মহতী বীণা
প্রাচীন ভারতের ততযন্ত্র বিশেষ।
পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে- এই বীণা মহর্ষি নারদ তৈরি করেছিলেন।
মানুষের আকারকে ভিত্তি করে এই বীণা তৈরি করা হয়েছিল। মানুষের মেরুদণ্ডের আদলে
বংশদণ্ড দিয়ে এর ভিত্তি তৈরি হয়েছিল। এই দণ্ডের উভয় পার্শ্বে লাউ থাকতো। প্রাচীন
ভারতের সঙ্গীত চিন্তায় ধারণা করা হতো, সঙ্গীতের স্বরের উৎপত্তিস্থাল ছিল- নাভি,
কণ্ঠ ও মস্তক। এই যন্ত্রের একপ্রান্তে নাভি স্থাপন করা নয় মুষ্ঠি পরিমাণ দূরত্বে
মস্তক স্থাপন করা হতো। এরপর নাভি থেকে মস্তক অবধি সাতটি তার স্থাপন করা হতো। এর
ভিতরে ৩টি ছিল লোহার তার অবশিষ্ট ৪টি তার ছিল পিতলের।
এই বীণার প্রথম তারটি ছিল লোহার। এই তারটিকে উদারা সপ্তকের মধ্যমে বাঁধা হতো। এর
নাম ছিল নায়কী তার। এর দ্বিতীয় তার ছিল পিতলের। এই তার বাঁধা হতো উদারার ষড়্জতে।
এর তৃতীয় তার ছিল পিতলের। এটি বাঁধা হতো- উদারার পঞ্চমে। এই যন্ত্রের চার ও পাঁচ
সংখ্যক তারও ছিল পিতলের। এই তার বাঁধা হতো উদারার ষড়্জে। ষষ্ঠ ও সপ্তম তার ছিল
লোহার। এর ভিতরে ষষ্ঠ তার বাঁধা হতো মুদারার ষড়্জতে আর সপ্তম তার বাঁধা হতো তারার
ষড়্জতে। আদর্শ মহতী বীণার বংশদ্ণ্ডের উপর ২৩টি ঘাট থাকতো। তবে কোনো কোনো বীণাতে
১৯টি ঘাট ব্যবহার করা হতো। ২৩ তারে মোট ২২টি শ্রুতির স্থান ছিল। বীণাবাদক এই
শ্রুতিস্থানে স্বর নির্ধারণ করে বাজাতেন।
শিল্পীরা এই বীণা কাঁধে স্থাপন করতেন। শিল্পীরা ডান হাতে মিজরাপ দ্বারা তারে
আঘাত করে এবং বাম হাতে স্বর-সারিকায় আঙুল সঞ্চলান করে বাজাতেন। এর পাঁচ সংখ্যক তারে
সাধারণত আঘাত করা হতো উদারার ষড়্জের সাথে স্বরসঙ্গতি করার জন্যে কদাচিৎ। এক্ষেত্রে
কনিষ্ঠ আঙুল ব্যবহৃত হতো।
সূত্র :
- যন্ত্রকোষ। প্রথম অধ্যায়। মহতী বীণা (১)। শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর। প্রকাশক: অভয়চরণ ঘোষ।
১৮৭৫। পৃষ্ঠা: ৩-১৬