১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে জন উইলিয়াম ওয়াটারহাউস-এর আঁকা ছবি 'Thisbe'। |
পাইরামাস ও থিসবি
ইংরেজি
Pyramus।
রোমান পৌরাণিক চরিত্র। ওভিদের
Metamorphoses
নামক গ্রন্থে গ্রথিত একটি
রোমান্টিক গল্পের নায়ক হলো- পাইরামাস। এই গল্পের সাথে জড়িয়ে আছে থিসবে নামক এক
নারী।
পাইরামাস বাস করতো রানী
সেমিরাসের নগরী, ব্যাবিলনের সাধারণ একটি বাড়িতে। ব্যাবিলনে সাধারণ মানুষের জন্য
ব্যবহৃত বাড়িগুলো ছিলো এতটাই পাশাপাশি ছিল যে, অধিকাংশ বাড়ির মাঝে একটি সাধারণ
দেয়াল থাকতো। এরূপ দুইটি বাড়ির একটিতে যুবক পাইরামাস, অপরটিতে থাকতো তরুণী থিসবি।
সৌন্দর্যের বিচারে উভয়ই ছিল নগরের শ্রষ্ঠ। ছোটবেলা থেকে পাশাপাশি বসবাস করার সুবাদে
তারা পরস্পরকে ভালোবেসে ফেলেছিল। একসময় তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলে উভয় পরিবারের
তাদের মা-বাবা তাতে বাদ সাধলেন।
একদিন থিসবি'র মা-বাবা থিসবির বাইরে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন। কিন্তু উভয়
বাড়ির মধ্যবর্তী সাধারণ দেয়ালের একটি ছিদ্র দিয়ে তারা তাদের প্রেমালাপ চালিয়ে যেতো।
আর রাতের বেলা ঘুমানোর আগে দেয়ালেই চুমু দিয়ে যেতো।
এক সময় তারা সিদ্ধান্ত নিলো
যে, বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে তারা বিয়ে করবে। একদিন এরা সিদ্ধান্ত নিল যে,
রাতের বেলা 'নিনাসের সমাধি' নামক এক পরিচিত জায়গায় মিলিত হবে। স্থান হিসেবে পছন্দ
করলো ওই সমাধির পাশের ঝর্ণার ধারের একটি মালবেরি গাছের তলা।
যথারীতি রাতের অন্ধকারে থিসবি বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিনাসের সমাধির দিকে রওনা দিলো।
থিসবি আগে আগে পৌঁছে দেখলো পাইরামাস তখনো পৌছেনি। সে কারণে, থিসবিকে অপেক্ষা করতে
হলো। এমন সময় সে দেখতে পেলো এক সিংহী ঝর্নার দিকে আসছে। সিংহীর মুখে ছিল রক্তের
দাগ। সম্ভবত সিংহীটি কোনো পশু শিকার করে খাওয়ার পর, পানি খেতে এসেছিল। থিসবি
রক্তমাখা সিংহীর মুখ দেখে ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো। দ্রুত পালানোর
সময় তার শাদা ওড়নাটি মাটিতে পড়ে গেল। কিন্তু থিসবি ওড়নাটি ফেলেই নিনাসের সমাধির এক
গুহায় আশ্রয় নিলো। এদিকে সিংহটি পানি খেয়ে চলে যাওয়ার সময় সিংহী ওড়নাটি দেখতে
পেলো। সিংহী ওড়নাটি মুখে পুরে কিছুদূর গিয়ে ওড়নাটি ফেলে চলে গেলো।
এর একটু পরে পাইরামাস নিনাসের সমাধির কাছকাছি এসে রক্তমাখা থিসবির ওড়না এবং পাশেই
সিংহীর পায়ের ছাপ দেখতে পেলো। ফলে পাইরামাস ধারণা করলো যে, সিংহী থিসবিকে হত্যা
করেছে। একটু আগে আসলে সে থিসবিকে রক্ষা করতে পারতো। এই কারণে সে নিজেকে থিসবীর
মৃত্যুর জন্য দায়ী করলো। তাই সে ভালোবাসার জন্য প্রাণ বিসর্জনের সিদ্ধান্ত নিলো। সে
থিসবির ওড়নাটি নিয়ে মালবেরী গাছের নিচে এসে দাঁড়ালো। এরপর তার তরবারি বের করে
নিজেকে বিদ্ধ করতে লাগলো। এর ফলে পাইরামাস-এর রক্ত দিয়ে ওড়নাটি আরও রক্তাক্ত হয়ে
গেল। শুধু তাই নয়, তার রক্তে সাদা মালবেরী ফুল ভিজে লাল হয়ে গেলো।
এর একটু পড়ে থিসবি যখন ভাবলো সিংহীটি হয়তো নিরাপদ দূরত্বে চলে গেছে, তখন সে মালবেরী
গাছের দিকে রওনা দিল। সে নির্ধারিত গাছটির কাছে এসে দেখলো তুষারশুভ্র বেরী ফলের
গাছের বদলে সেখানে রক্তে রাঙা লাল বেরী ফলের গাছ। গাছের খুব কাছে এসে সে
রক্তাক্ত পাইরামাস এবং রক্তে রাঙা ও তরবারি দেখতে পেলো।
থিসবি তাকে কিছু জিজ্ঞাসার করার আগেই, তারই সামনে পাইরামাস মারা গেল। এই দৃশ্য
দেখার পর, থিসবি তরবারি তুলে আত্মহত্যা করলো। এই দৃশ্য দেখে দেবতাদের মনে সহানুভূতি
জাগলো তাদের প্রতি। তাঁরা ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ মালবেরী গাছের ফলকে চিরতরে লাল
বর্ণ করে দিলেন। বাবা-মাও বুঝতে পারলেন তাদের ভালোবাসার প্রকৃতি, তাদের দেহভস্ম
সংগ্রহ করে রেখে দিলেন নিনাসের সমাধিতে।
তথ্যসূত্র :
edith
hamilton mythology/new american library
http://en.wikipedia.org/wiki/Pyramus_and_Thisbe