রূপকড়া
বাঙলা গান তথা উত্তর ভারতীয় সঙ্গীতে এই তালটি সম্পূর্ণ নূতন। কিন্তু দক্ষিণ ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে এই তালটি পাওয়া যায়। দক্ষিণ ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে- মত্ত তালের তিস্র জাতিতে এইরূপ তাল আছে। উক্ত তালটির ব্যবহারিক নাম সার'। বি. বটব্যাল প্রণীত তবলা শিক্ষা' গ্রন্থে এ তালটির যে ঠেকা দেখানো হয়েছে তা হলো-
+ | + | |||||||||||
১ |
|
২ |
|
৩ | ||||||||
I |
ধিন |
ধিন |
ধা |
। | কৎ |
তা |
। |
ধিন |
ধাগে |
তেরেকেট |
I | ধিন |
১ |
২ |
৩ | ৪ |
৫ |
৬ |
৭ |
৮ |
বাংলা গানে রবীন্দ্রনাথ সর্বপ্রথম সার্থকভাবে এই তাল প্রয়োগ করেন। কলকাতার আদি ব্রাহ্মসমাজের গায়ক কাঙ্গালীচরণ সেন, ১৩১১ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত ব্রহ্মসঙ্গীত স্বরলিপি'-গ্রন্থে এই তালটিকে 'রূপক্ড়া' নামকরণ করেন। একই সাথে তিনি এই তালটিকে রবীন্দ্রনাথের রচিত নূতন তাল হিসাবে দাবী করেছিলেন।
স্বরবিতান (রবীন্দ্র-সঙ্গীতের স্বরলিপি গ্রন্থমালা) চতুর্থ খণ্ডের ৪১ পৃষ্ঠার পাদটীকায় এই তালটি সম্পর্কে লিখিত হয়েছে,- ইহা রবীন্দ্রসংগীতে ব্যবহৃত আটমাত্রা-বিশিষ্ট একটি বিষমপদী নূতন তাল। যেরূপ বেহাগের কাছাকাছি বলিয়া রাগিণীর নাম 'বেহাগড়া' সেইরূপ রূপক তালের কাছাকাছি বলিয়া এই তালের নাম 'রূপক্ড়া'। ইহার সঙ্গ মৃদঙ্গ কিংবা তবলা যে কোনো যন্ত্রেই চলিতে পারে। দৃষ্টান্তস্বরূপ একটি ঠেকা, যথা-
+ | + | |||||||||||
১ |
|
২ |
|
৩ | ||||||||
I |
ধাগে |
তেটে |
তেটে |
। | তাগে |
তেটে |
। |
কেটে |
তাগে |
তেটে |
I | ধা |
১ |
২ |
৩ | ৪ |
৫ |
৬ |
৭ |
৮ |
তবলারা বিকল্প ঠেকা
+ | + | |||||||||||
১ |
|
২ |
|
৩ | ||||||||
I |
ধিন |
ধিন |
না |
। | ধিন |
না |
। |
ধিন |
ধিন |
না |
I | ধিন |
১ |
২ |
৩ | ৪ |
৫ |
৬ |
৭ |
৮ |
যদিও স্বরবিতান চতুর্থ খণ্ডে উদাহরণ হিসাবে রূপকের কাছাকাছি বলে- তালটি রূপকড়া বলা হয়েছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তালটি রূপকের তেমন কাছাকাছি নয়। কারণ, রূপকড়ার মাত্রা সংখ্যা ৮, আর রূপকের মাত্রা সংখ্যা ৭। রূপকের ছন্দ বিভাজন- ৩।২।২, কিন্তু রূপকড়া'র ছন্দবিভাজন ৩।২।৩। এবং রূপকের প্রথম ভাগে তালি নেই অথচ রূপকড়া'র সকল ভাগেই তালি আছে। রূপকের শেষের ভাগের একটি মাত্রা বৃদ্ধি করলে অবশ্য- মাত্রা সংখ্যা ও ছন্দবিভাজনের ক্ষেত্রে মিল আনা যায়, কিন্তু তাতে তালির সংখ্যার হেরফের থেকেই যায়। সে দিক থেকে তেওরা'র সাথে রূপকড়া'র মিল সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়। কারণ তেওরা'র মাত্রা সংখ্যা ও ছন্দ বিভাজন রূপকের মতো হলেও, তেওরার সকল বিভাগেই তালি পাওয়া যায়। যদি মাত্রা বাড়িয়ে- রূপকড়া'র সাথে রূপকের মিল খুঁজতেই হয়, তবে তা তেওরা'র সাথে খোঁজাই সত্যাশ্রয়ী হবে।
এই তালে নিবদ্ধ রবীন্দ্রসংগীতের সংখ্যা মোট ৯টি। গানগুলি হলো-
১. আজি যে রজনী যায়
২. উতল ধারা বাদল ঝরে
৩. ওই রে তরী দিল খুলে
৪. কত অজানারে জানাইলে তুমি
৫. কেন সারাদিন ধীরে ধীরে
৬. গভীর রজনী নামিল হৃদয়ে
৭. জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে।
৮. জীবনে যত পূজা হল না সারা
৯. শরত লোর কমলবনে