সগর

হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে ইক্ষ্বাকুবংশীয় রাজা রাহুর ঔরসে ও যাদবীর গর্ভে ইনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন যাদবী গর্ভবতী হলে, রাহুর অপর স্ত্রী ঈর্ষ্যান্বিতা হয়ে, যাদবীর গর্ভনাশের জন্য খাদ্যের সাথে বিষ মিশিয়ে দেন কিন্তু দৈবক্রমে যাদবীর কোনই ক্ষতি হয় নি এর কিছুদিন পর রাহু রাজত্ব হারিয়ে বনবাসে গেলে, যাদবীও স্বামীর সাথে বনে যান বিষের প্রভাবে যাদবীর গর্ভস্থ সন্তান শতবর্ষ পর্যন্ত গর্ভেই থেকে যায় এক সময় রাহুর স্বাভাবিক মৃত্যু হয় যাদবী স্বামীর সাথে সহমরণে উদ্যোগ নিলে ঔর্ব ঋষি তাকে নিবৃত্ত করেন এরপর যাদবী বিষের সাথে এক পুত্র প্রসব করেনস (সহ) গর (বিষ)-এর সাথে জাত বলে- ঔর্ব ঋষি এই পুত্রের নাম রাখেন সগর সগর বড় হয়ে তাঁর পিতৃশত্রুদের পরাজিত করে রাজত্ব উদ্ধার করেন

মহাভারতের মতে ইক্ষ্বাকুবংশের রাজা সগরের দুটি স্ত্রী ছিল এঁরা ছিলেন বিদর্ভরাজার কন্য কেশিনী ও অরিষ্টনেমীর কন্যা সুমতি কিন্তু দীর্ঘদিন এঁর কোন স্ত্রীরই সন্তান না হওয়ায়, দুই স্ত্রী নিয়ে ইনি মহাদেবের তপস্যা শুরু করেন এর ফলে মহাদেব বর দেন যে, এক স্ত্রীর অতি বলবান ষাট হাজার পুত্র জন্মাবে এবং অপর স্ত্রীর মাত্র একটি বলবান পুত্র হবে এর কিছুদিন পর উভয় স্ত্রীই গর্ভবতী হন পরে কেশিনী একটি লাউ প্রসব করেন এবং সুমতি একটি সুদর্শন পুত্র প্রসব করেন সুমতির এই পুত্রের নাম রাখা হয়েছিল অসমঞ্জ।    

কেশিনী লাউ প্রসবের পর, দৈববাণী অনুসারে একটি ঘৃতপূর্ণ উষ্ণপাত্রে এই লাউটি সংরক্ষণ করেন এই লাউ থেকে এক বৎসর পর মোট ৬০,০০০ পুত্র জন্মগ্রহণ করে এই ষাট হাজার পুত্র অত্যন্ত অত্যাচারী ছিলেন সগর শততম অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করলে, ইন্দ্র তাঁর ইন্দ্রত্ব লোপের ভয়ে এই যজ্ঞের বিঘ্ন ঘটানোর পরিকল্পনা নেন অশ্বমেধ যজ্ঞের অশ্বের ভার ছিল সগরের ষাট হাজার পুত্রের উপর ইন্দ্র এই যজ্ঞের অশ্ব চুরি করে পাতালে অবস্থিত কপিলমুনির আশ্রমে রেখে আসেন সগরের ষাট হাজার পুত্র উক্ত অশ্বের খোঁজ করতে করতে কপিলমুনির আশ্রমে উপস্থিত হন সেখানে অশ্বটি পেয়ে- মুনিকে চোর মনে করে এঁরা তাঁর উপর অত্যাচার শুরু করেন ফলে মুনি রুষ্ঠ হয়ে, এদেরকে ভষ্ম করে ফেলেন নারদের কাছ থেকে সগর এই সংবাদ অবগত হয়ে, তাঁর পৌত্র অংশুমানকে এই যজ্ঞের অশ্ব খুঁজে আনার জন্য পাঠান অংশুমান কপিলমুনিকে সন্তুষ্ট করে অশ্ব ফিরিয়ে আনেন এবং তাতে যজ্ঞ সম্পন্ন হয় পরে কপিলমুনির পরামর্শ অনুসারে, অংশুমানের পৌত্র ভগীরথের স্বর্গ থেকে গঙ্গা নদী এনে এই পুত্রদের উদ্ধার করেন