বৈদিক ভাষা
ভারতে আগত
আর্য জাতির আদি ভাষা।

খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দের দিকে আর্যরা ভারতবর্ষে আসা শুরু করেছিল। উত্তর-পশ্চিম ভারত দিয়ে এই আগত এই জনগোষ্ঠী খ্রিষ্টপূর্ব ১১০০ অব্দের দিকে বঙ্গদেশ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। খ্রিষ্ট-পূর্ব ১০০০ বৎসরের ভিতরে ভারতীয় ইন্দো-ইরানিয়ান ভাষার পরিবর্তন ঘটে। এই সময়ের ভিতরে এই পরিবর্তিত ভাষার নমুনা পাওয়া যায় ঋগ্বেদ। ধারণা করা হয়- ঋগ্বেদের শ্লোকগুলো রচিত হয়েছিল খ্রিষ্ট-পূর্ব ১২০০-১০০০ বৎসরের ভিতরে। বিভিন্ন ঋষিদের রচিত বিভিন্ন শ্লোকগুলো একত্রিত করে যে সংকলিত গ্রন্থ প্রস্তুত করা হয়, তাই ঋগ্বেদ নামে পরিচিতি লাভ করে। এরপর লেখা হয় অন্য তিনটি বেদ এবং এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য গ্রন্থ। গোড়ার দিকে সকল বেদ সংকলিত হয়ে একটি বেদ-আকারে ছিল। বেদের এই ভাষাকে বলা হয় বৈদিক ভাষা।

বৈদিক ভাষার নমুনা হিসেবে বেদ, সংহিতা, আরণ্যক এবং উপনিষদের উল্লেখ করা হয়। এই সকল গ্রন্থের ভাষাকে বৈদিক সাহিত্যের ভাষা বলা হয়। বেদ এবং এর অংশ হিসেবে সংহিতা, আরণ্যক এবং উপনিষদ রচিত হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ থেকে ৬০০ অব্দের ভিতরে। কালাণুক্রমিক বিচারে এই গ্রন্থগুলোকে তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়। এই ভাগগুলো হলো

বৈদিক ভাষার মূল গ্রন্থ বেদকে কৃষ্ণদ্বৈপায়ন চারটি ভাগে ভাগ করেছিলেন। এই কারণে তিনি বেদব্যাস নাম লাভ করেন। এই চারটি বেদের ভিতরে প্রধান বেদ হিসেবে ঋক, সাম এবং যজুকে বিবেচনা করা হয়। অবশিষ্ট অথর্ববেদকে অযজ্ঞীয় বেদ বলা হয়। বেদের যজ্ঞীয় কার্যের বিবিরণ বা বিধি নিয়ে যে গ্রন্থ রচিত হয়েছিল তার সাধারণ নাম ব্রাহ্মণ। প্রতিটি বেদের একাধিক ব্রাহ্মণ ছিল। বর্তমানে সকল ব্রাহ্মণ পাওয়া যায় না। ব্রাহ্মণগুলোর ভিতরে ঋগ্বেদের 'ঐতরেয় ব্রাহ্মণ' সর্বপ্রাচীন হিসেবে গণ্য করা হয়। আনুমাণিক খ্রিষ্ট-পূর্ব ৮০০ অব্দের দিকে এই ব্রাহ্মণটি রচিত হয়েছিল। সামবেদের উল্লেখযোগ্য ব্রাহ্মণ-এর নাম তাণ্ড্য। এর উপনিষদ হলে ছান্দোগ্য। যজুর্বেদের দুটি শাখা রয়েছে। এই শাখা দুটির নাম শুক্ল ও কৃষ্ণ। এর শুক্ল অংশের বর্ণিত হয়েছে পৃথক পৃথকভাবে পদ্য এবং গদ্যে রচিত। কিন্তু কৃষ্ণ যজুর্বেদ গদ্যপদ্যের সংমিশ্রণ রচিত। এর ব্রাহ্মণ শতপথ। আর সংহিতার নাম বাজসনেয়ি সংহিতা। কৃষ্ণ যজুর্বেদের সংহিতাগুলোর নাম তৈত্তরীয়, মৈত্রায়ণি, কাঠক। ব্যাকরণ এবং শব্দের বিচারে বৈদিক ভাষা সংস্কৃত থেকে আলাদা করা হয়। যজুর্বেদের ভাষারীতি রীতি থেকে পরবর্তী সময়ে তৈরি হয়েছিল সংস্কৃত ভাষা।

অযজ্ঞীয় বেদ হিসেবে যজুর্বেদ পরিচিত। ধারণা করা হয়, এই বেদের ভাষা থেকে প্রাচীন আর্য প্রাকৃত তৈরি হয়েছিল। সাধারণভাবে ভাষার বিবর্তেনের আদি রূপটি প্রাকৃত নামেই অভিহিত করা হয়।


সূত্র :
ভাষা-প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। রূপা। বৈশাখ ১৩৯৬।
ভাষার ইতিবৃ্ত্ত।
সুকুমার সেন। আনন্দ পাবলিশারস্ প্রাইভেট লিমিটেড। নভেম্বর ১৯৯৪।
বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত
। ডঃ মুহম্মদ শহীদউল্লাহ। মাওলা ব্রাদার্স। জুলাই ১৯৯৮
বাংলা সাহিত্যের কথা
। ডঃ মুহম্মদ শহীদউল্লাহ। মাওলা ব্রাদার্স।
সাধারণ ভাষা বিজ্ঞান ও বাংলা ভাষা
। ডঃ রামেশ্বর শ।
http://en.wikipedia.org/wiki/Indo-Aryan_languages
http://en.wikipedia.org/wiki/Magadhi_Prakrit