সমাজ
ইংরেজি
:
society।
ইংরেজি
society
শব্দটির
আদি উৎস গ্রীক
socus locus (স্থানীয় ব্যাক্তিবর্গের ভিতর আন্তঃসম্পর্ক গড়ে তোলার প্রক্রিয়া বা
socius (সঙ্গী,অনুষঙ্গ,ব্যাবসায়ী
সঙ্গী)>ল্যাটিন
societas>
(অন্যান্যদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সঙ্গ)>ফরাসি
société>ইংরেজি
society।
সমবেতভাবে গমন করে সচল থাকে— এই রূপকারার্থে সমাজ
শব্দ
গঠিত। ব্যবহারিক
অর্থ—
১.
পরস্পরের সহযোগিতার মধ্য দিয়ে বসবাসকারী মানববৃন্দ। যেমনন
জনসমাজ,
মনুষ্যসমাজ, মানবসমাজ।
৩. একই পেশা বা আচরণের দ্বারা নির্দেশিত সম্প্রদায়। যেমন—
পণ্ডিত সমাজ, ভিক্ষুক সমাজ।
৩. ধর্ম বা আদর্শগত সম্প্রদায়।
যেমন—
খ্রিষ্টান সমাজ, মুসলমান সমাজ,
হিন্দু সমাজ; ব্রাহ্মসমাজ,
প্রাচীনসমাজ, নব্য সমাজ।
৪. ভাষা, জাতিগত সম্প্রদায়।
যেমন—
আর্যসমাজ, বঙ্গসমাজ।
৫. একই জাতীয় পশুর দল বা সমাবেশ,
যেমন—
পশুসমাজ।
সমাজ শব্দটি সামাজিক বিজ্ঞানের একটি কেন্দ্রীয় শব্দ।
বহুবিধ মানুষ ও গোষ্ঠীর
সমন্বিত
এমন
একটি প্রতিষ্ঠান,
যার সদস্যরা প্রথাগত পদ্ধতি
ও
প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এবং পারস্পরিক সহযোগিতামূলক আচরণের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট একটি
সাধারণ বিধি অনুসরণ করে এবং সমন্বিত মূল্যবোধের মধ্য দিয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
প্রতিষ্ঠা করে। এই সমন্বিত মানবগোষ্ঠী এবং এর সার্বিক কার্যক্রম ও আচরণের
দ্বারা
চর্চিত রূপই হলো
সমাজ। সমাজের সার্বিক রূপকে দুটি ধারায় ভাগ করা যায়। ভাগ দুটি হলো—
ক্রিয়ামূলক ও কাঠামোগত। ক্রিয়ামূলক সমাজের বিচার করা হয়—
সমাজের ভিতরের ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থ সংক্রান্ত বিষয়। পক্ষান্তরে কাঠামোগত
বিষয় হলো—
সমাজের লোকরীতিসমূহ,আদর্শ,প্রতিষ্ঠানসমূহ
ইত্যাদি।
সমাজের ভিতরে পরিবার, সংঘ, সামাজিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি সততা, বিশ্বাস, স্নেহ, সম্প্রীতি, সহযোগিতা ইত্যাদির মতো মানবিক মূল্যবোধগুলি ক্রিয়াশীল থাকে এবং এই সকল মূলবোধ সমাজকে গতিশীল করে রাখে। সমাজের সদস্যদের ভিতর একই সাথে সমরূপতা ও পার্থক্য যুগপৎ কাজ করে। যেমন—অভিন্ন স্বার্থ, আন্তরিকতা, বন্ধুত্ব ইত্যাদি গড়ে উঠে সমরূপতার সূত্রে। আধুনিককালে বিশ্বভ্রাতৃত্ব, বিশ্বনাগরিকত্বের ধারণা এই সমরূপতার একটি নব্য বৃহত্তর রূপ। আবার সমাজের ভিতরে বিভিন্ন মানুষের রুচি, স্বার্থ, চাহিদা ইত্যাদির পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও পরিবারের মতো প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লক্ষ্য করা পারস্পরিক সহযোগিতা, সমর্থন ও অপরিহার্য। যেমন— স্বামী স্ত্রী মিলে যে পরিবার গঠিত হয়,সেখানে এই শর্তগুলি কাজ করে।
মানুষের অভ্যন্তরীণ সুকুমার প্রবৃত্তি যা তার আচরণ, বিশ্বাস, প্রথা ইত্যাদির ভিতর দিয়ে প্রকাশ পায়, তা সমাজের সংস্কৃতি। আর ঘড়বাড়ি, রাস্তাঘাটের মতো যে সকল বস্তুগত উপাদনের দ্বারা মানুষ তার জীবন-যাপনকে স্বচ্ছন্দে অতিবাহিত করে, তা হলো সভ্যতা। সংস্কৃতি ও সভ্যতা মিলেই মানুষের সমাজ গড়ে উঠে।