দুন্দুভি
বৈদিক যুগের আনদ্ধ বাদ্যযন্ত্র বিশেষ। প্রচণ্ড শব্দের দ্বারা
শত্রুর মনে ভয় জাগানো এবং নিজের দলের সৈন্যদের উৎসাহ যোগানোর জন্য এই বাদ্যযন্ত্র
ব্যবহার করা হতো।
কাঠ বা মাটির বড় কাঠামোর মুখে পশুর চামড়া দ্বারা আচ্ছাদিত করে
এই যন্ত্র তৈরি করা হতো। নাট্যশাস্ত্রের তেত্রিশতম অধ্যায়ের ১১তম
শ্লোকে উল্লেখ আছে, দেবগণের দুন্দুভি দেখে (বিশ্বকর্মা) মুরজ,, আলিঙ্গ্য, ঊর্ধ্বক ও
আংকিক তৈরি করেন। এই সূত্রে ধারণা করা হয়, দুন্দুভি থেকে কালক্রমে বহু অবনদ্ধ
যন্ত্রের উদ্ভব হয়েছিল।
বৈদিক যুগে দুন্দুভির ব্যবহার ছিল মূলত যুদ্ধক্ষেত্রে। যুদ্ধক্ষেত্রে জয়ের লক্ষ্যে
ঋকবেদের ৬ষ্ঠ মণ্ডলের ৪৮ সূক্তের ২৯ থেকে ৩১ শ্লোকে দুন্দুভিকে রীতিমতো বন্দনা করা হয়েছে।
একই সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে জয়ের জন্য তার কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে। এই শ্লোক তিনটি হলো-
- হে দুন্দুভি! তুমি
নিজ শব্দ দ্বারা স্বর্গ ও পৃথিবী পরিপূর্ণ কর, স্থাবর ও জঙ্গম উভয়ভবিধ
প্রাণিজাতে অবগত হও। তুমি ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবগণের সাথে সমবেত হয়ে, আমাদের
শত্রুগণকে সুদূরে প্রেরণ কর। ৬।৪৮।২৯
- হে দুন্দুভি! তুমি
আমাদের শত্রুগণকে রোদন করাও। তুমি আমাদের বল প্রদাবন কর। তুমি দুর্ধর্ষ
শত্রুগণের পীড়া-বিধানপূর্বক উচ্চরব কর। হে দুন্দুভি! আমাদের অনিষ্ট করে যারা
আনন্দিত হয় তাদের দূরীভূত কর। তুমি ইন্দ্রের মুষ্ঠিস্বরূপ অতএব আমাদের দৃঢ়তা
প্রাদন কর। ৬।৪৮।৩০
- হে ইন্দ্র! আমাদের
এ সমস্ত ধেনুকে প্রতিনিবৃত্ত করে আমাদের নিকট নিয়ে এস। দুন্দুভি সকল ব্যক্তির
নিকট ঘোষণা করবার নিমিত্ত নিয়ত উচ্চরব করছে। আমাদের নায়কগণ অশ্বারোহণপূর্বক
সমবেত হয়েছে। হে ইন্দ্র! আমাদের রথারূঢ় সেন্যগণ যেন যুদ্ধে জয়লাভ করে।
৬।৪৮।৩১
মাটিতে গর্ত করে এর মুখে
চামড়া দিয়ে আচ্ছাদিত করে তৈরিকৃত দুন্দুভিকে বল হতো ভূমি দুন্দুভি।
সূত্র
- বেদ। (দ্বিতীয় খণ্ড) ঋগ্বেদ সংহিতা। হরফ। কলকাতা। ১৮ ফেব্রুবারি, ২০০০।
পৃষ্ঠা ৫৭
- নাট্যশাস্ত্র। ভরত। বঙ্গানুবাদ: ডঃ সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডঃ ছন্দা
চক্রবর্তী । নবপত্র প্রকাশন। ডিসেম্বর ২০১৪। (চতুর্থ খণ্ড) ত্রয়স্ত্রিংশ অধ্যায়।
শ্লোক ১১। পৃষ্ঠা ১৬২।