গান্ধারী
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে, এই নামে দুটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র পাওয়া যায়। যেমন–
১. ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের গান্ধার রাজ্যের রাজা সুবলের কন্যা। এঁর প্রকৃত নাম জানা যায় না। ইনি পিতার নামে- সুবলকন্যা এবং তাঁর জন্মস্থান গান্ধারের নামানুসারে ইনি গান্ধারী নামে পরিচিত ছিলেন। মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষায় তাঁর মন পরিপূর্ণ ছিল। ইনি কুমারী অবস্থায় মহাদেবের কাছে শতপুত্র লাভের বর চেয়েছিলেন।
ভীষ্ম এঁর সাথে ধৃতরাষ্ট্রের বিবাহের জন্য গান্ধাররাজের কাছে প্রস্তাব পাঠালে, গান্ধাররাজ তাঁর পুত্র শকুনি'র সাথে সালঙ্কৃতা অবস্থায় গান্ধারীকে হস্তিনাপুরীতে পাঠান। এবং এখানেই তাঁর সাথে ধৃতরাষ্ট্রের বিবাহ হয়। স্বামীর অন্ধত্বের কারণে গান্ধারী চোখে সব সময় এক খণ্ড কাপড় বেঁধে রাখতেন। বেদব্যাস একদিন ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হয়ে হস্তিনাপুরীতে এলে, গান্ধারী যথোচিত সেবা যত্ন করে ঋষিকে তুষ্ট করেন। পরিতুষ্ট বেদব্যাস তাঁকে বর দিতে ইচ্ছা করলে, ইনি তাঁর কাছে শতপুত্র লাভের বর প্রার্থনা করে তা লাভ করেন।
গর্ভবতী হওয়ার পর দুই বৎসরেও তাঁর সন্তান প্রসব না হওয়ায় এবং পাণ্ডুর প্রথম পুত্র যুধিষ্ঠিরের জন্ম হওয়ায়, ইনি ঈর্ষায় নিজের উদরে আঘাত করতে থাকেন। ফলে ইনি একটি লৌহকঠিন মাংশপিণ্ড প্রসব করেন। ইনি ক্ষোভে দুঃখে এই মাংসপিণ্ড ফেলে দিতে উদ্যোগী হলে, ব্যাসদেব সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁকে এই কর্ম থেকে নিবৃত করেন। পরে ব্যাসবেদের পরামর্শে ইনি, একশতটি ঘৃতপূর্ণ কুণ্ড স্থাপন করে, শীতল জলে এই মাংস খণ্ডটি ধৌত করেন। ফলে এই মাংস খণ্ডটি একশত এক ভাগে বিভক্ত হয়। পরে আরো একটি ঘৃতকুণ্ড স্থাপন করে এই ১০১টি খণ্ড রেখে দিলেন। এক বত্সর পর এই মাংস পিণ্ড হতে প্রথমে দুর্যোধন ও এক বত্সর এক মাসের মধ্যে অন্যান্য ১০০টি পুত্র ও একটি কন্যার জন্ম হয়।
ইনি অত্যন্ত ধর্মশীলা ছিলেন। প্রকাশ্য সভার মধ্যে দুর্যোধন দ্রৌপদীকে অপমান করলে দুর্যোধনকে পরিত্যাগ করার জন্য ইনি ধৃতরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেন। অন্যায় আচরণের জন্য ইনি দুর্যোধন ও দুঃশাসনকে কখনও ক্ষমা করেন নি। ইনি পণ-মুক্ত পাণ্ডবদের অর্ধরাজ্য দান করে সন্ধিস্থাপনের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে আগে দুর্যোধন এঁর কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনা করতে গেলে- ইনি বলেন যে- যেখানে ধর্ম সেখানেই জয়। যুদ্ধের শেষে মাতৃস্নেহে আকুল হয়ে তাঁর পুত্রদের জন্য ক্রন্দন করেছেন এবং পাণ্ডবদের অভিশাপ দিতে অগ্রসর হয়েছেন। পরে ব্যাসদেবের অনুরোধে ইনি তাঁর ক্রোধ দমন করেন। গান্ধারী সক্রোধে যুধিষ্ঠিরের কাছে এলে, যুধিষ্ঠির তাঁর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করেন। এই সময় যুধিষ্ঠিরের শরীর কাপড়ে ঢাকা ছিল। গান্ধারী ক্রোধের সাথে যুধিষ্ঠিরের দিকে তাকালে ইনি শুধু যুধিষ্ঠিরের পায়ের আঙুলের নখ দেখতে পান। গান্ধারীর তীব্র দৃষ্টিতে যুধিষ্ঠিরের পায়ের নখ বিকৃত হয়ে যায়। ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কৃষ্ণ যুদ্ধ থামানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করে নি বলে ইনি কৃষ্ণকে অভিশাপ দেন। এই অভিশাপের ফলে বনের মধ্যে কৃষ্ণ নিকৃষ্টভাবে নিহত হন।
পাণ্ডবদের রাজ্যলাভের পর পনের বত্সর ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারী পাণ্ডবদের আশ্রয়ে ছিলেন। এরপর এঁরা বাণপ্রস্থ অবলম্বন করে গঙ্গাতীরে রাজর্ষি শতযূপের আশ্রমে যান। এখানে আশ্রম নির্মাণ করে অন্যান্য সকলের সাথে বসবাস করতে থাকেন। বনবাসকালে ইনি শুধুমাত্র জলপান করে তপস্যা করতেন। বাণপ্রস্থের তৃতীয় বত্সরে ইনি সবার সাথে অরণ্যে প্রবেশ করেন। উক্ত বনে দাবানলের সৃষ্টি হলে ধৃতরাষ্ট্র, কুন্তী সহ ইনি মৃত্যুবরণ করেন।
২. ইনি ছিলেন ভরতবংশীয় অজমীঢ়ের স্ত্রী।