জিগ্গুরাত
Ziggrat
প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায়
অঞ্চলে মন্দির সংলগ্নস্থানে সৃষ্ট স্থাপত্য কর্ম।
এই স্থাপত্যকর্ম সৃষ্টির
উদ্দেশ্য কি ছিল, তা জানা যায় না। ইটের তৈরি ধাপে ধাপে সাজানো এই স্থাপত্যকর্মটি হতো
বহুতল বিশিষ্ট।
জিগ্গুরাত শব্দটি এসেছে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার আক্কাদীয় ভাষার জাকারু বা জাগারু
(zaqaru) শব্দ থেকে।
এর অর্থ হলো 'ওপরে ওঠানো'। জাকারু থেকে পরবর্তী সময়ে জিকুরাতু বা জিগ্গুরাত শব্দটির উদ্ভব হয়।
এর অর্থ হলো- 'উচ্চ স্থানে উঠে যাওয়া স্থাপনা'।
জিগ্গুরাতগুলোর
উচ্চতা ছিল ৫০ মিটার বা তার চেয়েও বেশি। সর্বোচ্চ সর্বোচ্চ ৯২ মিটার উচ্চতার জিগ্গুরাতেরও সন্ধান পাওয়া গেছে। জিগ্গুরাতগুলোর সর্বোচ্চ
চূড়া সমতল হয়ে হতো এবং এই চূড়ার উপর একটি করে মন্দির থাকতো। এর ভূমি সাধারণত বর্গাকার, আয়তাকার বা উপবৃত্তাকার হয়ে থাকে। বেশির ভাগ বর্গাকার
জিগ্গুরাতের ভূমির বাহুর দৈর্ঘ্য মোটামুটি ৫০ মিটার এবং আয়তাকার জিগ্গুরাতের দৈর্ঘ্য ৫০ মিটার ও প্রস্থ ৪০ মিটারের কাছাকাছি হয়ে থাকে। বর্তমানে কোনো
জিগ্গুরাতই সর্বোচ্চ ধাপ পর্যন্ত অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায় নি।
ক্রমোচ্চতার বুচারে জিগ্গুরাতগুলো দেখতে অনেকটা পিরামিডের মতো হলেও পিরামিডের সাথে এদের বেশ কিছু পার্থক্য আছে। জিগুরাতের অভ্যন্তরে পিরামিডের মতো কোনো প্রকোষ্ঠ নেই। পিরামিডের মতো
জিগ্গুরাতের দেওয়ালের পৃষ্ঠদেশ একাধিক ধাপ বিশিষ্ট। পিরামিড ব্যবহার করা হয়েছে
পাথরের ব্লক। কিন্তু জিগ্গুরাত তৈরি করা হয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট ইট দিয়ে।
জিগ্গুরারাতের ভূমি সাধারণত বর্গাকার, আয়তাকার বা উপবৃত্তাকার হয়ে থাকে।
এক্ষেত্রে জিগ্গুরাতগুলো মূলত
মন্দিরের ভিত্তি অথবা উচ্চস্থানে অবস্থিত মন্দিরে পৌঁছানোর পথ হিসেবে কাজ করতো। মেসোপটেমিয়ার
জিগ্গুরাতগুলোর প্রতিটি ধাপ থেকে পরবর্তী ধাপে পৌঁছানোর জন্য একাধিক সিঁড়ির ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু ইরানের
জিগ্গুরারাতগুলোতে নিচ থেকে চূড়া পর্যন্ত একটি মাত্র সর্পিলাকার বা ক্রমশ ঢালু পথ ছিল।
অনেকে মনে করেন যে, সেকালের মানুষ বিশ্বাস করতেন যে, জিগ্গুরাতের সিঁড়ি
বেয়ে দেবতারা প্রতি রাতে স্বর্গে যেতেন। এ সকল মন্দিরে পুরোহিতার দেবতার জন্য পূজো।
এখানে দেবতাদের জন্য খাবার তৈরি করা হতো। অনেক সময় এখানে দেবতাদের উদ্দেশ্যে বলি
দেওয়া হতো।
প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার প্রায় সবগুলো প্রধান শহরেই একটি করে জিগুরাত নির্মাত হয়েছিল।
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন জিগ্গুরাত নির্মিত হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৩,০০০ অব্দের দিকে। ব্যবিলনীয় এবং অ্যাসিরীয় রাজাদের সময় জুড়েও এগুলোর নির্মাণ অব্যাহত ছিল। সর্বশেষ জিগ্গুরাত নির্মিত হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ অব্দের দিকে। মেসোপটেমিয়া তথা বর্তমান ইরাকের অংশবিশেষ ছাড়াও ইরানের বিভিন্ন স্থানেও জিগ্গুরাত নির্মিত হয়েছিল।
উর নগরীর জিগ্গুরাত
উর নগরীতে এই জিগ্গুরাতটি নির্মাণ করেছিলেন সুমের ও আক্কাদিয়ান সম্রাট রাজা-
উর-নাম্মু। এরা আয়তন ছিল দৈর্ঘ্য ৬৪ মিটার, প্রস্থ ৪৬ মিটার এবং উচ্চতা ৩০ মিটার।