গঙ্গা, পৌরাণিক নদী
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে- দেবী বিশেষ।
নারদের অনুরোধে
মহাদেব গান শুনে বিষ্ণু আংশিক দ্রবীভূত হলে,
ব্রহ্মা তা তাঁর কমণ্ডলুতে ধারণ করেন।
বিষ্ণুর এই দ্রবীভূত অংশই গঙ্গা নামে খ্যাত হয়।
এই কারণে গঙ্গার অপর নাম অঙ্ঘ্রিজা।
ব্রহ্মবৈবর্ত
পুরাণের মতে, বিষ্ণুর তিনটি স্ত্রী ছিলেন।
এঁরা হলেন,
লক্ষ্মী,
সরস্বতী ও গঙ্গা।
এক সময় বিষ্ণু গঙ্গার প্রতি বিশেষ আকৃষ্ট হয়ে পড়লে,
সরস্বতী তা সহ্য করতে না পেরে— গঙ্গাকে নদীরূপে মর্তে নিক্ষিপ্ত হওয়ার অভিশাপ দেন।
গঙ্গাও সরস্বতীকে একই অভিশাপ দিলে—
উভয়ই নদীরূপে মর্তে পতিত হন।
গঙ্গার মর্তে আসার পিছনে অপর একটি কাহিনী রয়েছে।
[ব্রহ্মবৈবর্ত্ত, প্রকৃতি খণ্ড, ষষ্ঠ অধ্যায়]
অযোধ্যার সগর রাজার অশ্বমেধ যজ্ঞের অশ্ব উদ্ধার করতে গিয়ে, তাঁর ষাট হাজার পুত্র কপিল মুনির রোষে ভষ্মীভূত হলে, সগরের পৌত্র অংশুমান এই অশ্বকে উদ্ধার করেন এবং ভষ্মীভূত সগর-পুত্রদের উদ্ধারের উপায় জেনে আসেন। উপায়টি হলো- যদি স্বর্গের গঙ্গানদীকে পৃথিবীতে এনে- এই ভষ্মের উপর দিয়ে প্রবাহিত করা যায় তবে এই পুত্ররা জীবিত হয়ে উঠবেন। পরে ভগীরথ কঠোর তপস্যার দ্বারা ব্রহ্মাকে সন্তুষ্ট করে গঙ্গাকে পৃথিবীতে আনার অনুমতি পান। কিন্তু গঙ্গার অবতরণকালে পৃথিবী ধ্বংস হতে পারে, -এই আশংকায় গঙ্গা ভগীরথের কাছে একটি অবলম্বন প্রার্থনা করলেন। ভগীরথ উপযুক্ত অবলম্বনের জন্য মহাদেবকে তপস্যা করেন। ভগীরথের তপস্যায় মহাদেবকে সন্তুষ্ট হয়ে, তিনি গঙ্গার স্রোতধারাকে ধারণ করার জন্য তাঁর জটা বিছিয়ে দেন। এরপর গঙ্গা ব্রহ্মার আদেশে মহাদেবের জটা অবলম্বন করে পৃথিবীতে নেমে আসেন। মহাদেব গঙ্গাকে বিন্দু সরোবরে ত্যাগ করলে গঙ্গা- পশ্চিমে হ্লাদিনী, পাবনী, নলিনী- পূর্বে সুচক্ষু, সীতা, সিন্ধু ও ভগীরথের পশ্চাতে এক স্রোত হিসাবে প্রবাহিত হন।
গঙ্গা জহ্নু মুনিকে পতি হিসাবে পাবার জন্য ব্যাকুল হলে- জহ্নু তা প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে ক্ষুব্ধ গঙ্গা তাঁর গতিপথে জহ্নুমুনির আশ্রম ও যজ্ঞের উপকরণাদি ভাসিয়ে নিয়ে যান। এর প্রতিশোধ হিসাবে জহ্নু গঙ্গার সমস্ত জল পান করে ফেলেন। পরে ভগীরথ ও অন্যান্য দেবতারা তপস্যার দ্বারা জহ্নু মুনিকে সন্তুষ্ট করলে, ইনি কান দিয়ে গঙ্গাকে মুক্ত করেন। জহ্নু গঙ্গার প্রাণদান করেন বলে, গঙ্গা জহ্নুর কন্যাতুল্যা হয়ে পড়েন। সেই থেকে গঙ্গার অপর নাম হয় জাহ্নবী।
এরপর ভগীরথের অনুগমন করে গঙ্গা পাতালে প্রবেশ করেন। উল্লেখ্য গঙ্গার যে ধারা পাতালে প্রবেশ করেছে, সেই ধারার নাম ভোগবতী। সেখানে সগর রাজার পুত্রদের ভষ্মের উপর দিয়ে প্রবাহিত হলে- পুত্ররা জীবিত হয়ে ওঠেন। ব্রহ্মার বরে গঙ্গা ভগীরথের জ্যেষ্ঠা দুহিতা হন। সে কারণে এঁর নাম গঙ্গার অপর নাম হয় ভাগীরথী।একবার বশিষ্ঠ মুনির অভিশাপে বসুগণকে মানবরূপে জন্মগ্রহণ করতে হয়। গঙ্গা প্রথমে প্রতীপের সাথে মিলিত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে, প্রতীপের ডান উরুতে উপবেশন করেছিলেন। প্রতীপ পুত্রবধূজ্ঞানে উক্ত প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে, তাঁর পুত্র শান্তনুর সাথে বিবাহের প্রস্তাব দেন। গঙ্গা এই প্রস্তাবে সম্মত হয়ে অপেক্ষা করেন। পরে শান্তনু রাজা হলে, গঙ্গা অপূর্ব নারী বেশে শান্তনু রাজার কাছে আসেন। শান্তনু গঙ্গাকে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হলে ইনি শর্তাধীনে তাঁকে বিবাহ করেন। শান্তনুর ঔরসে প্রথমে তাঁর সাতটি পুত্র হয়, যারা ছিলেন বসুগণ। পরে ইনি মহাভারতের প্রখ্যাত বীর ভীষ্মকে প্রসব করেন। ইনি ভীষ্মকে ৩৬ বৎসর ধরে সর্ববিদ্যায় পারদর্শী করে তোলেন এবং তাঁর স্বামী শান্তনুর কাছে ফিরিয়ে দেন।