হিন্দু ও বৌদ্ধ পৌরাণিক চরিত্র।
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে-
১. তারা দেবীর মাথায় অবস্থিত সাপ বিশেষ।
২. শিব ধ্যানমগ্ন অবস্থায় চঞ্চল হন নি বলে এই নামে খ্যাত হয়েছেন।
৩. চৌষষ্টি যোগিনীদের মধ্যে অন্যতমা যোগিনী।
বৌদ্ধ পৌরাণিক মতে-
পঞ্চতম বৌদ্ধ ধ্যানী পুরুষ। বৌদ্ধ মহাযান শাখার মতানুসারে পঞ্চ ধ্যানীবুদ্ধের একজন। এই ধ্যানীবুদ্ধগুলো
হলো- অমিতাভ, অক্ষোভ্য, বৈরোচন, অমোঘসিদ্ধি ও রত্নসম্ভব।
পঞ্চ ধ্যানীবুদ্ধের ভিতরে অক্ষোভ্যের স্থান দ্বিতীয়। আদি বুদ্ধের অদর্শন থেকে
এই অক্ষোভ্যের উৎপত্তি। অক্ষোভ্য অবিচল ধ্যান-
মগ্ন দশায় ছিলেন। কোনরূপ
বাহ্য ও আভ্যন্ত বিপর্যয় ক্ষুব্ধ বা বিচলিত করতে পারে নি, বলে তাঁর নাম অক্ষোভ্য।
তিনি বোধিসত্ত্ব লাভ করতে পারেন নি। তাঁর অবস্থান পদ্ম নামক একটি স্বর্গে (
ক্ষুদ্রতর সুখাবতী ব্যুহ) ইনি
অবস্থান করেন।
অক্ষোভ্য স্বয়ং অদশ'ন জ্ঞান
থেকে উৎপন্ন হয়ে বায়ু, শ্রোত্র ও শব্দের সৃষ্টি করছেন।
এঁর ধ্যানী বোধিসত্ত্ব,
বজ্রপাণি মানুষী বুদ্ধ কনকমুনি এবং শক্তি লোচনা।
এর বর্ণ নীল,
মুদ্রা ভূষ্পর্শ, কিরীট
বজ্র, আসন
বজ্রপর্সঙ্ক, স্থিতি পূর্বদিক্, বাহন
হস্তী বা হস্তিদ্বয়, স্কন্ধ বিজ্ঞান,
ঋতু শিশির, রূপ
কটু. বর্গ চ, কাল মধ্যাহ্ন এবং বীক্ষমন্ত্র
হু।
খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর প্রথম ভাগে রচিত
'প্রজ্ঞাপারমিতা-সূত্র'-এ অক্ষোভের প্রথম
উল্লেখ পাওয়া যায়। তার পর
'সদ্ধর্মপুণ্ডরীক' ও “সুখাবতী
ব্যূহে'র ক্ষুদ্রতর
সংস্করণে পূর্বদিক্স্থ 'অভিরিতি' নামক
স্বর্গের
অধীশ্বর হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
চীন, জাপান, নেপাল ও তিব্বত অক্ষোভ্য পূজিত হয়ে থাকেন। তবে হীনযান-
মতালম্বীদের ভিতরে অক্ষোভ্যের উপাসনার
প্রথা নাই।
সর্বপ্রথমে “অমিতায়স্-ছত্রে'র
ক্ষুদ্র সংঘে তিনি তথাগত
হিসেবে বর্ণিত
হয়েছে। এই স্তর ৩৮৪ থেকে ৪১৬
খ্রিষ্টাব্দের দিকে এই বর্ণনা চীন ভাষায় 'অনুদিত
হয়েছিল।
“অক্ষোভাস্য তথাগতস্য ব্যূহ' নামক
একটা সূত্রের জাপানী অনুবাদে এইরূপ
লিখিত আছে- যখন বৃদ্ধ শাক্যমুণি
গৃধ্রকট
শৈলে ১২৫০ জন ভিক্ষুর সাথে শ্বাবস্থান
করছিলেন। তখন তিনি সারিপুত্রের
কাছে
বোধিসত্ত্ব অক্ষোভ্যের ব্ররতপালনের কথা
ও যে লোকে তিনি বাস করেন তার অধীশ্বরের
কথা বর্ণনা করেছিলেন। শাক্যমুনি বলেন,
"যখন তথাগত কোমোকু (বিশালনেত্র বা
বিরূপাক্ষ) অভিরিতি স্বর্গের অধীশ্বর ছিলেন।
তখন একজন সন্ন্যাসী ভিক্ষু তার কাছে বোধিসত্ত্বের আচরিত
ব্রতপালন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
তার উত্তরে তিনি বলেন- এই ব্রতপালন অতি কঠোর, কারণ
বোধিসত্ত্ব হতে হলে মনকে অবিচলিত করতে হবে, কামক্রোধাদির দ্বারা বিচলিত হলে ব্রত
ভঙ্গ হবে। এরপর সেই ভিক্ষু ইন্দ্রিয়াদি জয় করে ক্রোধ, ঘৃণা প্রভৃতি বর্জন এবং ব্রত
পালন করে অভোক্ষ্য সংজ্ঞা লাভ করেন। এরপর বহু জন্ম পরে সেই অভিরিতি স্বর্গেই তথাগত
অক্ষোভ্যরূপে আবির্ভূত হলেন।
জাপানী বৌদ্ধগ্রন্থসমূহে, অক্ষোভ্যের
উৎপত্তি সম্বন্ধে ভিন্ন ভিন্ন মত
লক্ষ্য করা যায়। জাপানে
পূর্বদিকের অধিবাসীরা অধীশ্বর
হিসেবে 'ভৈষজ্যগুরু' নামক অপর এক বুদ্ধকে উপাসনা করতো।
এক সময় অক্ষোভ্য ও ভৈষজ্যগুরুকে অভিন্ন মনে করা হতো। পরবর্তী এঁরা দুটি পৃথক বুদ্ধ
হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। জাপানী কোনো কোনো গ্রন্থে
'বুদ্ধদীপঙ্কর' এবং ভবিষ্যদ্বুদ্ধ' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো
কোনো গ্রন্থে অক্ষোভ্য ছিলেন- বুদ্ধ মহাভিজ্ঞানাভিভূর ষোড়শ সন্তানের একজন হিসেবে
ছিলেন। প্রথমে জ্ঞানাকর বোধিসত্ত্ব হয়ে পড়ে অভিরিতি স্বর্গের বুদ্ধ হয়েছিলেন।
করণাপুগুরিকা সূত্রের
(২য়) জাপানী-সংস্করণে অক্ষোভ্যকে
রাজা অরনেমির
সহস্র পুত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই সূত্র থেকে জানা যায়- তিনি অমিতাভের পূর্বজন্মের
অবতার ছিলেন। এছাড়া জাপানী
ধর্মশাস্ত্রে অক্ষোভ্য বজ্রলোকে
এবং পুরদিকৃস্থ সূর্য বা চন্দ্ররূপ
চক্রের কেন্দ্রস্থলে 'অধিষ্ঠান করেন এবং সর্বদা বজ্রসত্ত্ব
সমন্বিত চার বোধিসত্ত্ব দ্বারা পরিবৃত থাকেন।
পঞ্চজ্ঞানের একটি (যথা
'চি') এঁর ধর্ম।
অদর্শন জ্ঞান এর সত্ত্বা। দানবীয় ইন্দ্রিয়-গ্রামকে বশীভূত
করে নির্মল চৈতন্য উদ্বুদ্ধ
করাই এর কাজ।
'পদ্ম-তন্যিগ' গ্রন্থে তিব্বতীয়
গ্রন্থে ধ্যানিবুদ্ধের তালিকায়
অক্ষোভ্যের নাম
যায় না। তবে তার পরিরতে বজ্রসত্ত্বের
নাম পাওয়া যায়। কোনো কোনো মতে বজ্রসত্ত্বই অক্ষোভ্যের
বোধিসত্ত্ব। ধ্যানিবুদ্ধের মাতদর্শীদের মতে- ধ্যানিবুদ্ধের
অক্ষোভ্যের ধ্যানিবোধিসত্ত্বের নাম বজ্রপাণি। যোগাচার মতবাদীদিগের মতে
বজ্রসত্ত্ব হলেন ষষ্ঠ ধ্যানিবুদ্ধ।
তিব্বত, চীন ও জাপানে অক্ষোভ্যের
উপাসনা হলেও ধ্যানিবদ্ধ বৈরোচন
বা অমিতাভের ন্যায় তিনি লোকপ্রিয় হন
নি। এই কারণে এসকল অঞ্চলে অক্ষোভ্যের মূর্তি কম
দেখা যায়।অন্যান্য ধ্যানিবুদ্ধের
চিত্রাদিতে অক্ষোভ্যকে পদ্মাসনে উপবিষ্ট
অবস্থায় দেখা যায়। এঁর উভয় পদতল দৃষ্টিগোচর হয়ে থাকে।
পদতলে
চক্রচিহ্ন ও মস্তকের সম্মুখভাগে উর্ণা-চিহ্ন
থাকে । এঁর বাম হাত
ধ্যানমুদ্রায়
কোলের উপর স্থাপিত এবং ডান হাত ভূমিস্পর্শ
মুদ্রায়
অঙ্গুলি ভূমি স্পর্শ করে আছে। কোনো
কোনো চিত্রে কোলে রাখা হাতের করতলে বজ্রচিহ্ন দেখা যায়।
তিব্বত ও নেপালে অক্ষোভ্যের রং নীল। জাপানি গ্রন্থে অক্ষোভ্যের রং নীল হিসেবে বর্ণনা
করা হলেও জাপানি অভোক্ষ্য চিত্রে এর গায়ের রঙ সুবর্ণ।
সাধনমালা, থেকে জানা
যায় অক্ষোভ্য থেকে বন দেবদেবীর উদ্ভব হইয়াছে।
অক্ষোভ্যের বর্ণ নীল,
তাই তাঁর থেকে উৎপন্ন অধিকাংশ দেবদেবীর বর্ণও
নীল। এই নীলবর্ণ দানবীয় ভাবের দ্যোতক। জম্ভল
ছাড়া সকল উৎপন্ন দেবদেবীর রয়েছে ত্রিনয়ন।
সকলেরই আকৃতি ভীষণ, মুখভাব
বিকৃত, জিহ্বা লোল, কণ্ঠে নরকপালমালা, পরিধানে ব্যাঘ্রচর্ম ও ভূষণ সর্প।
যে সকল দেবদেবী অক্ষোভ্য থেকে উৎপন্ন তাদের সকলেরই মুকুটে
ক্ষুদ্রাকৃতিরি অক্ষোভ্য-মু্তি পরিলক্ষিত হয়।
নিচে অক্ষোভ্য
থেকে উৎপন্ন দেবদেবীদের তালিকা
দেওয়া হলো-
- দেবতা
- চণ্ডরোষণ
- হেরুক
- বুদ্ধকপাল
- বজ্রডাক
- হয়গ্রীব
- যমারি/যমান্তক
- জম্ভল
- উচ্ছুষ্ম জম্ভল
- দ্বিভুজ সম্বর
- বাদিরাট মঞ্জু ঘোষ
- মঞ্জুশ্রী
- সিদ্ধৈকবীর
- আর্যনামসঙ্গিতি
- দেবী
- বজ্রতারা
- মহাচীনতারা
- জাঙ্গুলী
- একজটা
- বিদ্যুজ্জালাকরালী
- পর্ণশবরী
- প্রজ্ঞাপারমিতা
- বজ্রচর্চিকা
- মহাপ্রতিসরা
- মহামন্ত্রানুসারিণী
- মহাপ্রত্যঙ্গিরা
- ধ্বজাগ্রকেয়ুরা
- বসুধারা
- প্রজ্ঞালোক (বজ্রবরাহী)
- নৈরাত্মা
- উষ্ণীষবিজয়া