দীর্ঘতমা
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে
উতথ্য ঋষির ঔরসে মমতার গর্ভে ইনি জন্মগ্রহণ করেনমমতা গর্ভবতী থাকাকালে  তাঁর দেবর দেবপুরোহিত বৃহস্পতি তাঁর সাথে মিলিত হতে গেলে, মমতা জানান যে তাঁর স্বামী উতথ্যের দ্বারা তিনি পূর্বে গর্ভবতী হয়েছেনসে কারণে, বৃহস্পতির কাছে তিনি অগম্য এরপরও বৃহস্পতি জোর করে মমতার সাথে মিলিত হন এই সময় মমতার গর্ভস্থ শিশু বৃহস্পতিকে সঙ্গম থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেনবৃহস্পতি সে নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে মমতার গর্ভে বীর্যপাত করলে, গর্ভস্থ শিশু পা দিয়ে উক্ত বীর্য বাইরে ঠেলে ফেলে দেন এতে বৃহস্পতি ক্রুদ্ধ হয়ে এই শিশুকে অভিশাপ দিয়ে বলেন যে,  তুমি সারাজীবন অন্ধ হয়ে থাকবে। এই অভিশাপের জন্য এই ঋষির নাম হয় দীর্ঘতমা।

মাতৃগর্ভে থাকার সময়ই বেদজ্ঞ হয়ে উঠেছিলেন। ইনি সুরভী-কামধেনুর কাছ থেকে গোবিদ্যা অর্জন করেনপ্রদ্বেষী নামক এক কন্যার সাথে এঁর বিবাহ হয়। দীর্ঘতমা অন্ধ ছিলেন বলে, প্রদ্বেষী তাঁকে ভরণ-পোষণ করতেন। কিন্তু গোবিদ্যা জানার কারণে এই বিষয়ে বিশেষ মনোযোগী হয়ে উঠেন। ফলে, আশ্রমের অন্যান্য ঋষিরা তাঁকে একঘরে করে। ফলে, তিনি সংসারের জন্য কোনো অর্থই প্রদান করতে পারতেন না। এই কারণে তাঁর স্ত্রী প্রদ্বেষী তাঁকে কটু কথা বলে তাঁকে পরিত্যাগ করার কথা বলে। দীর্ঘতমা তাঁর স্ত্রীকে বলেন যে, তাঁকে ক্ষত্রিয়কূলে  জন্মগ্রহণের অভিশাপ দেন। এতে প্রদ্বেষী বিচলিত না হয়ে বরং অহঙ্কার প্রকাশ করলে, দীর্ঘতমা পুনরায় অভিশাপ দিয়ে বলেন'আমি অদ্যাবধি পৃথিবীতে এই নিয়ম প্রতিষ্ঠিত করলাম যে, স্ত্রীজাতিকে যাবজ্জীবন একমাত্র পতির অধীন হইয়া কালযাপন করিতে হইবে। পতি জীবিত থাকিতে অথবা পঞ্চপ্রাপ্ত হইলে, নারী যদি পুরুষান্তর ভজনা করেন, তাহা হইলে তিনি আবশ্যই পতিত হইবেন, সন্দেহ নাই। আর পতিবিহীনা নারীগণের সর্ব্বপ্রকার সমৃদ্ধি থাকিলেও তাহা ভোগ করিতে পারিবে না; বিষয়ভোগ করিলে অকীর্ত্তি ও পরিবাদের সীমা থাকিবে না।'

প্রদ্বেষী এতে ক্ষিপ্ত হয়ে, তাঁর পুত্রদের নিয়ে ভেলার সাথে বেঁধে গঙ্গানদীতে ভাসিয়ে দেন। ভেলায় ভাসতে ভাসতে মহারাজ বলির রাজত্বে প্রবেশ করে। গঙ্গায় স্নান করতে এসে বলিরাজ দীর্ঘতমাকে দেখতে পেয়ে, তাঁকে কূলে তুলে আনেন। পরে তাঁর কাছে তাঁর জীবনবৃত্তান্ত শুনে প্রাসাদে নিয়ে আসেনবলিরাজ দীর্ঘকাল বিবাহিত জীবন অতিবাহিত করার পরও কোনো সন্তান লাভ করতে পারেন নি। তাই তিনি মুনিকে অনুরোধ করেন যে, সে যেন তাঁর স্ত্রী সুদেষ্ণার গর্ভে সন্তান উৎপাদন করে। মুনি এতে রাজি হলে, রাজা তাঁকে সুদেষ্ণার কাছে পাঠিয়ে দেন। দীর্ঘতমাকে অন্ধ ও বৃদ্ধ জ্ঞান করে, সুদেষ্ণা তাঁর এক শূদ্রা দাসীকে, তাঁর কাছে পাঠান দীর্ঘতমা এই দাসীর গর্ভে কাক্ষীবৎ-সহ মোট এগারটি সন্তানের জন্ম দেন। পরে এই সংবাদ জ্ঞাত হয়ে বলিরাজ, পুনরায় সুদেষ্ণাকে দীর্ঘতমার কাছে পাঠানএবার সুদেষ্ণা দীর্ঘতমার কাছে যান এবং পাঁচটি পুত্র সন্তান লাভ করেনএই পাঁচটি সন্তান হলেন অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, পুণ্ড্র ও সুহ্ম। উল্লেখ্য দীর্ঘতমার ভবিষ্যৎবাণী অনুসারে এই সন্তানদের দ্বারা শাসিত দেশগুলো তাঁদের নামে চিহ্নিত হয়। পাঁচটি নাম হলো অঙ্গদেশ, বঙ্গদেশ, কলিঙ্গদেশ, পুণ্ড্রদেশ ও সুহ্মদেশ।


সূত্র:
মহভারত।
চতুরধিকশততম অধ্যায়। ক্ষেৎত্রজ পুৎত্রোৎপাদনের বিবিধ দৃষ্টান্ত। দীর্ঘতমা ঋষির জন্মবৃত্তান্ত। স্ত্রীজাতির প্রতি দীর্ঘতমার শাপ। অঙ্গরাজাদির জন্ম-বর্ণন