তাও

চীনের সিছুয়ান প্রদেশের ছিংছেন পর্বতে অবস্থিত তাও ধর্মের তীর্থস্থান


চীনে প্রচলিত অন্যতম ধর্ম। খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দিতে চীনে এই তাও ধর্মের উদ্ভব হয়। মূলত এই ধর্মের লোকেরা প্রকৃতি আর পূর্ব-পুরুষের পূজারী। কালের বিবর্তনে এই ধর্ম বহু সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল ছিলো। কিন্তু ধীরে ধীরে এই সকল বিচ্ছিন্ন সম্প্রদায় আবার দুটি প্রধান সম্প্রদায়ে পরিণত হয়েছে। এই সম্প্রদায় দুটি হলো- 'ছুয়েন চেন তাও' এবং 'চেন ই তাও'। চীনের হান জাতির মধ্যে তাওধর্মের প্রভাব বেশি।

 

এই ধর্মের আদি গ্রন্থের নাম তাও-তেহ-কিং। এই গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন লাউ-ৎজে (lao-tze)। চুয়াংসা নামক জনৈক ধর্মগুরু এই গ্রন্থের বিশদ ব্যাখ্যা করেন। গোড়ার দিকে এই ধর্মের মূল বিশ্বাস ছিল যে কোনো ঘটনার স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতি, নিয়মিত পরিবর্তন এবং স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তন হিসাবে যা আসে তাকে মান্য করা। সমস্ত কর্ম-প্রচেষ্টা ত্যাগ করে আধ্যাত্মিক ধ্যানের মধ্য দিয়ে লোভ-লালসা, প্রলোভন ত্যাগ করে জীবন অতিবাহিত করার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হতো। খ্রিষ্টীয় ৫ম শতকে এই মতবাদ অত্যন্ত সুসংগঠিত মতবাদ রূপে চীনে আদৃত হয়ে উঠেছিল। কালক্রমে এই ধর্মের সাথে বহু লোকজ দেবদেবী মিশে যায় এবং ক্রমে ক্রমে একটি পৌত্তালিক ধর্মে পরিণত হয়। এই সময় চীনের তাও সন্ন্যাসীরা কৃত্রিম উপায়ে স্বর্ণ তৈরির উপর বিশেষ গবেষণা শুরু করে। একই সাথে তারা অমরত্বলাভের ঔষধ অনুসন্ধানেও গবেষণা করে। বলাই বাহুল্য এ দুটো কোনোটিতেই তাঁরা সফল হতে পারেন নি।

এই ধর্মগ্রহণের জন্য বিশেষ কোনো নিয়মবিধি মানার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে সংগোপনে কত মানুষ এই ধর্মকে অনুসরণ করে যথাযথভাবে বলা যায় না। চীনে তাওধর্মের মন্দিরের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার এবং এসব মন্দিরে নরনারী ধর্ম-প্রচারকের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার।


সূত্র :
বাংলা বিশ্বকোষ (দ্বিতীয় খণ্ড)। নওরোজ কিতাবিস্তান। ডিসেম্বর ১৯৭৫।
http://bengali.cri.cn/chinaabc/chapter6/chapter60402.htm