ধ্রুব
হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র। এঁর পিতার নাম
উত্তানপাদ। উত্তানপাদের দুই স্ত্রীর মধ্যে প্রথমা স্ত্রী সুনীতির গর্ভে ধ্রুব আর
দ্বিতীয়া স্ত্রী সুরুচির গর্ভে উত্তম নামক পুত্র জন্ম হয়।
রাজা তাঁর দুই স্ত্রীর ভিতর সুরুচিকে সুনীতি অপেক্ষা বেশী ভাল বাসতেন।
সুরুচির প্ররোচনায় তিনি সুনীতির প্রতি অন্যায় ব্যবহার করে তাঁকে বনবাস দেন।
একদিন রাজা মৃগয়া করতে গিয়ে ঘটনাক্রমে পথ ভুলে সুনীতির নির্জন কুটীরে উপস্থিত হন
এবং সেখানে সুনীতির সাথে মিলিত হলে ধ্রুব জন্মগ্রহণ করেন।
একদিন তাঁর
সৎভাই উত্তম পিতার কোলে বসে ছিলেন।
সেই সময়ে ধ্রুব রাজসভায় উপস্থিত হয়ে পিতার কোলে বসার ইচ্ছা করলে,
বিমাতা
সুরুচি ধ্রুবকে কটুবাক্যে অপমানিত করেন।
ধ্রুব তাঁর মার কাছে গিয়ে এই অপমানের কথা বর্ণনা করলে,
সুনীতি
বললেন যে,
একমাত্র হরিই
দুঃখীদের দুঃখমোচন করতে পারেন।
এরপর ধ্রুব হরির চিন্তা করা শুরু করেন।
একদিন গভীর রাতে তিনি মাকে ত্যাগ করে, হরির সন্ধানে বনে চলে যান এবং হরির সন্ধানে
বনের ভিতর ঘুরতে থাকেন।
হরির সন্ধানে ইনি পূর্বদিকে যেতে যেতে সাত জন মুনিকে দেখতে পান।
তাঁদের কাছে ধ্রুব বললেন,
আমি অর্থ বা
রাজত্ব প্রার্থনা করি না।
আমি এমন স্থান প্রার্থনা করি যা কেউ উপভোগ করে নি।
ঋষিরা এর উত্তরে ধ্রুবকে বিষ্ণুর আরাধনা করতে বলেন।
এরপর ধ্রুব বিষ্ণুর আরাধনায় গভীরভাবে মনোনিবেশ করেন।
এই সময় ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবতারা এই তপস্যায় ভীত হয়ে,
নানা
উপায়ে ধ্রুবের তপস্যা ভাঙার চেষ্টা করে বিফল হনা।
অবশেষে তাঁরা বিষ্ণুরই শরণাপন্ন হলেন।
বিষ্ণু দেবতাদের আশ্বাস দিয়ে ধ্রুবের কাছে এসে বললেন,
আমিই
হরি,
তোমার তপস্যায়
আমি প্রীত হয়েছি,
তুমি বর গ্রহণ
কর।
ধ্রুব বললেন,
আমি যেন আপনার
স্তব করতে পারি,
এই বর আমাকে
দান করুন।
বিষ্ণু বললেন তুমি পূর্বে এমন একটি স্থান প্রার্থনা করেছিলে যা কেউ উপভোগ করে নি।
এরপর বিষ্ণু ধ্রুবর পরিচয় দিয়ে বলেন,
তুমি আগে এক
ব্রাহ্মণপুত্র ছিলে।
তুমি এক রাজপুত্রের ঐশ্বর্য দেখে রাজপুত্র হতে চেয়েছিলে।
তাই তুমি রাজা উত্তানপাদের গৃহে জন্মগ্রহণ করেছ এবং আমাকে আরাধনা করে এখন তুমি
মুক্তি পেয়েছ।
এরপর বিষ্ণু বললেন যে, তুমি সকল তারা ও গ্রহদের উপরে,
তাদের
আশ্রয়স্বরূপ হয়ে থাকবে।
এই স্থানের নাম হবে ধ্রুবলোক।
এরপর ধ্রুব পিতার রাজ্য লাভ করেন।
তিনি
শিশুমারের কন্যা
ভ্রমিকে
বিবাহ করেন। এঁদের পুত্রের নাম হলো
কল্প ও
বৎসর।
যথাসময়ে ধ্রুব দেহত্যাগ করলে বিষ্ণু প্রদত্ত ধ্রুবলোকে প্রস্থান করে নক্ষত্ররূপে
প্রতিষ্ঠিত হন।