চতুর্মাত্রিক তাল
রবীন্দ্রসঙ্গীতে চার মাত্রায় নিবদ্ধ তালের দুটি প্রকরণ ব্যবহৃত হয়েছে। তাল দুটি হলো- ক. বিভাজিত। ২।২ মাত্রা ছন্দ : প্রাচীন বাংলা লোকগীতিতে এই ছন্দটি পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথই সর্বপ্রথম বাংলা লোকগীতির ভাণ্ডার থেকে তুলে এনে নাগরিক গানে জায়গা করে দিয়েছিলেন।  নিচে ছন্দটির ঠেকা দেখানো হলো।

 

  +           +
 

১ 

   

     
I

ধিন্

তাক

নাক

ধিন I

ধিন্ 

 

 

 ৩

 

 

     

এই ছন্দে রবীন্দ্র সঙ্গীতের সংখ্যা মোট ১৯।
 


খ. অবিভাজিত
এককালে বাঙলা লোকগীতিতে ব্যবহৃত তালে সম ফাঁকের ব্যাপার ছিল না। সকালের লোকগীতি শিল্পীরা ছন্দের সরল এবং স্বাভাবিক ছন্দকেই অনুসরণ করতেন। নগরকেন্দ্রিক সঙ্গীত সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসে লোকগীতির যতগুলি পরিবর্তন এসেছে
, তার অন্যতম অংশ হলোছন্দ। যেমন প্রাচীন লোকগীতিতে ৪ মাত্রা ছন্দের তাল ছিল, কিন্তু, ৪ মাত্রাকে দুবার ব্যবহার করে, তাতে সম-ফাঁকের জটিলতা ছিল না। লোক-শিল্পীরা গাইতেন ৪ মাত্রার সরল ছন্দে, যার প্রতি আবর্তনের আরম্ভে থাকতো একটি তালি। রবীন্দ্রনাথ হয়তো সেই আদি-অকৃত্রিম ছন্দকেই তাঁর গানে প্রয়োগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, তা ব্যাপকতা লাভ করেনি। প্রাচীন লোক-শিল্পীরা গাইতেন, তাদের হাতে তৈরী তারের যন্ত্রে। সেখানেই সুর উঠতো, সেখানেই ছন্দ রচিত হতো। কখনো কখনো আনন্দলহরীর মতো যন্ত্রে পাওয়া যেতো বাড়তি ছন্দের সাহায্য। এ ছাড়া বড় বড় আসরে এরা সাহায্য পেতেন খোল, ঢোল, করতাল প্রভৃতির। আসরে কণ্ঠশিল্পী ছিলেন নায়ক। সুতরাং তিনি যে ছন্দ চাইতেন, অন্যান্য সহযোগী শিল্পীরাও তাই অনুসরণ করতেন। কখনো লয়কারী বাদকদের সাথে কণ্ঠশিল্পীদের ছন্দের লড়াই বসতো, তাতে ওস্তাদি প্রকাশ পেতো সত্য, কিন্তু আসরের বাইরে গ্রাম বাঙলার সাধারণ মানুষের সহজাত অনুভুতিতে প্রতিষ্ঠা পায় নি।

রবীন্দ্রনাথ ছিলেন মূলত নগরকেন্দ্রিরিক সঙ্গীত সংস্কৃতির ধারায় পুষ্ট। সে কারণে তাঁর গানে ছন্দও এসেছে
, এই ধারার অনুকরণে। চার মাত্রার ছন্দে নিবদ্ধ গান ছিল তাঁর একটি নিরীক্ষাধর্মী প্রয়োগ। ছন্দের খেলায় এসে তিনি বুঝতে পরেছিলেন যে, এ জাতীয় ছন্দ সহজেই বৈচিত্র্যহীন হয়ে পড়ে। সম্ভবত এ কারণেই তিনি পরবর্তীকালে এই ছন্দে উৎসাহ বোধ করেন নি। এই ছন্দে তিনি মাত্র একটি গান রচনা করেছিলেন। গানটি হলো

 

নির্জন রাতে নিঃশব্দ চরণপাতে/প্রেম ও প্রকৃতি-৯৬।

 

রবীন্দ্রনাথ এই ছন্দের কোনো নামকরণ করে যান নি। তালের ঠেকাও ছন্দ-বাদকদের ঠেকায় সৃষ্টি হয়েছে। এরূপ একটি ঠেকা নিচে তুলে ধরা হলো-
 

  +         +
 

১ 

 

 

     
I

ধা

ধি

ধি

না I

 ধা

 

 ৩

 

 

 


সূত্র :