বেদ 
সংস্কৃত
(বেদ)>বাংলা
 বেদ
ইংরেজি:
Vedic 
literature, Veda 
।
হিন্দু ধর্মের আদি ধর্মগ্রন্থ। 
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে- ঈশ্বরের মুখনিঃসৃত বাণী। এই কারণে একে বলা হয় অপৌরুষেয়। 
বিদ শব্দের অর্থ জ্ঞান।
এই বিদ শব্দ থেকেই বেদ শব্দের উৎপত্তি।
হিন্দু ধর্ম মতে, 
বেদের বাণী 
ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রাপ্ত, 
তাই বেদের অপর 
নাম  শ্রুতি।
উল্লেখ্য, 
এখানে ঈশ্বর 
বলতে ব্রহ্মাকে বুঝানো হয়ে থাকে।
শ্রুতির ব্যাখ্যায় অনেকে মনে করেন যে-বেদের সূত্রগুলি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঋষির 
দ্বারা লিখিত হয়েছে।
এদেরকে বলা হয়- মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি।
এই ঋষিরা মানসনেত্রে মন্ত্রদর্শন করতেন এবং তা স্বরসংযোগে প্রকাশ করতেন।
ঋষি পরিবারের লোকেরা তা শুনে স্মরণ করে রাখতেন
বেদ রচনার যথাযথ তারিখ নিয়ে বিতর্ক আছে।
তবে অধিকাংশ গবেষক মনে করেন, 
 খ্রিষ্টপূর্ব 
১২০০-৮০০ অব্দের ভিতর বেদ রচিত হয়েছিল।
তবে বেদ গোড়া থেকেই গুরুপরস্পরায় শ্রুত হয়ে এসেছে। 
বিষয় হিসাবে দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত ভাগ দুটি হলো- 
   
মন্ত্র বা সংহিতা : আনুষ্ঠানিক ধর্মবিধি অনুসারে প্রার্থনা, স্তুতি, আশীর্বাদ 
ইত্যাদি থাকে।
   
ব্রাহ্মণ : মন্ত্রের সংখ্যা ও যাগযজ্ঞাদির বিবরণ নিয়ৈ প্রণীত গ্রন্থ। এর প্রধান 
আলোচ্য বিষয় হলো- ধর্মীয় আচরণবিধি এবং অর্থবাদ। অর্থবাদের আলোচনাকে বিষয় হিসাবে 
বিবেচনা করে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়- নিন্দা, প্রশংসা, পুরাকল্প ও পরকৃতি।
চতুর্বেদ ছাড়াও বেদাঙ্গ ও সূত্র বৈদিক সাহিত্যের অঙ্গীভূত অংশ।
বেদাঙ্গ সংখ্যা মোট ছয়টি।
এই ছয়টি বেদাঙ্গ হলো- শিক্ষা, 
ছন্দ,
ব্যাকরণ,
নিরুক্ত,
জ্যোতিষ 
ও শ্রুতি।  
ব্রাহ্মণের শেষাংশের নাম আরণ্যক। আর সংহিতা বা আরণ্যকের অংশ হিসাবে থাকে উপনিষদ। 
নিচে বিভাজনের ছক দেখানো হলো।
         
বেদ
            শাখা
                
ব্রাহ্মণ
                    
আরণ্যক
                        
উপনিষদ
                
সংহিতা
                    
উপনিষদ
সমগ্র 
বেদের অনেকাংশ হারিয়ে গেছে। তাই উপরের 
এই ছক অনুসারে বেদের অংশীভূত বিভিন্ন গ্রন্থের ক্রমসজ্জা দেখানো হলো।
বেদ (চারটি)
    ঋগ্বেদ
        ব্রাহ্মণ : ঐতরেয় 
                      
আরণ্যক : ঐতরেয়
                            
উপনিষদ : ঐতরেয় 
          ব্রাহ্মণ : কৌষীতকি বা 
শাঙ্খ্যায়ন 
                       
আরণ্যক : কৌষীতকি    
                            
উপনিষদ : কৌষীতকি
    সামবেদ
       শাখা : কৌষুন 
       শাখা : 
রাণায়ণীয়
       শাখা : জৈমিনীয়
            ব্রাহ্মণ : 
তাণ্ডা মহাব্রাহ্মণ বা পঞ্চবিংশ ব্রাহ্মণ
            ব্রাহ্মণ :  
ষড়বিংশ (শেষাংশ অদ্ভুত ব্রা্হ্মণ)
            ব্রাহ্মণ : 
মন্ত্র 
            ব্রাহ্মণ : 
ছান্দোগ্য
                    
উপনিষদ : ছান্দোগ্য
            ব্রাহ্মণ : 
তলবকার বা জৈমিনী
                      
উপনিষদ : কেন
        
    
যজুর্বেদ 
        শাখা : কৃষ্ণ
            ব্রাহ্মণ : 
তৈত্তরীয়
                
আরণ্যক : তৈত্তরীয়
                    
উপনিষদ : তৈত্তরীয়
        শাখা : পাওয়া যায় নাই
            ব্রাহ্মণ : 
পাওয়া যায় নাই
                
আরণ্যক : পাওয়া যায় নাই
                   
উপনিষদ : কঠ, শ্বেতাশ্বতর         
        শাখা : শুক্ল
            ব্রাহ্মণ : 
শতপথ
                
আরণ্যক : শতপথ
                    
উপনিষদ : বৃহদারণ্যক
           সংহিতা : ঈষ
                    
উপনিষদ : ঈশ
     অর্থবর্বেদ 
        শাখা : নাম পাওয়া যায় না
                
ব্রাহ্মণ : গোপথ
         শাখা : পৈপ্পলাদ
                   
উপনিষদ : প্রশ্ন
          শাখা : নাম পাওয়া যায় নাই
                    
উপনিষদ : মুণ্ডক, মাণ্ডুক্য
মণ্ডুক 
উপনিষদের  মতে- বিদ্যা দুই ভাগে বিভক্ত। ভাগ দুটি হলো পরা ও অপরা। যার দ্বারা 
অক্ষর ব্রহ্মকে জানা যায় তাকে বলা হয় পরা বিদ্যা এ কারণেই পরাই হলো- শ্রেষ্ঠ 
বিদ্যা। পক্ষান্তরে  অপরা হলো জাগতিক জ্ঞান। এই বিচারে বেদ অপরা বিদ্যা। 
[প্রথম খণ্ডের ৪ ও ৫ (উপনিষদ হরফ প্রকাশনী, ১৮ই ফেব্রুয়ারি ২০০০)] 
যদি 
উপনিষদ বেদের একটি ভাগ হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে, তাহলে  
ব্রহ্মজ্ঞান
প্রদায়ী উপনিষদকে আর অপরা বলা যায় না। পরা বিদ্যা মূলত ধ্যানের জগত, পাঠের জগত নয়। 
গ্রন্থ হিসাবে উপনিষদ অপরা। কারণ উপনিষদ পাঠ করা জাগতিক কর্ম, ধ্যানের মধ্য মনের 
চোখ দিয়ে ব্রহ্মকে উপলব্ধি করতে হয়। এ বিদ্যা জাগতিক ভাষায় ধারণা দেওয়া যায় বটে- 
যথাযথভাবে প্রকাশ করা যায় না। এই কারণেই হ্য়তো সমগ্র বেদকেই অপরা বলা হয়।
ব্রাহ্মণ 
তিন ভাগে বিভক্ত। এই ভাগগুলো হলো- শুদ্ধব্রাহ্মণ : বেদের ব্যাখ্যা ও যজ্ঞের সাথে মন্ত্রের সম্পর্ক ও আচরণীয় বিধি 
সম্বলিত গদ্য রচনা।