পুরাণ
[পুরাণ, অভিধান]
সনাতন হিন্দু ধর্মের পৌরাণিক কাহিনিভিত্তিক গ্রন্থ।

পুরাণ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো- প্রাচীন। কিন্তু সনাতন হিন্দু ধর্মের বিশেষ কিছু প্রাচীন গ্রন্থকে পুরাণ নামে অভিহিত করা হয়।  কোনো কোনো গ্রন্থে পুরাণকে ইতিহাস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পুরাণ ও ইতিহাস উভয়ই বিগত দিনের কাহিনি। তবে ইতিহাস প্রামাণ্য বিষয়কে বর্ণনা করে। পুরাণের কাহিনি প্রামাণ্য-বিষয় মূখ্য নয়। এতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাস্তবতার আভাষ পাওয়া গেলেও তা মূখ্য বিচার্য বিষয় হিসেবে মান্য করা হয় না। এ কথায় পুরাণ হলো- ধর্ম-বিশ্বাসের ভিত্তিতে রচিত রূপকথার মতো।

সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রাচীন গ্রন্থ হিসেবে বেদ, উপনিষদ, মহাকাব্য ইত্যাদি থেকে পৃথকভাবে পুরাণকে চিহ্নিত করা হয়- পাঁচটি লক্ষণ দ্বারা। এগুলো- হলো-

মৎস্য পুরাণে পাঁচটি লক্ষণের নাম ভিন্ন। এগুলো হলো- যথাবৃত্তিম রক্ষা, মুক্তি, হেতু ও উপশ্রয়া। শ্রীমদ্ভগবৎ মতে- মহাপুরাণের দশলক্ষণের কথা জানা যায় না।

 বাস্তব সম্মত বা প্রামাণসাপেক্ষ হবে এমন কোনো শর্ত নেই। তাই পৌরাণিক কাহিনিকে এক কথায়  বলা যায়- ধর্মভিত্তিক রূপকথা।

পুরাণের রচয়িতা:
সাধারণ ভাবে পুরাণের রচয়িতা হিসেবে পাওয়া বেদ-বিভাজন কারী বেদব্যসের নাম। মহাভারত, ১৮টি মূখ্য পুরাণ, বেদের বিভাজক একই ব্যক্তি হিসেবে মানতে কষ্ট হয়। অনেকে মনে করেন বিভিন্ন সময়ে রচিত পুরাণগুলো বিভিন্ন ব্যক্তি ছিলেন। বেদব্যাস সম্ভবত পুরাণরচনাকারীদের সাধারণ নাম ছিল। মহাভারতের রচনাকারী এবং বেদ বিভাজক একই ব্যক্তি তাও মানা যায় না। এ সকল গ্রন্থের রচয়িতা বা সংকলক হতে গেলে অন্তত তাঁকে হাজার বছরের পরমায়ুর প্রয়োজন ছিল।

পুরাণের বিভাগ ও সংখ্যা
সাধারণভাবে ১৮টি মুখ্য পুরাণ বা মহাপুরাণের কথা মান্য করা হয়। এবং উপপুরাণ ১৮টি। এর বাইরে রয়েছে- স্থলপুরাণ, কুলপূরাণ, জৈনপুরাণ ও বৌদ্ধ পুরাণ। ব্রহ্মা, বিষ্ণু মহেশ্বর -এই তিন দেবতার কাহিনীর সূত্রে পুরণগুলো তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ তিনটি হলো- ব্রাহ্মপুরাণ, বৈষ্ণব পুরাণ ও শৈব পুরাণ। পদ্মপুরাণ মতে- সাত্ত্বিক রাজসিক ও তামসিক- এই তিন গুণের বিচারে পুরাণ তিন প্রকার। 


সূত্র: