সূর্য-নমস্কার
যোগশাস্ত্র মতে- একটি
ক্রিয়া বিশেষ। ভারতীয়
ঋষিরা সূর্যকে দেবতা জ্ঞানে প্রণাম করতেন। এখনও অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বী উন্মুক্ত
জলাশয়ে স্নানের সময় অর্ধমগ্ন অবস্থায় সূর্যের দিকে নমস্কার ভঙ্গিতে হাত তুলে
সূর্যকে প্রণাম করে থাকেন। যোগ শাস্ত্রে বর্ণিত সূর্য নমস্কার অন্য রকম।
এক্ষেত্রে দেহ ভঙ্গিমা কোন নির্দিষ্ট আসনেকে স্থির করে রাখা হয় না। মূলত
অনেকগুলো দেহ ভঙ্গিমা নিয়ে সূর্য নমস্কার রচিত হয়। এই ভঙ্গিমা বেশ ধীর গতিতে পর পর
করা হয়। বিষয়টি আমাদের স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের ড্রিল করার মতো।
এই ভঙ্গিমাকে বিভিন্ন
ভাগে ভাগ করে বর্ণনা করা হলে,
অনেকগুলো পৃথক পৃথক
ভঙ্গিমায় পাওয়া যায়। অধিকাংশ যোগশাস্ত্রের বইতে মোট ১৬টি পর্যায় হিসাবে উল্লেখ
করা হয়েছে। কিন্তু যথাযথভাবে ভাগ করলে এই সংখ্যা আরও বেশি হবে। বর্ণনার সুবিধার
জন্য এই পর্যায়গুলোকে ১২টি ভাগে ভাগ করে দেখানো।
১. প্রথমে সোজা হয়ে
দাঁড়ান। এরপর দুই হাত বুকের কাছে এনে নমস্কারের ভঙ্গিতে কিছুক্ষণ স্থির থাকুন এবং
চার বার বুক ভরে শ্বাস নিন।
১ |
২ |
৩ |
২. এবার দুই হাত
সোজা মাথার উপরে তুলে আনুন। হাত দুটো কান স্পর্শ করে মাথার দিকে প্রসারিত করে,
দুই হাতের তালু একত্রিত
করে নমষ্কারের ভঙ্গিতে রাখুন। এবার দুই হাতের তালু কিছুটা উন্মুক্ত করে
অর্ধচন্দ্রাসনের ভঙ্গিতে শরীরকে কিছুটা পিছনের দিকে বাঁকান।
৩. এই অবস্থায় ৪ সেকেণ্ড থেকে
স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস অব্যাহত রেখেই শরীরকে সোজা করুন। এরপর কোন সময় ব্যায় না
করেই নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে,
শরীরকে সামনের দিকে বাঁকিয়ে দুই
হাতের তালু মাটিতে রাখুন। এ সময় গোড়ালি থেকে নিতক্ব পর্যন্ত সোজা রাখুন।
মাথাটাকে হাঁটুর সাথে সংযুক্ত করুন।
৪. এই অবস্থায়
হাঁটুর উপর থেকে মুখ না তুলে,
ধীরে ধীরে বসে পড়ুন।
এবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পিছনের দিকে একটি পা বাড়িয়ে দিন। এবার দুই হাতের উপর ভর
দিয়ে হাঁটু থেকে মুখ তুলে ধরুন।
৪ |
৫ |
৬ |
৫. এবার অপর পা সোজা
করে আরেক পায়ের পাশাপাশি আনুন। পা দুটো সোজা রেখে শরীরের ভার দুই হাতের উপর
অর্পণ করুন।
৬. এবার বুক ভরে শ্বাস
নিতে নিতে,
বুক ডনের ভঙ্গিতে পুরো শরীরকে
মাটিতে স্থাপন করুন। এই সময় হাত দুটোর কনুই বরাবর ভাঁজ হবে এবং কনুই পিঠের উপরের
দিকে দৃশ্যমান হবে।
৭. এবার শ্বাস ছাড়তে
ছাড়তে বুক ডনের ভঙ্গিতে শরীরের উর্ধাংশ উঁচু করুন। এই সময় হাঁটু মাটি স্পর্শ করে
থাকবে এবং মাথাটা উঁচু করে রাখতে হবে।
৭ |
৮ |
৯ |
৮. এবার দুই হাতর এবং
পায়ের অগ্রভাগের উপর ভর দিয়ে শরীরকে মাটি থেকে উপরে তুলুন। এই সময় পায়ের গোড়ালি
থেকে মাথা পর্যন্ত একটি সরলরেখা অনুসরণ করবে।
৯. একটি পা সামনে বাড়িয়ে
দিয়ে হাতের বরাবর স্থাপন করুন। এই সময় হাঁটু ভাঁজ করে বুক বরাবর রাখুন। অপর পা
দ্বারা ভূমি স্পর্শ করুন।
১০. এবার ভাঁজ করা
সামনের পায়ের হাঁটুতে মাথা ঠেকিয়ে,
পাছা উঁচু করতে থাকুন।
পিছনের পা এনে সামনের পায়ের বরাবর রেখে পা দুটো সোজা করুন।
১০ |
১১ |
১২ |
১১. ধীরে ধীরে সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং হাত দুটো মাথার উপরে তুলে আনুন। এবার
অর্ধচন্দ্রাসনের মতো করে পিছনের দিকে শরীর বাঁকিয়ে দাঁড়ান।
১২. এবার পুনরায় সোজা হয়ে, হাত দুটো বুকের কাছে নামিয়ে এনে নমস্কারের ভঙ্গিতে দাঁড়ান।
বিশেষ
সতর্কতা
উচ্চ রক্তচাপের
রোগীরা সূর্য নমস্কার করবেন না।
উপকারিতা
১. শরীরে রক্ত চলাচল
বৃদ্ধি পায় ও শরীরের আড়ষ্ঠভাব কেটে যায়।
২. হৃদপিণ্ড,
ফুসফুস,
পাকস্থলী,
প্লীহা যকৃত,
কিডনী সবল হয়।
৩. স্নায়ুমণ্ডলের
সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।
৪. শরীরের অতিরিক্ত
মেদবৃদ্ধি রহিত হয়।
সূত্র :
যোগাসনে রোগ আরোগ্য। ডঃ রমেন মজুমদার
রোগারোগ্যে যোগব্যায়াম। কানাইলাল সাহা
যোগ সন্দর্শন। ডাঃ দিব্যসুন্দর দাস
যোগ ব্যায়াম। সবিতা মল্লিক