হিন্দু পৌরাণিক
কাহিনি মতে, হিন্দু পৌরাণিক
চরিত্র বিশেষ।
ইনি মৎস্যদেশের রাজা ছিলেন বলে, মৎস্যরাজ নামে পরিচিত ছিলেন।
এঁর স্ত্রীর নাম ছিল সুদেষ্ণা,
ভাইয়ের নাম ছিল
শতানীক এবং শ্যালকের নাম ছিল কীচক।
সুদেষ্ণা গর্ভে তিন পুত্র ও এক কন্যা জন্মগ্রহণ করে।
পুত্রদের নাম ছিল- শঙ্খ,
শ্বেত ও
ভূমিঞ্জয় (উত্তর) এবং কন্যার নাম ছিল উত্তরা।
ইনি কুবেরের মত
ধনী ছিলেন।
এঁর সম্পদের ভিতর উল্লেখযোগ্য ছিল তাঁর গবাদি পশু।
পাণ্ডবেরা অজ্ঞাতবাসের সময় এঁর রাজদরবারে ছদ্মনামে ও ছদ্মবেশে আশ্রয় নেন।
এই
সময়ে পাণ্ডবরা যে ছদ্মনামে ও ছদ্মবেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। যে সকল ছদ্মবেশে এবং
ছদ্মনামে পাণ্ডবরা তাঁর দরবারে ছিলেন, তা হলো–
যুধিষ্ঠির :
ছদ্মনাম কঙ্ক,
ছদ্মবেশ-
দ্যুতনিপুণ সভাসদ।
ভীম : ছদ্মনাম
বল্লভ,
ছদ্মবেশ- পাচক।
অর্জুন :
ছদ্মনাম বৃহন্নলা,
ছদ্মবেশ-
বিরাটরাজ কন্যা উত্তরার সঙ্গীতশিক্ষক।
নকুল : ছদ্মনাম
তন্তিপাল,
ছদ্মবেশ-
গোশালার অধ্যক্ষ।
সহদেব : ছদ্মনাম
গ্রন্থিক,
ছদ্মবেশ-
অশ্বশালার অধ্যক্ষ।
দ্রৌপদী :
ছদ্মনাম সৌরন্ধ্রী,
ছদ্মবেশ- রানী
সুদেষ্ণার পরিচারিকা।
কীচক দ্রৌপদীকে কামনা করে ব্যর্থ হয়ে প্রকাশ্যে দ্রৌপদীকে অপমান করেন। এর প্রতিশোধ হিসাবে ভীম তাঁকে হত্যা করেন। একবার বিরাটরাজ তাঁর এই শ্যালক কীচকের সহায়তায় ত্রিগর্তরাজ সুশর্মাকে পরাজিত করে তাঁর রাজ্য অধিকার করেছিলেন। রাজ্যভ্রষ্ট হয়ে সুশর্মা দুর্যোধনের আশ্রয় নেন। কীচকের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে, সুশর্মা দুর্যোধনের সৈন্যের সাহায্যে বিরাটরাজ্যের দক্ষিণাংশ আক্রমণ করেন। যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বিরাট সুশর্মা'র হাতে পরাজিত ও বন্দী হন। এরপর যুধিষ্ঠিরের আদেশে ভীম সুশর্মা'র বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন। যুদ্ধে ভীম সুশর্মাকে পরাজিত করে বন্দী করে নিয়ে আসেন এবং সেই সাথে বিরাটকে উদ্ধার করেন। এই সময় দুর্যোধন, কর্ণ, ভীষ্ম, দ্রোণ প্রমুখের নেতৃত্বে বিরাটরাজ্যের উত্তরাংশ আক্রমণ করে সমস্ত গো-সম্পদ অধিকার করেন। এই আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য বিরাটপুত্র উত্তর, বৃহন্নলারূপী অর্জুনকে রথের সারথি করে যুদ্ধযাত্রা করেন। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে বিশাল কৌরববাহিনী দেখে উত্তর পলায়নের চেষ্টা করলে- অর্জুন তাঁকে থামিয়ে উত্তরাকে সারথি বানিয়ে নিজেই যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। অর্জুন এই যুদ্ধে কৌরববাহিনীকে পরাজিত করে গো-সম্পদ উদ্ধার করেন। যুদ্ধজয়ের সংবাদ শুনে বিরাট তাঁর পুত্রের বিষয়ে অহঙ্কার প্রকাশ করলে- যুধিষ্ঠির বলেন যে, সারথি বৃহন্নলা'র (অর্জুন) জন্যই যুদ্ধজয় হয়েছে। যুধিষ্ঠিরের এই কথা শুনে বিরাট অহঙ্কার করে বলেন যে- নপুংশক ভীষ্ম ও দ্রোণের মত বীরকে পরাজিত করতে পারে না। এই সময় বিরাট তাঁর হাতের পাশ দ্বারা যুধিষ্ঠিরের মুখে আঘাত করে রক্তপাত ঘটান। অর্জুন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে,- বিনাযুদ্ধে যুধিষ্ঠিরের কেউ রক্তপাত ঘটালে- তিনি তাঁকে হত্যা করবেন। এই জন্য যুধিষ্ঠির এই ঘটনা অর্জুনের কাছ থেকে গোপন করেন। পরে উত্তরের কাছে সকল বিষয় অবগত হয়ে বিরাট যুধিষ্ঠিরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। অজ্ঞাতবাসকালের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে, পাণ্ডবরা বিরাটের কাছে আত্মপ্রকাশ করেন। বিরাট তাঁর কন্যা উত্তরার সাথে অর্জুনের বিবাহের প্রস্তাব দিলে- নিজ কন্যাস্থানীয়া বিবেচনা করে অর্জুন তাঁর পুত্র অভিমন্যুর সাথে উত্তরার বিবাহ দেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ইনি পাণ্ডবদের পক্ষে যোগ দেন। যুদ্ধের পঞ্চদশ দিনে ইনি দ্রোণাচার্যের হাতে নিহত হন।