কুমারী পূজা
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে এক
প্রকার পূজা।
হিন্দু তন্ত্রশাস্ত্রমতে ষোলবৎসরের কম বয়সী এমন কন্যা, যার
আদ্য ঋতুস্রাব হয় নাই এবং পুরুষ সংসর্গে যোনি বিদীর্ণ হয় নাই। এমন কন্যাকে দুর্গার
দেবীর প্রতীকে পূজা করা হয়। এছাড়া কালীপূজা, জগদ্ধাত্রীপূজা এবং অন্নপূর্ণা পূজা
উপলক্ষে এবং কামাখ্যাদি শক্তিক্ষেত্রেও কুমারী পূজার প্রচলন রয়েছে।
পৌরাণিক কাহিনি অনুসরণে কুমারী পূজার উদ্ভব হয় কোলাসুরকে হত্যার মধ্য দিয়ে।
উল্লেখ্য, কোলাসুর নামক অসুর এক সময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করে নেয়। ফলে বিপন্ন
দেবরা মহাকালীর শরণাপন্ন হন। দেবতাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী মানবকন্যা রূপে
জন্মগ্রহণ করেন কুমারী অবস্থায় কোলাসুরকে হত্যা করেন। এই সূত্রে কুমারী পূজার
প্রচলন হয়। বাংলাদেশে কুমারী পূজার প্রচলনের প্রমাণ পাওয়া যায় কুমারীপূজাপ্রয়োগ
নামক গ্রন্থের পুথি থেকে (বাংলা একাডেমী সংগ্রহ- ১৫৯, লিপিকাল ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দ)।
বর্তমানে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, সিলেট, হবিগঞ্জ ও দিনাজপুর জেলাশহরে
প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী পূজার প্রচলন আছে। প্রতিবছর দুর্গাদেবীর
মহাষ্টমী পূজাশেষে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। মতান্তরে নবমী পূজার দিনও এ পূজা
অনুষ্ঠিত হতে পারে।
হিন্দু শাস্ত্রমতে দেবীজ্ঞানে যে-কোন কুমারীই পূজনীয়।
এর ভিতরে অস্পৃশ্য বংশজাত কন্যা থেকে, বেশ্যাকুলজাত কুমারীকেও পূজার যোগ্যা
বিবেচনা করা হয়। তবে সাধারণত ব্রাহ্মণ কুমারী কন্যার পূজাই সর্বত্র
প্রচলিত।
বয়সের ক্রমানুসারে
পূজাকালে এই সকল কুমারীদের বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। যেমন—
এক বছরের কন্যা — সন্ধ্যা
দুই বছরের কন্যা —
সরস্বতী
তিন বছরের কন্যা —
ত্রিধামূর্তি
চার বছরের কন্যা —
কালিকা
পাঁচ বছরের কন্যা — সুভগা
ছয়
বছরের কন্যা — উমা
সাত বছরের কন্যা —
মালিনী
আট বছরের কন্যা — কুষ্ঠিকা
নয়
বছরের কন্যা — কালসন্দর্ভা
দশ বছরের কন্যা —
অপরাজিতা
এগারো বছরের কন্যা —
রূদ্রাণী
বারো বছরের কন্যা — ভৈরবী
তেরো বছরের কন্যা — মহালপ্তী
চৌদ্দ বছরের কন্যা —
পীঠনায়িকা
পনেরো বছরের কন্যা —
ক্ষেত্রজ্ঞা
ষোলো বছরের কন্যা — অন্নদা বা
অম্বিকা
শ্রীরামকৃষ্ণের
মতে— সব স্ত্রীলোক ভগবতীর
এক একটি রূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশি প্রকাশ। দুর্গাপূজার অষ্টমী বা
নবমীতে সাধারণ ৫ থেকে ৭ বছরের একটি কুমারীকে প্রতিমার পাশে বসিয়ে পূজা করা হয়।
চণ্ডীতে বলা হয়েছে—
যা দেবী
সর্বভূতেষু
মাতৃরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্য মধ্যে মায়ের রূপ
হিন্দু ধর্মে বলা হয়- কুমারী
প্রতীকে আমাদের মাতৃরূপে অবস্থিত। সর্বব্যাপী ঈশ্বরেরই মাতৃভাবে আরাধনা করার জন্য
এই পূজা করা হয়। আবার কুমারী পূজার মাধ্যমে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ নিজেকেই
শ্রদ্ধা জানায়।