সুমেরিয়ান পৌরাণিক কাহিনির একটি উৎসগ্রন্থ। এই প্রস্তরে লিখিত
এই গ্রন্থের এই নামকরণ করেছিলেন ড্যানিশ গবেষক থোর্কিল্ড জ্যাকোবসেন। ১৯৮৩
খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সুমের অঞ্চলে একটি
প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা পরিচালনা করে। প্রাচীন বিলুপ্ত নগরী নিপ্পুরে
প্রত্নতাত্ত্বিক খননের সময় একটি ভাঙা প্রস্তর-লিখন পাওয়া যায়। ১৯১২
খ্রিষ্টাব্দের আরনো পোয়েবেল এই প্রস্তর-লিখনটিকে সুমেরিয়ান ভাষায় লিখিত বলে দাবি
করেন। তাঁর মতে এই প্রস্তর-লিখনটি প্রস্তুত করা হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ১৬০০ অব্দের
দিকে। উল্লেখ্য, এর আগে সুমেরিয়ান সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে যে প্রস্তর-লিখন পাওয়া
গিয়েছিল, তার সময়কাল ধরা হয়েছিল, তা হলো- খ্রিষ্টপূর্ব ২৪০০ অব্দ। এই প্রস্তর-লিখনট
বার্টোন সিলিন্ডার নামে অভিহিত করা হয়। এছাড়া এই তালিকায় পাওয়া যায়- খ্রিষ্টপূর্ব
তৃতীয় সহস্রাব্দের দিকে রচিত 'গবাদি পশু এবং শস্য বিষয়ক পৌরাণিক গল্প', এবং এমেশ এবং
এন্টেন-এর পৌরাণিক গল্প।
এরিডু আদিপুস্তকের শুরুদিকের কিছু অংশ ভাঙা ছিল। এই অংশ আর খুঁজে পাওয়া যায় নি।
পরের প্রাপ্ত অংশে বর্ণিত হয়েছে- আন, এনলিল, এনকি এবং নিনহুর্সাঙ্গা কিভাবে
সুমেরিয়ানদের সৃষ্টি করেছিল এবং কিভাবে এরা সুমেরিয়ান এবং তাদের গবাদি পশুকে রক্ষা
করেছিল।
এই পৌরাণিক কাহিনিতে বর্ণিত হয়েছে একটি মহাপ্লাবনের কথা। তবে এর জায়গায় জায়গায় না
পাওয়া গেলেও প্রাপ্ত অংশ থেকে যে জানা যায়, তা হলো- দেবতারা মানবগোষ্ঠীকে বিলুপ্ত
করার সিদ্ধান্ত নেন। জলের দেবতা এনকি, শুরুপ্পাক নগরীর শাসক জিয়ুসুদ্রাকে আসন্ন
মহাপ্লাবন থেকে মানবগোষ্ঠী এবং তাদের গবাদি পশুকে রক্ষা করার জন্য একটি বিরাট জাহাজ
তৈরির নির্দেশ দেন।
এরপর পাওয়া যায়- শুরু সাত দিন সাত রাত ধরে প্রচণ্ড ঝড়-বৃ্ষ্টির কথা। এর ফলে সৃষ্ট
মহাপ্লাবনের জাহাজের ভেসে যাওয়ার কথা। এরপর সূর্য দেবতা উটু আবি্ভূত হয়। জিয়ুসুদ্রা
জাহাজের একটি জানালা খুলে সূর্যদেবতাকে অভিবাদন জানান এবং একটি ষাঁড় এবং একটি ভেড়া
উৎসর্গ করেন।
এরপর এই প্রস্তর-লিখন থেকে জানা যায়,- প্লাবন কিছু প্রশমিত হওয়ার পরে কথা। এরপর তিনি
আকাশের দেবতা আন এবং ঝড়, বাতাস ও পৃথিবীর দেবতা এনলিলের কাছে প্রার্থনা করেন।
প্লাবন শেষে জিয়ুসুদ্রা দেবতাদের নির্দেশে ডিলমুনে বসতি স্থাপন করে।