যাজ্ঞবল্ক্য শিক্ষা
এই গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন- যাজ্ঞবল্ক্য নামক একজন ঋষি। এটি যজুর্বেদীয় শাখার
শিক্ষা। তিনজন যাজ্ঞবল্ক্যের নাম পাওয়া যায়। এঁরা হলেন- সংহিতাকার যাজ্ঞবল্ক্য,
মহাভারতের যাজ্ঞবল্ক্য এবং শিক্ষাকার যাজ্ঞবল্ক্য। মহাভারত লিখিত হয়েছিল-
খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ অব্দের ভিতরে। তাই মহাভারতের যাজ্ঞবল্ক্য সর্বপ্রাচীন।
অধ্যাপক জলি এবং ডাঃ কানের বিচারে সংহিতাকার যাজ্ঞবল্ক্য ছিলেন ১০০ থেকে ৩০০
খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে। শিক্ষাকার যাজ্ঞবল্ক্য ছিলেন সংহিতাকার যাজ্ঞবল্ক্যের
সমসাময়িক বা কিছু পরের মানুষ।
যাজ্ঞ্যবল্ক্য শিক্ষায় তিনটি বৈদিক স্বর- উদাত্ত, অনুদাত্ত ও স্বরিত নামে পাওয়া যায়।
তবে এই স্বরগুলোর স্থান, বর্ণ, দেবতা, জাতি, ঋষি ও ছন্দের বিচারে পরিচয় দেওয়া হয়েছে।
স্বর |
স্থান |
বর্ণ |
দেবতা |
জাতি |
ঋষি |
ছন্দ |
উদাত্ত |
উচ্চ |
শুক্ল |
অগ্নি |
ব্রাহ্মণ |
ভরদ্বাজ |
গায়ত্রী |
অনুদাত্ত |
নীচ |
লোহিত |
সোম (তেজঃ) |
ক্ষত্রিয় |
গৌতম |
ত্রৈষ্টুভ |
স্বরিত |
মধ্যম |
কৃষ্ণ |
সবিতা |
বৈশ্য |
গার্গ্য |
জগতী |
স্বরের এরূপ পরিচিতি ছান্দ্যোগ্য উপনিষদে ভিন্ন রূপে পাওয়া যায়। যাজ্ঞবল্ক্য
শিক্ষায় উদাত্ত, অনুদাত্ত ও স্বরিত স্বর থেকে যে অন্যান্য স্বরের উৎপত্তি ঘটেছে- সে
সম্পর্কে লিখেছেন-
ঊচ্চৌ নিষাদগান্ধারৌ নীচাঋষভধৈবতৌ
শেষস্তু স্বরিতা জ্ঞেয়াঃ যড়্জ-মধ্যম-পঞ্চম॥
এখনে ঊচ্চৌ শব্দের দ্বারা উদাত্তকে বুঝানো হয়েছ। এখান থেকে উৎপন্ন হয়েছে নিষাদ ও
গান্ধার। নীচা শব্দের দ্বারা অনুদাত্তকে বুঝানো হয়েছে। এখান থেকে উৎপন্ন হয়েছে- ঋষভ
ও ধৈবত। স্বরিত থেকে উৎপন্ন হয়েছে - ষড়্জ, মধ্যম ও পঞ্চম।
যাজ্ঞবল্ক্য মাত্রার মান নির্ণনয়ে সূর্যরশ্মিতে প্রতিভাত ক্ষুদ্রক্ষুদ্র অণুর কথা
বলেছেন। তাঁর মতে চারটি অণুতে এক মাত্রা মাত্রা হয়। তাঁর মতে কণ্ঠে ২ মাত্রা থাকে,
জিহ্বাগ্রে ৩ মাত্রা থাকে। মাত্রা এককগুলো হলো হ্রস্ব (১ মাত্রা), দীর্ঘ (২ মাত্রা) ও প্লুত
(৩ মাত্রা)। তিনি পশুপাখির স্বরের ভিতরে মাত্রার সন্ধান করেছিলেন। যেমন তাঁর মতে-
নীলকণ্ঠ পাখির স্বর হ্রস্ব, কাকের স্বর দীর্ঘ এবং ময়ুরের স্বর প্লুত।
বেদপাঠে সহকারী আটটি স্বর ব্যবহৃত হতো। এগুলো হলো- জাত্য, অভিনিহিত, ক্ষৈপ্র,
প্রশ্লিষ্ট, তৈরোবিরাম, তৈরোব্যঞ্জন, পাদবৃত্ত ও তাথাভাব্য। তিনি স্পর্শবর্ণের দেবতা
ও রঙের উল্লেখ করেছেন।
তথ্যসূত্র:
- ছান্দোগ্য উপনিষদ। [উপনিষদ। অতুল সেন, সীতানাথ
তত্ত্বভূষণ ও মহেষচন্দ্র ঘোষ অনূদিত। হরফ। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০০০]
- ভারতীয় সঙ্গীতের ইতিহাস (প্রথম ভাগ)। স্বামী
প্রজ্ঞানানন্দ। রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ। জানুয়ারি ১৯৮৭।
-
মহাভারত (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড)। অনুবাদ কালীপ্রসন্ন সিংহ। সাহিত্য তীর্থ। জুন
২০১৪।
- সামবেদ সংহিতা।
অনুবাদ ও সম্পাদনা: শ্রীপরিতোষ ঠাকুর। হরফ প্রকাশনী, কলিকাতা। অষ্টম মুদ্রণ, ২০
জুলাই ২০০১