চিত্র বীণা
প্রাচীন ভারতীয় তত শ্রেণির বাদ্য যন্ত্র।
খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে রচিত ভরতের নাট্যশাস্ত্রে এই বীণাকে সপ্ততন্ত্রী বীণা
[ঊনত্রিশ অধ্যায় ১২০] হিসেব উল্লেখ করা হয়েছে। এই বীণা বাদিত হতো অঙ্গুলির আঘাতে।
খ্রিষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে শারঙ্গদেবের রচিত 'সঙ্গীতরত্নাকর' গ্রন্থের
বাদ্যাধ্যায়ে (১০৫-১০৯) চিত্রাবীণাকে অঙ্গুলাঘাতে বাদিত সপ্ততন্ত্রী বীণা হিসেবে
উল্লেখ করা হয়েছে। এই বীণা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে
গেছে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে দক্ষিণ ভারতেরর
শ্রীনিবাস রাও এই বাদ্যযন্ত্রকে আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেন এবং আধুনিক চিত্রবীণা
প্রস্তুত করেন। শ্রীনিবাস রাও তিনি তাঁর পুত্র - সখা রাম রাও-এর বাদন প্রক্রিয়া
শেখান। সখা রাম রাও এই যন্ত্রের আরও পরিমার্জিত করেন এবং বাদ্য পরিবেশনের মাধ্যমে
এই যন্ত্রটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন।
এই বাদ্যযন্ত্রে শারিকা না
থাকায়, আঙ্গুলে ঘষিত অবস্থায় সঞ্চালনে বাদিত হয়। ঘষিত সঞ্চালনকে স্থানীয়
ভাষায় বলা হয় গোতু। তাই এই যন্ত্রের নামকিরণ করা হয়েছিল- গোতুবাদ্যম। রাম
রাও-এর অন্যতম শিষ্য ত্র্যভাঙ্কর এবং মাইসুর রাজ্যের সভা-শিল্পী
নারায়ণ আয়েঙ্গার (১৯০৩-১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দ) এই যন্ত্রটিকে
আরও উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যান এবং জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যান। পরবর্তীয় সময়ে
নারায়ণ আয়েঙ্গারের পুত্র সঙ্গীত গবেষক নরসিমহাম রবিকিরণ এই যন্ত্র বাদনে খ্যাতি লাভ
করেন। তিনি এবং অন্যান্য সঙ্গীত গবেষকরা গবেষণাসূত্রে এই যন্ত্রটিকে আধুনিক
চিত্রবীণা হিসেবে চিহ্নিত করেন। এরপর থেকে গোতুবাদ্যম নামটি বাতিল হয়ে যায়। রবিকিরণ
এই যন্ত্রটির ব্যাপক পরিমার্জন করে নতুন সংস্করণ তৈরি করেন। এই নতুন সংস্করণের
নামকরণ করেন নবচিত্রবীণা।
আধুনিক চিত্রবীণায় প্রধান ৬টি তার সুরের জন্য ব্যবহার করা হয়।
এছাড়া ১১ থেকে ১২টি তরফের তার থাকে। এই তারগুলো প্রধান তারের নিচে সমান্তরালভাবে
স্থাপিত থাকে। এই যন্ত্রের প্রধান সুরের তারটি বাঁধা হয় জি শার্প-এ। এর তারগুলো
বাঁধা হয় র্স-প্-র্স-প্-র্স-স্ স্বরবিন্যাসে। এর ভিতরে প্রাধন তার বাজানোর জন্য
হাওইয়ান গিটার বা বিচিত্র বীণার মতো একটি স্লাইড ব্যবহার করা হয়। এই স্লাইড গুলো
তৈরি হয় শক্ত কাঠ, মহিষের শিং, কাঁচ বা টেফলোন জাতীয় পদার্থ দিয়ে। ডান হাতের আঙুল
দিয়ে তারে আঘাত করার জন্য, আঙুলের মাথায় ধাতব টুপি ব্যবহার করা হয়।