আজাদ
ইংরেজি: Daily Azad
বাংলা দৈনিক পত্রিকা।
১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে অক্টোবরে এই পত্রিকাটি মওলানা মুহাম্মদ আকরাম খাঁ'র
সম্পাদনায় কলকাতা থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রথম দিকে এই পত্রিকাটি বঙ্গ এবং আসামের
মুসলমানদের মুখপত্র হিসাবে প্রকাশিত হওয়া শুরু করে। প্রথমদিকে এই পত্রিকাটির পৃষ্ঠা
সংখ্যা ছিল ৮ পৃষ্ঠা। পত্রিকাটি ছাপা হতো নিজস্ব রোটারী ম্যাশিনে।
পত্রিকাটির সম্পাদনা করতেন আকরাম খাঁ' এবং তাঁর জ্যেষ্ঠ্যপুত্র মোহাম্মদ খায়রুল আনাম খাঁ। আর বার্তা সম্পাদক ছিলেন মোহাম্মদ মোদাব্বের। এছাড়া এ পত্রিকার সাথে যুক্ত ছিলেন আবুল কালাম শামসুদ্দীন ও নজীর আহমদ চৌধুরী। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে পত্রিকাটির সম্পাদক হন মোহাম্মদ মোদাব্বের।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত বিভাজনের পর,
পত্রিকাটির প্রকাশনা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯শে অক্টোবর
তারিখে সকল কার্যক্রম ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। এই সময় পত্রিকাটির সম্পাদক
নির্বাচিত হন আবুল কালাম সামসুদ্দিন। অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন বার্তা সম্পাদক
খায়রুল কবির, মুজিবুর রহমান খান এবং আবু জাফর সামসুদ্দিন। এর কিছুদিনের মধ্যেই
দৈনিক আজাদ পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান সংবাদপত্রে পরিণত হয়।
১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে সরকার বিরোধী সংবাদ প্রকাশের কারণে দৈনিক আজাদের প্রকাশনায় বাধা
দেওয়া হয়। প্রথমে এই পত্রিকায় সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে নানাভাবে
হয়রানি করা হয়। বাংলা ভাষা-আন্দোলনের সময় এই পত্রিকা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল। এই
সময় আজাদ তীব্রভাবে ভাষা-আন্দোলনকারীদের সমর্থন করেছিলো ।
১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা-আন্দোলনকারীদের উপর গুলিবর্ষণ হলে— ২২শে ফেব্রুয়ারি তারিখে এই ঘটনার বিষয় নিয়ে একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছিল। এই সময় হত্যকাণ্ডের প্রতিবাদে দৈনিক আজাদের সম্পাদক আবুল কালাম সামসুদ্দিন গণপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১ মার্চের পর সরকারি চাপে পত্রিকাটি সরকারের পক্ষে প্রচার করা শুরু করে। কিন্তু আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী আচরণের কারণে, পত্রিকাটি আবার সরকারের বিপক্ষে প্রচার শুরু করে। এই সময় সরকারের দুর্নীতি এবং অনৈতিক কার্যক্রম এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় পত্রিকার নেতৃত্বে দিয়েছিলেন মওলানার ছোট ছেলে মোহাম্মদ কামরুল আনাম খান।
আগরতলা ষড়যন্ত্র এবং ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের গণ-আন্দোলনের সময় এই পত্রিকাটি পূর্ব-বাংলার মানুষের মুখপত্র হয়ে উঠেছিল। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে মওলানা মুহাম্মদ আকরাম খাঁ'র মৃত্যুর পর, পত্রিকাটির মালিকানা নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। এরপর থেকে পত্রিকাটি এর ঐতিহ্য হারাতে থাকে। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর কিছুদিন সরকারি ব্যবস্থাপনায় পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল। পরে পত্রিকাটিকে ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেওয়া হয়। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে পত্রিকাটি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়।