আমি

দেহধারী মানুষ যতদিন জীবিত থাকে, ততদিন কিছু কার্যক্রম চলতে থাকে। সার্বিক বিচারে এর কার্যক্রমকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।

মানুষ তার দেহাঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে সকল ঐচ্ছিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। এই পরিচালন-কার্যক্রম যার দ্বারা সম্পন্ন হয়, সেই হলো 'আমি'। ব্যাকরণের ভাষায় কর্তা, ভিন্নার্থে প্রভু। দেহ কেটেকুটে যার সন্ধান পাওয়া যায় না, কিন্তু তার অস্তিত্ব আছে। ধর্মমতে এই প্রভুই হলো আত্মা। ধর্মমতে তার বিশ্বাসভিত্তিক ব্যাখ্যা আছে, কিন্তু তা বাস্তব বুদ্ধি দিয়ে বিচার করা যায় না।

এই 'আমি' ইচ্ছা করে তাই সে শোনে এবং শোনায়, চলাচল করে এবং চালায়,  দেখে এবং দেখায়। এই জাতীয় নানারকম কার্যক্রম 'আমি' পরিচালনা করে। দেহধারী মানুষের 'আমি'র অবস্থান দেহে, তাই দেহকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্বও তার। সে কারণে দেহের ভালোমন্দ নিয়ে তাকে ভাবতে হয়। দেহের সাথে তার সম্পর্ক নিবিড়তম, তাই দেহের স্বস্তি বা অস্বস্তিদায়ক সকল অনুভূতি তাকেই স্পর্শ করে। আর ভিতরেই রয়েছে নন্দনতত্ত্বের মূল রহস্য।

আমি এবং ইন্দ্রিয়
'
আমি' দেহগত বা দেহের সকল তথ্য সংগ্রহ করে, দেহের কিছু তথ্য সংগ্রাহক, তথ্যসঞ্চালক এবং তথ্য প্রক্রিয়াকরণ উপকরণের সাহায্যে। বহুকাল আগে থেকেই কার্যক্রমের বিচারে এই কার্যক্রমকে পাঁচটি অংশে ভাগ করে ব্যাখ্যা করা হয়ে আসছে। এর প্রতিটি ভাগকে বলা হয় ইন্দ্রিয়। এগুলো হলো

এর বাইরে একটি বিশেষ সঙ্কেতসংবেদী বিষয়ের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করার প্রয়োজন আছে। এই অংশ রয়েছে শরীরের সমগ্র অংশ জুড়ে। এই অংশ মূলত শরীরের আনন্দ-বেদনার সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। যেমন পেটের ব্যথা হলে শরীরে যে বেদনাদায়ক অনুভূতির জন্ম হয়, তা দর্শন, শ্রবণ, ঘ্রাণ, আস্বাদন বা স্পর্শের বিষয় নয়। এই জাতীয় বিষয় শরীরের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় অনুভূত হয়।

আমি এবং মন
'
আমি' একটি নিয়ন্ত্রক সত্ত্বা। সে সিদ্ধান্ত নেয় কি করবে, কিভাবে যে কোনো পরিস্থিতিকে বিবেচনা করবে। আমি'র ইচ্ছাই হলো মন। আবার 'আমি'র ভিতরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাবনার জন্ম হতে পারে, কিম্বা স্মৃতিভাণ্ডার থেকে কোনো বিষয় আপনাআপনি জাগ্রত হতে পারে, 'আমি' যখন তা অনুভব করে তখন 'আমি' তাকে বিবেচনায় আনে কিম্বা তাকে বা বাতিল করে দেয়। এক্ষেত্রে দ্বান্দ্বিকতা সক্রিয় থাকে। 'আমি' সিদ্ধান্ত নেয় কোনটি গ্রহণ করবে। এসকল ক্ষেত্রে 'আমি' কর্তা।

'আমি' সকল ইন্দ্রিয়ের কেন্দ্রীয় অংশ বা সকল ইন্দ্রিয়ের পরিচালক হিসেবে কাজ করে। সকল ইন্দ্রিয়ের ভিতরে আমি প্রধান ইন্দ্রিয়ের ন্যায় অবস্থান করে। এই কারণের এর অপর নাম অন্তরিন্দ্রিয় [অন্তর্গত ইন্দ্রিয়/মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস]। সমার্থক শব্দ হিসেব 'আমি' কে অন্তঃকরণ, চিত্ত, মন হৃদয়ও বলা হয়।

'আমি' কোনো কিছুকে স্মরণ করতে পারছে না, অর্থাৎ তার একটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে। 'মনে থাকে না' অর্থাৎ সে স্মৃতি থেকে যথার্থ তথ্যকে উত্তোলন করতে পারছে না। 'আমি' ইচ্ছা করছে তাই তার এই প্রচেষ্টা। সব মিলিয়ে দাঁড়ায় মন হচ্ছে- স্বয়ম্ভূ বা পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে উদ্ভূত 'আমি'র ইচ্ছা ও প্রচেষ্টার একক বা পারস্পরিক ঐচ্ছিক কার্যক্রমের ক্ষেত্র।

আমি'র অনুভূতির দশা ও স্বস্তি-অস্বস্তি
'আমি' নামক সত্ত্বা'র অনুভূতির যে অবস্থানে থাকে, তাকেই দশা বলা যেতে পারে। এর আদি দশা পরিস্থিত নিরপেক্ষ এবং নিরাসক্ত। এই অবস্থাকে ধরা যেতে পারে শূন্যমান। এই দশায় 'আমি' বাহ্যিক অনু্ভূতিহীন অবস্থায় থাকে। এই অবস্থা 'আমি' স্বয়ং কোনো দশার ভিতরে প্রবেশ করতে পারে, আবার বাইরের কোনো অবস্থা দ্বারাও বিশেষ কোনো দশায় প্রবেশ করতে পারে। এই দুই দশার এক দিকে থাকে স্বস্তিদায়ক দশা, অপর দিকে অস্বস্তিদায়ক দশা। উভয়ের ভিতরে 'আমি' সব সময়ই স্বস্তিদায়ক দশায় থাকতে চায়। ঘটনাক্রমে তার কাছে কোনো অবস্থা অস্বস্তিদায়ক দশায় চলে গেলে, সে প্রথমে সে দশা থেকে নিরপেক্ষ বা শূন্য দশায় আসার চেষ্টা করে। এরপর সেটাকে স্বস্তিদায়ক দশায় উন্নীত করার চেষ্টা চালায়।

এই স্বস্তিদায়ক এবং অস্বস্তিদায়ক দশারেখা অনুসরণ করেই 'আমি'র আনন্দ, বেদনা, রাগ, ক্ষোভ ইত্যাদি দশায় পৌঁছায়। একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরা যাক কেউ একজন একটি কাঁটার অগ্রভাগ দিয়ে অন্য কারো শরীরে স্পর্শ করলো মাত্র। এই অন্য আমি'র কাছে প্রাথমিকভাবে একটি স্পর্শের অনুভূতি হিসেবেই থাকবে। কিন্তু এই 'আমি' যদি তার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে, এই কাঁটা শরীরে প্রবেশ করলে কি হতে পারে। তাহলে এই 'আমি' একটি অস্বস্তিকর দশায় পৌঁছাবে। ধরা যাক এই দশা '-১' । এবার এই কাঁটার অগ্রভাগের অতি সমান্য অংশ, শরীরের ভিতর সত্যিই প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হলো। এর ফলে একটি ভিন্নরকম তথ্য সঙ্কেত মস্তিষ্কে পৌঁছে যাবে। সঙ্কেত প্রক্রিয়াজাত হয়ে যে ফলাফল পাওয়া যাবে, 'আমি' তাকে একটি ভিন্নতর অনুভূতি হিসেবে বিবেচনা করবে। গাণিতিক বিচারে আমরা তাকে -১, -১.২৫, -১.৫০ ইত্যাদি যাই বলি না কেন, 'আমি' তাকে হয়তো বেদনা হিসেবে চিহ্নিত করবে। মূলত বেদনা এখানে একটি দশার নাম মাত্র। 'আমি' তার উপলব্ধির ভিতর দিয়ে নানা রকম দশায় পৌঁছায়। দশাকেই বলা হয় আনন্দ, বেদনা, দুঃখ, সুখ ইত্যাদি।

উপলব্ধি, অভিজ্ঞতা, ধারণা, জ্ঞান
যেভাবেই যে ধরনের অনুভূতি উৎপন্ন হোক, তা গ্রহণ করে 'আমি' নামক সত্ত্বা। এবং সে কি ভাবে গ্রহণ করছে তাই হলো যে কোনো অনুভূতির পরিচয়। ইন্দ্রিয়সমূহের কাজ হলো- তার আওতাধীন তথ্যাদি তার বিভাগের কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ ডিভাইসের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই ডিভাইসের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে 'আমি' উজ্জীবিত হয়। এই উজ্জীবনের সূত্রেই 'আমি'র 'উপলব্ধি' নামক অনুভূতির জন্ম নেয়। এই 'উপলব্ধি' আমি মস্তিষ্ক নামক ডিভাইসের একটি অংশে সংরক্ষিত হয়। একে বলা যায় স্মৃতিভাণ্ডার। এই স্মৃতিভাণ্ডারে থাকে মানুষের সকল উপলব্ধি। আর 'আমি'  প্রয়োজনীয় স্মৃতি থেকে 'উপলব্ধি' উত্তোলন করে এবং নতুন নতুন কার্যক্রমে ব্যবহার করে, তখন তা অভিজ্ঞতা রূপে অভিহিত হয়। ধরা যাক, প্রথমবার আগুনে হাত দিয়ে কারো হাত পুড়ে গেছে। এই প্রথম জানাটা হবে তার 'উপলব্ধি'। এই উপলব্ধি ওই মানুষটির স্মৃতিতে রয়ে যাবে। ওই মানুষটি পুনরায় আগুনে হাত দেওয়ার আগে, তাঁর স্মৃতি থেকে পুরানো উপলব্ধিকে জাগ্রত করবে এবং এর ফলাফল সম্পর্কে জ্ঞাত হবে। এর ফলে মানুষটি যদি আগুনে হাত পোড়াতে না চায়, তাহলে সে জাগ্রত উপলব্ধি অনুসারে আগুনে হাত দেবে না। এইভাবে স্মৃতিভাণ্ডারে সঞ্চিত অতীতের কোনো উপলব্ধিকে বর্তমানের কোনো বিষয়ের সাথে সমন্বয় করার প্রক্রিয়ার ভিতরে তাঁর অভিজ্ঞতা কাজ করবে।

অভিজ্ঞতা নিরপেক্ষ। যে বিষ পান করলে তাঁর মৃত্যু হবে, সে কথা তাঁর অভিজ্ঞাতায় থাকলেও আত্মহত্যার জন্য সে ওই বিষই গ্রহণ করেব। কিম্বা ওই বিষ মৃত্যুর কারণ হবে, সে কথা জেনে সে ওই বিষ পান করবে না। উভয়ই অভিজ্ঞতার সূত্রেই পাওয়া যাবে। অভিজ্ঞতা শুধু ইন্দ্রিয় দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে না জন্মাতে পারে। অভিজ্ঞতা অভিজ্ঞ কোনো মানুষ বা গ্রন্থ থেকেও জন্মাতে পারে। এই অভিজ্ঞতা থেকে যে সত্যটি 'আমি' গ্রহণ করে তা হলো ধারণা।

বিষ খেলে মানুষ মরে যায়, এই অভিজ্ঞতা থেকে তার বিষ এবং মৃত্যর কারণ সম্পরকে ধারণা জন্মগ্রহণ করবে। কোনো সুনির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা থেকে প্রাথমিকভাবে যে ধারণার জন্ম হয়, তার প্রকৃতি থাকে সরল। কিন্তু 'আমি' যখন এই ধারণাকে যাচাই করা শুরু করে বা এর সাথে অন্যান্য ধারণা যুক্ত করতে থাকে, তখন জটিল থেকে জটিলতর ধারণার উদ্ভব হতে থাকে। ধরা যাক বরফ-এ হাত দিয়ে বা কারো কাছে শুনে এই অভিজ্ঞতা হয়েছে 'বরফ শীতল'। এই অভিজ্ঞতা মনে স্থান করে নিয়েছে একটি প্রাধমিক এবং সরল ধারণা। এরপর ঘটনাক্রমে তার দ্বিতীয় ধারণা হলো 'বরফ কঠিন'। এখানে দুটি অভিজ্ঞতা মিলে তৈরি হলো যে ধারণা তা হলো- বরফ শীতল এবং কঠিন। এইভাবে একাধিক অভিজ্ঞতা যুক্ত হতে হতে ধারণা জটিল থেকে জটিলতর রূপ লাভ করবে। আর বহুধারণা যুক্ত হয়ে যখন কোনো সত্তার বা বিষয়ের পরিচয় সম্পর্কে বিশেষভাবে জানা যায়, তখন তাকে বলা হয় জ্ঞান।

'আমি' প্রত্যক্ষ উপলব্ধির দ্বারা যে অভিজ্ঞতা লাভ করে, তার দ্বারা ধারণাতে পৌঁছায়। কিন্তু এই ধারণা যথাযথ নাও হতে পারে। অভিজ্ঞতার সীমাবদ্ধতার কারণে ধারণা বিকৃত বা অসত্য হতে পারে। ধরা যাক, একজন মানুষ এক গ্লাস মিষ্টি দুধ খেয়ে, তার অভিজ্ঞতা থেকে বললো এই দুধে চিনি আছে। মূলত তার অভিজ্ঞতা যদি চিনির মিষ্টত্বের ভিতরেই থাকে, তাহলে সে চিনি ছাড়া আর কিছু ধারণা করতে পারবে না। অন্য একজনের যদি স্যাকারিন মেশানো দুধ খাওয়ার অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে সে ধারণা করতে পারবে প্রদেয় ওই দুধ মিষ্ট হলেও তা চিনির কারণে নয়। একইভাবে ভুল ধারণা থেকে ভুল জ্ঞানের জন্ম হতে পারে। যতদিন পর্যন্ত কোনো ধারণা ভুল বলে প্রমাণিত না হয়, ততদিন পর্যন্ত জ্ঞানও ভুলের জগতেই থাকে। আবার কোনো কোনো জ্ঞানের ধারণাসমূহের কিছু ভুল থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে ঠিক ও ভুলের মিশ্রণে ভরা জ্ঞানের জন্ম হয়। মূলত মানুষের কোনো জ্ঞানই ওই অর্থে পরম নয়। যিনি পরম জ্ঞানে পৌঁছাতে পারবেন, তিনিই ঈশ্বরে পৌঁছে যাবেন।

মানুষ মূলত ধারণা লাভ করে সহজাত প্রবৃত্তি থেকে। জন্মের পর মানব শিশু চোখ খোলে। সে কিছু দেখবে বলে চোখ খোলে না, সে তার সহজাত বা জৈবিক ধর্মে চোখ খোলে। হঠাৎ করে চোখে বেশি আলো পড়লে চোখ আপনি বন্ধ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে চোখ মানুষের অভিজ্ঞতা, ধারণা, জ্ঞানের অপেক্ষায় থাকে না। দেহগত কিছু সহজাত কার্যক্রমের মাধ্যমে যার প্রকাশ ঘটে, তাও একধরনের অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিতে ঘুমায়। এর ভিতর দিয়ে সে শারীরীক যে স্বস্তি অনুভব করে, তা তার অভিজ্ঞতার ভিতরে ঘুমের প্রয়োজনীয়তার ধারণার জন্ম দেয়। প্রয়োজনে মানুষ ঘুম বাদ দিয়ে নানারকম কাজ করে বটে, কিন্তু ঘুমের প্রয়োজন এবং ঘুমাতে হবে এ তাড়না তার ভিতরে কাজ করে। অনেকক্ষণ না ঘুমানোর জন্য সে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন সে তার অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝতে পারে এই ক্লান্ত দূরীকরণে ঘুমটা দরকার। এই জাতীয় সহজাত অভিজ্ঞতাসমূহের সাথে যুক্ত হয় নানা ধরনের বাহ্যিক ধারণা। তার সবই জন্মে ইন্দ্রিয়ের দ্বারা, তা সে পুথিগত হোক আর গুরমুখী হোক।

বুদ্ধি
বুদ্ধি হলো মস্তিষ্ক নামক ডিভাইসের প্রক্রিয়াজাত কার্যক্রম এবং জ্ঞানের সমন্বিত ফলাফল। মস্তিষ্ক নানা ধরনের তথ্য ধারণ করে রাখে। এই সকল তথ্যের সূত্রে নানা রকমের জ্ঞানের জন্ম হয়। এসকল জ্ঞানও মস্তিষ্ক নামক ডিভাইসই ধারণ করে। 'আমি' যখন কোনো কিছু করার উদ্যোগ নেয়, তখন সে তার জ্ঞানকে ব্যবহার করে কাঙ্ক্ষিত উদ্যোগকে সফল করার চেষ্টা করে। 'আমি'র এই উদ্যোগ নেওয়ার যথাযথ প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে বুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়। ধরা যাক, একটি উঁচু জায়গায় একটি আপেল আছে। 'আমি' যদি আপেলটি হাতে পেতে চায়, তাহলে তার অভিজ্ঞতা দিয়ে এর উচ্চতা লক্ষ্য করবে। অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে সে বুঝতে পারবে, হাত বাড়িয়ে আপেলটি নাগালে পাবে কি পাবে না। একসময় তার ধারণা হবে আপেলটি সে নাগালে পাবে না। সে নিজেকে উত্তোলন করার জন্য একটি উঁচু বস্তু খোঁজার চেষ্টা করবে। কারণ তার অভিজ্ঞতা থেকে জানে নিজেকে কতটুকু উঁচু করলে সে আপেলটি নাগালে পাবে। সে তখন  একটি টুল এনে তার উপরে দাঁড়িয়ে আপলেটি গ্রহণ করবে। এই পুরো কার্যক্রমের ভিতর দিয়ে তার বুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যাবে।

কোনো অজ্ঞাত বিষয়কে বিশ্লেষণ বা ব্যাখ্যা করার জন্য বুদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। গাণিতিক সমস্যা সমাধান করার প্রক্রিয়া এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হতে পারে। এসকল ক্ষেত্রে পূর্ব অভিজ্ঞতা দিয়ে সমাধান করেতে গিয়ে নতুন অভিজ্ঞতার সৃষ্টি হয়। একসময় গণিতের কোনো বিশেষ অধ্যায় সম্পর্কে তার ধারণা জন্মে। গণিতের এরূপ নানা ধরনের ধারণার ভিতর দিয়ে গণিতে জ্ঞান জন্মে। আর পুরো কার্যক্রেমের ভিতর দিয়ে তার বুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়।

চিন্তা, বোধ ও স্বজ্ঞা
'
আমি'
যা ভাবে তাই চিন্তা। চিন্তা মূর্ত বা বিমূর্তজগতের হতে পারে। জ্ঞান দ্বারা বিষয়কে অনুধাবন করার প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে চিন্তার উদ্ভব হয়। আর বুদ্ধি চিন্তার চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। চিন্তার বিষয় যাই হোক না কেন, তাতে দ্বান্দ্বিকতা থাকে। জ্ঞান যা দেয়, তা ঠিক কি ঠিক কিনা এই দ্বন্দ্বের ভিতর দিয়ে মানুষ চূড়ান্তভাবে একটি সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করে। এই প্রচেষ্টার ভিতর দিয়ে জন্ম নেয় তার বোধ। বোধের ভিতর দিয়ে 'আমি' সত্য-অসত্য, ভালো-মন্দ, ন্যায় অন্যায়কে চিহ্নিত করতে শেখে। বোধের ভিতর দিয়ে জন্ম নেয় একধরনের অন্তর্দৃষ্টি। একে বলা হয় স্বজ্ঞা (Intuition)। স্বজ্ঞার মূল বিষয় হলো বিচার-বুদ্ধির পরিবর্তে প্রত্যক্ষ উপলব্ধিকে গুরুত্ব দেয়। বিষয়টি সম্পূর্ণই ব্যক্তি-নির্ভর। তাই স্বজ্ঞা'র অভিজ্ঞতা অন্যকে শেখানো যায় না। স্বজ্ঞা নানা মানুষের ভিতরে নানান ধরনের তর্কের সৃষ্টি করে। ধরা যাক, একজন মানুষকে দেখে অন্য একজন মানুষ অকারণেই ভয় পায়। কিন্তু অন্য মানুষ তাকে ভীতিপ্রদ মনে করে না। অনেক সময় এই স্বজ্ঞা ঠিক হয়, আবার হয় না।

বোধ থেকে জন্ম নেয় নৈতিকতা, সুখবোধ, আনন্দ ইত্যাদি।