Kingdom: Animalia
Phylum: Arthropoda
Class: Insecta
Order: Lepidoptera
Family: Bombycidae
Genus: Bombyx
Species: Bombyx mori
(Linnaeus, 1758)

রেশম পোকা

ইংরেজি: silkworm
বৈজ্ঞানিক নাম: Bombyx mori


প্রাণিজগতের আর্থ্রোপোডা পর্বের Bombyx গণের এক প্রকার পতঙ্গ। এই পতঙ্গের শূককীট দশার শেষ পর্যায়ে, এদের শরীরের লালা গ্রন্থি নিঃসৃত রস বাতাসের সংস্পর্শে এলে তা বিশেষ ধরনের আঁশে পরিণত হয়। এই আঁশকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সুতায় পরিণত করা। এই সূতাই রেশমসুতা নামে পরিচিত। এই কারণে রেশম উৎপাদনকারী পতঙ্গ বা পোকাকে  'রেশম পোকা' বলা হয়।

 

বর্তমানে রেশম সুতা উৎপন্নের জন্য এই পোকার বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। এই পোকা প্রতিপালনের জন্য সাধারণত তুঁত গাছ ব্যবহার করা হয়। মূলত তুঁত কাছের পাতা খেয়ে এদের শূককীট বড় হয়ে উঠে এবং রেশমগুটি তৈরি করে। বাংলাদেশের যেসব উঁচু স্থানে তুঁত গাছ জন্মানো যায়, সেসব স্থানে রেশমপোকার চাষ করা হয়। সাধারণত ২১-২৯ তাপমাত্রা এবং ৯০% আর্দ্রতা রেশম চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। আবহাওয়া ও উর্বর মাটির জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশি রেশম চাষ হয়। এছাড়া নাটোর, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, রংপুর, দিনাজপুর ও সিলেটে রেশম পোকার চাষ করা হয়।

 

রেশম চাষের জন্য প্রাথমিকভাবে তুঁত গাছের চাষ করা হয়। কারণ রেশম পোকা তুঁত গাছের পাতা খেয়ে জীবন ধারণ করে। সাদা তুঁত, কালো তুঁত এবং লাল তুঁত-এ তিন প্রজাতির গাছে রেশম পোকা চাষ করা যায়। তবে সাদা তুঁত গাছই রেশম পোকার সবচেয়ে পছন্দের। তুঁত গাছ একবার লাগালে ২০-২৫ বছর ধরে পাতা দেয়। বিভিন্ন উচ্চতায় কেটে তুঁত গাছকে ‘ঝুপি’, ‘ঝাড়’ ও ‘গাছতুঁত’ হিসেবে চাষ করা যায়।

 

রেশম পোকার জীবনচক্র
রেশম পোকার জীবনে চারটি পর্যায়ে বিভক্ত। এই পর্যায় চারটি হলো
তা হল ডিম (egg), শূককীট (larva), মূককীট (pupa) ও পূর্ণাঙ্গ পোকা। পূর্ণাঙ্গ দশার পোকাকে সাথারণভাবে মথ (moth) বলে।


রেশম পোকা নিশাচর। এদের গায়ের রঙও অনুজ্জ্বল। স্ত্রী মথ গাছের পাতার উপরে চলার সময় প্রায় ৪০০- ৫০০ ডিম পাড়ে। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে ডিম পাড়ে এবং ডিম পাড়ার শেষে স্ত্রী মথ মারা যায়। ডিমের রঙ ফ্যাকাশে হলুদ। ৮-৯ দিনের মাথায় ডিমের গায়ে কালো কালো দাগ পড়ে। প্রায় ১০ দিনের দিকে পুরো ডিম কালচে হয়ে যায়। এরপর ১১-১২ দিনের মাথায় ডিম ফুটে শূককীট বের হয়। শূককীটের প্রাথমিক দশায় পুল বলা হয়।

প্রাথমিক দশায় এদের গায়ের রঙ থাকে হাল্কা বাদমী আভাযুক্ত সাদা। এরা অত্যন্ত ক্ষুধার্ত থাকে। এরা প্রচুর পরিমাণ তুঁত গাছের পাতা খেয়ে বড় হতে থাকে। এই সময় এরা দিনে প্রায় ১১-১৩ বার তুঁত পাতা খায়। এরপর ১৮-২৪ ঘণ্টা নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকে। এরপর এরা দেহের খোলস পাল্টায় এবং আবার তুঁত পাতা খাওয়া শুরু করে।  এইভাবে এরা চারবার খোলস বদলায়। পূর্ণাঙ্গ শূককীট প্রায় দুই ইঞ্চি লম্বা হয় এবং তিনটি খণ্ডে (মস্তক, বক্ষ ও উদর) বিভক্ত থাকে। এদের বক্ষে তিন জোড়া এবং উদরে পাঁচ জোড়া পা থাকে। দেহের পার্শ্ব বরাবর দশ জোড়া শ্বাস-ছিদ্র থাকে। চতুর্থবার খোলস বদলানোর পর এরা খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং মূককীটে পরিণত হতে শুরু করে।


পূর্ণাঙ্গ মূককীটের দেহের ভিতরে একটি লম্বা রেশম গ্রন্থি থাকে। গ্রন্থিতে থাকে এক প্রকার রস। নালী দিয়ে এ রস মুখের বাইরে আসে। নালীর নাম স্পিনারেট (Spinneret)। বাতাসের সংস্পর্শে রস শক্ত হয়ে যায়। এরা এই সময় মিনিটে প্রায় ৬৫ বার মুখ ঘুরিয়ে রস দিয়ে দেহের চারপাশে আবরণ তৈরি করে। ধীরে ধীরে এই আবরণ শক্ত খোলসে পরিণত হয়। এই আবরণসহ মূককীটকে গুটি (Cocoon) বলে। রেশম পোকার এই পরিবর্তনকে মেটামোর্ফোসিস (Metamorphosis) বলে। এই সময় এদের দেহের আকার ছোটো হয়ে যায়। প্রায় ১০ দিন মূককীট দশায় থাকার পর, এদের দেহ থেকে এক প্রকার রস নিঃসৃত হয়। এই রস খোলসের একটি প্রান্ত গলিয়ে ফেলে। এরপর এরা গুটি কেটে বাইরে বেরিয়ে আসে। এই সময়ই রেশম পোকা তার জীবনচক্রে পূর্ণাঙ্গ মথ দশা পায়। মথ দশায় রেশম পোকার দেহ মাথা, বক্ষ ও উদরে বিভক্ত থাকে। মাথায় এক জোড়া পুঞ্জাক্ষী ও এক জোড়া এন্টেনা থাকে। এর বক্ষস্থলের দুই পাশে চারটি (২ +২) পা থাকে। এছাড়া অঙ্কীয় দেশের দুই পাশে থাকে। ৬টি (৩+৩) পা থাকে।

 

গুটি কেটে পুরুষ মথগুলো আগে বেরিয়ে আসে। পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় স্ত্রী-পুরুষ মথ যৌন মিলনে অংশ নেয়। এরপর পুরুষ পথটি মারা যায়। আর স্ত্রী মথ ডিম পাড়ার পর মারা যায়।

 

রেশমগুটি থেকে রেশম সুতা সংগ্রহ
শূককীট দশা শেষ করে রেশম পোকা তার খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে, দেহ নিঃসৃত লালা দিয়ে দেহকে আবৃত করে ফেলে এবং একটি ডিম্বাকৃতির গুটিতে পরিণত হয়। রেশম চাষীরা এই গুটি গরম পানিতে চুবিয়ে রেশমপোকা মেরে ফেলে। একই সাথে গরম পানির সংস্পর্শে গুটি নরম হয়ে আলগা হয়ে যায়। এই সময় চাষীরা যত্নের সাথে কাঠি দিয়ে রেশম সুতার একটি প্রান্ত বের করে আনে। এই প্রান্ত ধরে ধীরে ধীরে টেনে টেনে দীর্ঘ সুতা বের করে আনা হয়। এই সুতাকেই রেশম সুতা বলা হয়।

 

রেশম সূতার ইতিহাস
চীন দেশে সর্বপ্রথম রেশম সুতা আবিস্কৃত হয়। এর সর্বপ্রাচীন নমুনা পাওয়া গেছে খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দের। কথিত আছেখ্রিষ্টপূর্ব ২৭ শতাব্দীতে লেইজু (Leizu) নামের এক সম্রাজ্ঞী বাগানে বসে সহচরীদের নিয়ে চা পান করছিলেন, এমন সময় একটি রেশমগুটি তার চায়ের পাত্রে এসে পড়ে, তার এক বালিকা সহচরী দ্রুত পাত্র থেকে গুটিটি তুলে নেয়ার চেষ্টা করেন। এই সময় তিনি লক্ষ্য করেন যে, গুটি থেকে এক ধরনের মিহি সুতো বের হচ্ছে। সম্রাজ্ঞী বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন যে, এই সুতা থেকে উন্নত মানের কাপড় বোনা সম্ভব। এরপর সম্রাজ্ঞীর আদেশে রেশমগুটি সংগ্রহ করে সুতা তৈরি করা হয় এবং পরে সেই সুতা থেকে কাপড় তৈরি করা হয়। পরে সম্রাজ্ঞীর আদেশে প্রাসাদের ভিতরে মেয়েরা প্রথম রেশম কাপড় তৈরি করা শুরু করে। সে সময় প্রাসাদ রমণীদের একটি বড় বিনোদনের বিষয় ছিল রেশম বুনন। তারপর হাজার বছর ধরে রেশমি কাপড় কিভাবে তৈরি করা হয়, তা চীনারা গোপন রাখে। রেশম আবিষ্কারের ফলে চিত্রশিল্পের ক্ষেত্র এক বিশাল অগ্রগতি হয়। চীনে রেশমি কাপড়ের উপর ওপর ছবি এঁকে এক স্বতন্ত্র ধারা তৈরি হয়েছিল। বাইজেন্টাইন সম্রাট জাস্টেনিয়ানের আদেশে দুজন ইউরোপীয় পাদ্রী গোপনে রেশম উৎপাদনের কৌশল শিখে নেন। ৫৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে, ইউরোপে রেশম চাষ শুরু হয়। ১২০০ খ্রিষ্টাব্দে ইতালির পালেরমো, কাতানযারো এবং কোমো ছিল ইউরোপের সর্বাধিক রেশম উৎপাদন শহরে পরিণত হয়েছিল।

 

বর্তমানে নানা ধরনের রেশম তৈরি হয়ে থাকে। যেমন

বঙ্গদেশে রেশম চাষ:

বহু আগে থেকে বাংলাদেশে রেশমের চাষ হয়ে আসছে। চীন থেকে রেশমের চাষ বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল, না কি এখানাকার স্থানীয় মানুষ নিজেরাই আবিষ্কার করেছিল এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। সংস্কৃত ভাষায় মিহি রেশমের কাপড়কে বলা হয় অংশুপট্ট

প্রাচীনকালে বাংলাদেশে উৎকৃষ্টতার বিচারে রেশম কাপড়কে ৩টি শ্রেণিতে ভাগ করা হতো। এই ভাগ তিনটি হলো

 


সূত্র: