উর্বশী
উরূন্ (মহাপুরুষগণকে) বষ্টি (বশ করেন) যে/উপপদ তৎপুরুষ সমাস।
বিশেষ্য {
| অপ্সরা | হিন্দু দৈবসত্তা | দৈবসত্তা | আধ্যাত্মিক সত্তা | বিশ্বাস | অভিলব্ধি | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক বিষয় | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}

হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী মতে-
জনৈকা অপ্সরা উর্বশীর জন্ম সম্পর্কে বিবিধ মত পাওয়া যায় যেমন

 

শ্রীমদ্ভাগবতের মতে একবার নরনারায়ণ বদরিকাশ্রমে কঠোর তপস্যা আরম্ভ করলে, ইন্দ্র তাঁর ইন্দ্রত্ব পদ হারানোর আশঙ্কা করলেন নারায়ণের তপস্যা ভঙ্গ করার জন্য ইন্দ্র কামদেব ও কয়েকজন অপ্সরাকে বদরিকাশ্রমে পাঠালেন নারায়ণ তাঁদের দ্বারা মোহিত না হয়ে, ইন্দ্রের পাঠানো কামদেব ও তপস্যা-ভঙ্গকারিণী অপ্সরাদেরকে অতিথিরূপে গ্রহণ করলেন নারায়ণের অপূর্ব ইন্দ্রিয় সংযম দেখে তাঁরা মোহিত হয়ে, অতিথিরা নারায়ণের স্তব করতে থাকলে, নারায়ণ তাঁর উরুভেদ করে কয়েকটি অসামান্যা সুন্দরীর উদ্ভব ঘটালেন এরপর ইনি দেবতাদেরকে উক্ত সুন্দরীদের ভিতর থেকে একজনকে গ্রহণ করতে বললে, দেবতারা একটি সুন্দরীকে বেছে নিলেন উরু থেকে উৎপত্তি বলে, দেবতারা এঁর নাম রেখেছিলেন উর্বশী

   
 

পদ্মপুরাণের মতে বিষ্ণু ধর্মপুত্র হয়ে গন্ধমাদন পর্বতে কঠোর তপস্যায় নিমগ্ন হলে, ইন্দ্র তাঁর ইন্দ্রত্ব হারানোর ভয়ে কামদেব-সহ বেশ কিছু অপ্সরাকে প্রেরণ করেন কিন্তু কোন অপ্সরাই বিষ্ণুর ধ্যান ভাঙতে পারলেন না শেষ পর্যন্ত কামদেব তাঁর উরু থেকে উর্বশীকে সৃষ্টি করলেন উর্বশী বিষ্ণুর ধ্যান ভাঙতে সক্ষম হলে, ইন্দ্র খুশী হয়ে উর্বশীকে গ্রহণ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং উর্বশী তাতে সম্মত হন

   
 

অন্যান্য গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে ইনি দেবাসুরের সমুদ্র মন্থনকালে সমুদ্র থেকে উত্থিত হয়েছিলেন

   

উর্বশী-পুরূরবা কাহিনী :
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীগুলিতে বিবিধভাবে উর্বশী
'র নাম পাওয়া যায় তবে সবচেয়ে আলোচিত উর্বশী-পুরূরবা কাহিনী স্বর্গ থেকে বিচ্যুত হয়ে উর্বশী কিছুদিন মর্তে বাস করেন এই সময় উর্বশী কিছু শর্ত সাপেক্ষে পুরূরবা'র স্ত্রী হিসাবে ছিলেন কেন উর্বশী মর্তবাসী হয়েছিলেন, তা নিয়ে বিভিন্ন গল্প প্রচলিত রয়েছে যেমন
 

 

একবার দেবরাজ ইন্দ্রের রাজসভায় আহূত পুরূরবা, উর্বশী'র নাচ ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাঁর দিকে তাকালে, উর্বশীর নাচের তাল কেটে যায় ফলে ইন্দ্রের অভিশাপে উর্বশী পৃথিবীতে বাস করতে আসেন

বেদের মতে আদিত্যের যজ্ঞে মিত্র ও বরুণ নিমন্ত্রিত হন সেখানে উর্বশী উপস্থিত হলে তাঁকে দেখে উক্ত দেবতাদ্বয়ের বীর্যস্খলন হয় উক্ত বীর্যের যে অংশ যজ্ঞের কুম্ভে পড়ে, সে ভাগ থেকে অগস্ত্য ও বশিষ্ট মুনির জন্ম হয়েছিল এই ঘটনায় মিত্র ও বরুণ উর্বশীকে মর্ত-বাসের অভিশাপ দেন এই কারণে ইনি পুরূরবা'র স্ত্রী হিসাবে মর্তে কাটান

পদ্মপুরাণের মতে বিষ্ণু ধর্মপুত্র হয়ে গন্ধমাদন পর্বতে কঠোর তপস্যায় নিমগ্ন হলে, ইন্দ্র তাঁর ইন্দ্রত্ব হারানোর ভয়ে কামদেব সহ বেশ কিছু অপ্সরাকে প্রেরণ করেন কিন্তু কোন অপ্সরাই বিষ্ণুর ধ্যান ভাঙতে পারলেন না শেষ পর্যন্ত কামদেব তাঁর উরু থেকে উর্বশীকে সৃষ্টি করলেন উর্বশী বিষ্ণুর ধ্যান ভাঙতে সক্ষম হলে- ইন্দ্র খুশী হয়ে উর্বশীকে গ্রহণ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করলে, উর্বশী তাতে সম্মত হন এই সময় মিত্র ও বরুণ উর্বশীকে কামনা করেছিলেন, কিন্তু উর্বশী তাতে অমত প্রকাশ করলে, মিত্র ও বরুণ মর্ত-বাসের অভিশাপ দেন


উর্বশী মর্তে বসবাস করার সময় পুরূরবা তাঁকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করতে ইচ্ছা করলে
, উর্বশী কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে পুরূবার স্ত্রী হতে রাজি হন শর্তগুলি হলো
উর্বশী যেন কখনো পুরূরবাকে নগ্ন অবস্থায় না দেখেন
শুধু মাত্র উর্বশী কামাতুরা হলেই, পুরূরবা তাঁর সাথে মিলিত হতে পারবেন
উর্বশীর শয্যার পাশে সন্তানতুল্য দুটি মেষ শাবক বাঁধা থাকবে এবং মেষ শাবক দুটিকে পুরূরবা নিজ দায়িত্বে অপহরণ থেকে রক্ষা করবেন
পুরূরবা মাত্র এক সন্ধ্যা ঘি আহার করবেন।  

   
 

উল্লিখিত শর্তানুসারে পুরূরবা রাজী হলে, তাঁদের বিবাহ হয় দীর্ঘ দিন তাঁরা একত্রে বসবাস করার পর, গন্ধর্বরা উর্বশীকে স্বর্গে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়লো এক রাত্রিতে বিশ্বাবসু নামক এক গন্ধর্ব উর্বশীর শয্যার পাশে রাখা মেষ শাবক দুটিকে অপহরণ করে উর্বশী জেগে উঠে মেষ শাবক দুটি দেখতে না পেয়ে কাঁদতে থাকলে, পুরূরবা ক্ষিপ্রগতিতে শয্যা থেকে উঠে, বিবস্ত্র অবস্থাতেই মেষের অনুসন্ধানে অগ্রসর হলেন এই সময় গন্ধর্বরা আকাশে বজ্রসহ বিদ্যুতের অবির্ভাব ঘটান বিদ্যুতের আলোতে, উর্বশী পুরূরবাকে নগ্ন অবস্থায় দেখতে পেয়ে- অদৃশ্য হয়ে যান

এরপর পুরূরবা উর্বশীর সন্ধান করতে করতে কুরুক্ষেত্রে এসে চারজন অপ্সরার সাথে উর্বশীকে স্নানরতা অবস্থায় পান পুরূরবা উর্বশীকে ঘরে ফিরে যেতে অনুনয়-বিনয় করলে, উর্বশী বৎসরে একরাত্রির জন্য পুরূরবার কাছে যাবে এমন প্রতিশ্রুতি প্রদান করলেন এরপর থেকে পুরূরবা বৎসরান্তে একরাত্রির জন্য উর্বশীকে কাছে পেতেন এদের এই মিলনের ফলে উর্বশী'র গর্ভে মোট সাতটি সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল এই সন্তানরা হলেন আয়ু, অমাবসু, বিশ্বায়ু, স্রুতায়ু, দৃঢ়ায়ু, বলায়ু ও শতায়ু

এরপর উর্বশী পুরূরবাকে জানান যে, গন্ধর্বরা তাঁকে বর দিতে চান উত্তরে গন্ধর্বদের কাছে, উর্বশীকে চিরজীবন কাছে পাবার কামনা ব্যক্ত করেন গন্ধর্বরা একটি অগ্নিপূর্ণ পাত্র সামনে রেখে, উক্ত আগুনকে বেদের নির্দেশানুসারে তিন ভাগে ভাগ করে, উর্বশীর প্রতি পরিপূর্ণ মনোসংযোগ করে আহুতি দিতে বললেন পুরূরবা উক্ত নির্দেশ পালন করলে, পুরূরবা উর্বশীর সঙ্গী হিসাবে গন্ধর্বলোকে স্থান লাভ করেন


ইন্দ্র অর্জুনকে স্বর্গলোকে নিয়ে গেলে
, সেখানে অর্জুনকে দেখে উর্বশী প্রেম নিবেদন করেন কিন্তু অর্জুন মাতৃজ্ঞানে উক্ত নিবেদন প্রত্যাখ্যান করে। এই কারণে উর্বশী অর্জুনকে এক বৎসর নপুংসক হওয়ার অভিশাপ দেন এই কারণে মৎস্যরাজ বিরাট-ভবনে অর্জুন নপুংশক হয়ে বৃহন্নলা নাম ধারণ করে অতিবাহিত করেন।