্। সংখ্যামানের বিচারে এই পার্থক্য সৃষ্টি হলেও, মানুষের শ্রবণেন্দ্রিয়ে উভয় ধ্বনি একই রকমের অনুভূতি জাগায়।  একই ভাবে স্কেলের আদ্য স্বর বা ষড়্‌জ যদি ৪৪০ হার্টজ্ হয় তবে পঞ্চম হওয়া উচিৎ ৬৬০ হার্টজ। কিন্তু সেমিটোনের সূত্রে ধ্বনিদূর্ত্ব মান পাওয়া যায়- ৬৫৯.২৪১৮ হার্টজ। একইভাবে শ্রোতা এই কম্পাঙ্ককেও আলাদা দুটি ধ্বনি হিসেবে ধরতে পারেন না। সূক্ষ্মতার বিচারে স্বরের সমবিভাজন ত্রুটিমুক্ত নয়। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে সঙ্গীতশিল্পীরা অনেকটাই আদ্য ষড়জের বিচারে অন্য স্বর নির্ধারণ করেন সাঙ্গীতিক অভিজ্ঞতা দিয়ে। আমাদের দেশে হারমোনিয়ামের স্বরগুলো যারা সুরে বাঁধেন, তাঁরাও তাঁদের অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দেন।

 

পাশ্চাত্য সঙ্গীতগবেষকরা এই সব ত্রুটিকে স্বীকার করেই স্কেলের দ্বাদশ বিভাজন পদ্ধতিকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল স্কেলের আদ্য স্বর কত কম্পাঙ্ক নির্ধরাণ। কারণ, যন্ত্রীরা তাঁদের যন্ত্রে নিজেদের সাঙ্গীতিক বোধ দিয়ে একটি ষড়জ নির্ণয় করে নিতেন। ফলে বিভিন্ন যন্ত্রে বিভিন্ন কম্পাঙ্কের ষড়্‌জ ধ্বনিত হতো। ইউরোপের সঙ্গীতজ্ঞ বেশকিছু যন্ত্রের পরীক্ষা করে  A4 স্কেলের ৮টি ভিন্ন ভিন্ন কম্পাঙ্কের আদ্য স্বর পেয়েছিলেন। এই কম্পাঙ্কগুলো ছিলো  432, 434,  436,  438,  440,  442,  444,  446। নানা দিক বিবেচনা করে, শেষ পর্যন্ত  A4 -স্কেলের আদ্য স্বরের কম্পাঙ্ক ৪৪০ নির্ধারণ করেছিলেন। বর্তমানে এই মানকেই আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সঙ্গীতগবেষকরা এই স্বরের সাথে অন্যান্য স্বরের কম্পাঙ্ক মানের সামান্য ত্রুটিকে সমন্বয় করে একটি আদর্শ মানের স্বর-তালিকা প্রণয়ন করেছেন। এই তালিকা অনুসারে স্বরগুলোর কম্পাঙ্ক এবং শব্দতরঙ্গ পাওয়া যায়, তা হলো-


 

স্বর কম্পাঙ্ক (হার্টজ) শব্দতরঙ্গ (সেন্টিমিটার)
C0 16.35 2109.89
 C#0/Db0  17.32 1991.47
D0 18.35 1879.69
 D#0/Eb0  19.45 1774.20
E0 20.60 1674.62
F0 21.83 1580.63
 F#0/Gb0  23.12 1491.91
G0 24.50 1408.18
 G#0/Ab0  25.96 1329.14
A0 27.50 1254.55
 A#0/Bb0  29.14 1184.13
B0 30.87 1117.67
C1 32.70 1054.94
 C#1/Db1  34.65 995.73
D1 36.71 939.85
 D#1/Eb1  38.89 887.10
E1 41.20 837.31
F1 43.65 790.31
 F#1/Gb1  46.25 745.96
G1 49.00 704.09
 G#1/Ab1  51.91 664.57
A1 55.00 627.27
 A#1/Bb1  58.27 592.07
B1 61.74 558.84
C2 65.41 527.47
 C#2/Db2  69.30 497.87
D2 73.42 469.92
 D#2/Eb2  77.78 443.55
E2 82.41 418.65
F2 87.31 395.16
 F#2/Gb2  92.50 372.98
G2 98.00 352.04
 G#2/Ab2  103.83 332.29
A2 110.00 313.64
 A#2/Bb2  116.54 296.03
B2 123.47 279.42
C3 130.81 263.74
 C#3/Db3  138.59 248.93
D3 146.83 234.96
 D#3/Eb3  155.56 221.77
E3 164.81 209.33
F3 174.61 197.58
 F#3/Gb3  185.00 186.49
G3 196.00 176.02
 G#3/Ab3  207.65 166.14
A3 220.00 156.82
 A#3/Bb3  233.08 148.02
B3 246.94 139.71
C4 261.63 131.87
 C#4/Db4  277.18 124.47
D4 293.66 117.48
 D#4/Eb4  311.13 110.89
E4 329.63 104.66
F4 349.23 98.79
 F#4/Gb4  369.99 93.24
G4 392.00 88.01
 G#4/Ab4  415.30 83.07
A4 440.00 78.41
 A#4/Bb4  466.16 74.01
B4 493.88 69.85
C5 523.25 65.93
 C#5/Db5  554.37 62.23
D5 587.33 58.74
 D#5/Eb5  622.25 55.44
E5 659.25 52.33
F5 698.46 49.39
 F#5/Gb5  739.99 46.62
G5 783.99 44.01
 G#5/Ab5  830.61 41.54
A5 880.00 39.20
 A#5/Bb5  932.33 37.00
B5 987.77 34.93
C6 1046.50 32.97
 C#6/Db6  1108.73 31.12
D6 1174.66 29.37
 D#6/Eb6  1244.51 27.72
E6 1318.51 26.17
F6 1396.91 24.70
 F#6/Gb6  1479.98 23.31
G6 1567.98 22.00
 G#6/Ab6  1661.22 20.77
A6 1760.00 19.60
 A#6/Bb6  1864.66 18.50
B6 1975.53 17.46
C7 2093.00 16.48
 C#7/Db7  2217.46 15.56
D7 2349.32 14.69
 D#7/Eb7  2489.02 13.86
E7 2637.02 13.08
F7 2793.83 12.35
 F#7/Gb7  2959.96 11.66
G7 3135.96 11.00
 G#7/Ab7  3322.44 10.38
A7 3520.00 9.80
 A#7/Bb7  3729.31 9.25
B7 3951.07 8.73
C8 4186.01 8.24
 C#8/Db8  4434.92 7.78
D8 4698.63 7.34
 D#8/Eb8  4978.03 6.93
E8 5274.04 6.54
F8 5587.65 6.17
 F#8/Gb8  5919.91 5.83
G8 6271.93 5.50
 G#8/Ab8  6644.88 5.19
A8 7040.00 4.90
 A#8/Bb8  7458.62 4.63
B8 7902.13 4.37


 

ব্যবহারিক সুবিধার জন্য, পিয়ানো বা হারমোনিয়াম জাতীয় যন্ত্রের উপরের কীবোর্ডের চাবিগুলো সাদাকালোতে মেশানো থাকে। এর সাদা চাবিগুলো পরপর গায়ে লাগানো থাকে। আর কালো চাবিগুলো থাকে ২-৩ পদ্ধতিতে ফাঁকা ফাঁকা অবস্থায়। পিয়ানোর এই বিন্যাস অনুসারে দুই কালোর সেটের বাম পাশের ধ্বনিটির নাম দিলেন C। এর পরের চাবিগুলোর নাম দিলেন  D E F G A B

স্কেলের স্বরবন্যাস 

একটি স্কেলের অন্তর্গত ১২টি স্বরকে যদি আরোহ প্রক্রিয়ায় সাজানো যায়, তাহলো- স্বরাণুক্রমে এর বিন্যাস হলো A  B  C  C  D  D  E  F  F  G  G । সব মিলিয়ে এর যে রূপটি দাঁড়ালো, তা কীবোর্ডের বিন্যাসটি হলো নিচের চিত্রের মতো।


 

 

 

পাশ্চাত্য স্কেলের এরূপ স্বরসজ্জাকে বলা হয় স্বরানুক্রমিক স্কেল (chromatic scale)। কিন্তু এর ভিতরে

পাশ্চাত্য সঙ্গীত পদ্ধতিতে স্কেলের সাথে সমন্বয় করে অক্টেভগুলোকে ৯টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই ভাগ প্রতিটি স্কেলের বিচারে পৃথক পৃথক নামে চিহ্নিত হয়।
নিচে A4 (৪৪০ হার্ট্‌জ্) ্কেল সেটের আদ্য
সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি নাম, অক্টেভ নাম এবং কম্পাঙ্ক মানের সারণী দেওয়া হলো।

সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি নাম অক্টেভ নাম কম্পাঙ্ক হার্টজ
A-1 Subsubcontra 13.75
A0 Subcontra 27.5
A1 Contra 55
A2 Great 110
A3 Small 220
A4 One-lined 440
A5 Two-lined 880
A6 Three-lined 1760
A7 Four-lined 3520
A8 Five-lined 7040
A9 Six-lined 14080


উপরের চিত্রে দেখা যাচ্ছে প্রতিটি স্কেলই বার বার ফিরে আসছে। একে সুনির্দিষ্ট করার জন্য কীবোর্ডে স্বরের অবস্থানের একটির মান 0 ধরা হলো। এই অবস্থানের উভয় পাশের স্কেলগুলো নির্ধারিত হলো ঋণাত্মক এবং ধনাত্মক মান দ্বারা। েমন  A স্কেলের কেন্দ্রীয় স্কেলটির নামকরণ করা হলো A0। আর এর নিচের স্কেলের নাম হলো A-1। অন্যদিকে ডান দিকের স্কেলগুলো হলো যথাক্রমে A1, A2, A3, A4, A5, A6, A7, A8, A9

 

স্কেলের শ্রেণিবিভাজন

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১ সেমিটোন ব্যবধানে স্বরাণুক্রমিক বিন্যাসে যে স্কেল তৈরি হলো, তার নাম দেওয়া স্বরানুক্রমিক স্কেল (chromatic scale)  এই বিচারে A স্কেলের স্বরানুক্রমিক স্বরগুলো হবে
                      
A  B  C  C  D  D  E  F  F  G  G [A]

ক্রিয়াত্মক সঙ্গীতে স্বরানুক্রমিক স্কেল তেমন বিশেষ ভূমিকা রাখে না। সেখানে কড়ি কোমল মিশিয়ে গান করা হয়। অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় অনেক স্বরকে বর্জন করা হয়।

পাশ্চাত্য সঙ্গীতজগতে ‌১৬০০-১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে স্বরাণুক্রমিক স্কেলকে স্বরের সংখ্যা ও বিন্যাসের দ্বারা নানা ধরনের স্কেল তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর ফলে যে স্কেলগুলো তৈরি হয়, তা হলো-

ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে স্কেলের পরিবর্তে রাগের স্বরসংখ্যার বিচারে রাগের জাতি নির্ধারণ করা হয়েছে। রাগের এক্ষেত্রে শুধু স্কেলের সংখ্যাটা বড় কথা নয়, এর সাথে রয়েছে সুরের চলন প্রকৃতি। তাই ষাড়ব স্কেল আর ষাড়ব জাতি এক নয়।

পাশ্চাত্যরীতিতে স্কেলের সংখ্যামানের পাশাপাশি স্বরের প্রকৃতিকে বিচার করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে স্কেলে টোন ও সেমিটোন কি বিন্যাসে অবস্থান করে তার উপর ভিত্তি করে স্কেল নির্ধরাণ করা হয়।
একটি স্কেলে স্বরবিন্যাসে সেমিটোন ও টোনের ব্যবহার বিধি অনুসারে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ দুটি হলো হেমাটোনিনিক ও অ্যানহেমাটোনিক।

পাশ্চাত্য সঙ্গীত পদ্ধতিতে ডায়াটোনিক স্কেলকে নানা ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমন-

ভারতীয় ঠাট পদ্ধতিতে বিলাবলের অনুরূপ। এর স্বর বিন্যাস- স র গ প ধ ন র্স।

ন্যাচারাল মাইনর স্কেল (Natural minor scale)

ন্যাচারাল মাইনর স্কেলের স্বরবিন্যাসের সূত্রটি তৈরি হয়েছিল টোন-সেমিটোন টোন-টোন-সেমিটোন-টোন-টোন। একে পাশ্চাত্য সঙ্গীতশাস্ত্রে উল্লেখ করা হয় T-S-T-T-S-T-T এক্ষেত্রে স্কেলের আদি স্বরের পরে স্বর থেকে হিসেবটি শুরু হয়। নিচে A স্কেলের বিচারে বিষয়টি দুটি উদাহরণের মধ্য দিয়ে দেখানো হলো।
 

A স্কেলের সম-স্বরানুক্রমিক স্বরগুলো হবে
                      
A  B  C C  D  D  E  F  F  G  G [A]

 

এই সেট থেকে A ন্যাচরাল মাইনর স্কেলের রূপটি হবে-
                       A B C D E F G [A]

ভারতীয় ঠাট পদ্ধতিতে আশাবরীর অনুরূপ। এর স্বর বিন্যাস- স র জ্ঞ প দ ণ র্স।
 

ন্যাচারাল মাইনর স্কেলের স্বরবিন্যাসে সামান্য পরিবর্তন করে আরও দুটি স্কেল তৈরি করা হয়েছে। এই স্কেল দুটি হলো হার্মোনিক মাইনর স্কেল মেলোডিক মাইনর স্কেল

 

হার্মোনিক মাইনর স্কেল (Harmonic minor scale)

এই স্কেলের স্বরবিন্যাসের সূত্রটি তৈরি হয়েছিল টোন-সেমিটোন টোন-টোন-সেমিটোন-দেড়টোন-সেমিটোন। একে পাশ্চাত্য সঙ্গীতশাস্ত্রে উল্লেখ করা হয় T-S-T-T-S-3S-S এক্ষেত্রে স্কেলের আদি স্বরের পরের স্বর থেকে হিসাবটি শুরু হয়। নিচে A স্কেলের বিচারে বিষয়টি দুটি উদাহরণের মধ্য দিয়ে দেখানো হলো।

 

A স্কেলের সম-স্বরানুক্রমিক স্বরগুলো হবে
                      
A  B  C C  D  D  E  F  F  G  G [A]

 

এই সেট থেকে A ন্যাচরাল মাইনর স্কেলের রূপটি হবে-
                       A A C D E F G [A]

 

উত্তর ভারতীয় ঠাট পদ্ধতিতে এর স্বরবিন্যাস হবে
                    স ঋ গ ম প দ ন র্স

 

মেলোডিক মাইনর স্কেল (Melodic minor scale)

এই স্কেলের স্বরবিন্যাসের আরোহণ ও অবরোহণে দুটি বিন্যাস পাওয়া যায়। এর আরোহণে ন্যাচারাল মাইনর স্কেলের মতো চলন, কিন্তু ষষ্ঠ এবং সপ্তম স্বর এক সেমিটোন উন্নীত হয়। কিন্তু অবরোহণ পুরোপুরি ন্যাচারাল মাইনর স্কেলের মতো। নিচে A স্কেলের বিচারে বিষয়টি দুটি উদাহরণের মধ্য দিয়ে দেখানো হলো। এর সূত্র:
             আরোহণ:
T-S-T-T-T-T-S
            
অবরোহণ: T-T-S-T-T-S-T

 

A স্কেলের সম-স্বরানুক্রমিক স্বরগুলো হবে
                      
A  B  C C  D  D  E  F  F  G  G [A]

 

এই সেট থেকে A ন্যাচরাল মাইনর স্কেলের রূপটি হবে-
                      আরোহণ:  A B C D E F G [A]
                     
অবরোহণ: [A] G F E D C B A


উত্তর ভারতীয় ঠাট পদ্ধতিতে এর সমতুল্য কোনো ঠাট নেই। এর স্বরবিন্যাস হবে
                    আরোহণ: স র জ্ঞ ম প ধ ন র্স
                    অবরোহণ: স ণ দ প ম জ্ঞ র স

পেন্টাটোনিক স্কেল (Pentatonic scale)
জাজ (
jazz) গানে আরও এক প্রকার স্কেল ব্যবহার করা হয়। একে বলা হয় পেন্টাটোনিক স্কেল (Pentatonic scales) এই স্কেলে পাঁচটি স্বর ব্যবহার করা হয়। এই স্কেলটি টোন এবং সেমিটোনের  ব্যবহারের বিচারে দুই রকম হতে পারে। এই প্রকার দুটি হলো-

পাশ্চাত্য সঙ্গীতজগতে স্কেলের এই শ্রেণিবিভাজন নিয়ে ভারতীয় সঙ্গীতজগতের কোনো মাথা ব্যথা নেই। তব্য পাশ্চাত্য সঙ্গীতের স্কেলের মূল সূত্রটি ভাতবর্ষের সঙ্গীতগুরুরা মান্য করেন। কারণ, এঁরা যে স্বরসপ্তকের কথা বলেন, তা মূলত স্কেলেরই একটি বিশেষ ধরনের বিন্যাসগত প্রকরণ। মূলত স্কেল বিষয়টি সুনির্দিষ্ট না হলে- স্বরের বিষয়টিও নির্ধারণ করা যায় না। কারণ স্বর মাত্রেই কোনো স্কেলের আদ্য সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনির বিচারে একটি বিশেষ ধ্বনিগত অবস্থান।
 


তথ্যসূত্র:
ভারতীয় সঙ্গীতের ইতিহাস । প্রথম খণ্ড। স্বামী প্রজ্ঞানন্দ
ভারতীয় সঙ্গীতকোষ
। শ্রীবিমলাকান্ত রায়চৌধুরী। বৈশাখ ১৩৭২।
রাগ ও রূপ। স্বামী প্রজ্ঞানন্দ। জুলাই ১৯৯৯।
সরল বাংলা অভিধান। সুবলচন্দ্র মিত্র
বঙ্গীয় শব্দকোষ। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়