Kingdom: Animalia
Phylum: Chordata
Class: Actinopterygii
Order: Siluriformes
Family: Clariidae
Genus: Clarias
Species: Clarias batrachus
(Linnaeus, 1758)
সমনাম
Clarias assamensis
Clarias punctatus
Silurus batrachus

মাগুর
ইংরেজি : walking catfish
বৈজ্ঞানিক নাম Clarias batrachus (Linnaeus, 1758) 

Clariidae  গোত্রের এক প্রকার মিঠা পানির মাছ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাচীনতম মাছ। বাংলাদেশে এই মাছ খাল, বিল, নদী-নালা, হাওড়-বাওড়-এর তলদেশে বাস করে। তবে উপকূলীয় অঞ্চলের অল্প লবণাক্ত পানিতে বাস করতে পারে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোচীন, ফিলিপাইন, হংকং, দক্ষিণ চীন এবং ইন্দোনেশিয়াতে পাওয়া যায়। বর্তমানে এই মাছের বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়।

এই মাছ কখনো কখনো ধান ক্ষেতের কর্দমাক্ত বাস করে। গ্রীষ্মকালে পানি শুকিয়ে গেলে, জলাশয়ের তলদেশের কাদায় বা গর্তের মধ্যেও বাস করে। এই মাছ মাটির উপর দিয়ে বুকের পাখনা ব্যবহার করে সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলাচল করতে পারে। এই কারণে, পাশ্চাত্যে এই মাছকে walking catfish বলা হয়। এই মাছের অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে বাতাস থেকে শ্বাস নিতে পারে।

মাগুর মাছের দৈহিক গড়ন শিং মাছের মতো। তবে এদের মাথা শিং মাছের চেয়ে বেশ বড়। এদের দেহ লম্বা। আকারে সর্বোচ্চ ৩৫-৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। দেহাংশের সামনের দিকে লম্বা নলাকার কিন্তু পিছনের দিক চ্যাপটা। মাথা উপরে ও নিচে চ্যাপ্টা। মুখে ৪ জোড়া লম্বা শুঁড় আছে। পূর্ণবয়স্ক মাছের গায়ের রং বাদামী অথবা ধূসর কালো। ছোট অবস্থায় লাল থাকে। এদের দেহে কোনো আঁশ নেই।

এদের পৃষ্ঠপাখনা এবং পায়ুপাখনা লম্বা। পৃষ্ঠপাখনায় কোনো কাঁটা থাকে না। বক্ষপাখনা কাঁটা আছে এবং এর ভিতরের দিকটা করাতের কাঁটাযুক্ত। পায়ুপাখনা বেশ লম্বা এবং পুচ্ছ পাখনা গোলাকার। এদের ফুলকার পৃষ্ঠদেশে একটি বায়ু থলি আছে। এই থলিটি পিঠের নিচ দিয়ে লেজ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই থলি থাকার কারণে এরা দীর্ঘ সময় পানির উপরে জীবিত থাকতে পারে।  মূলত এই থলি জাতীয় অতিরিক্ত শ্বসন অঙ্গ দ্বারা বাতাস থেকে সরসারি অক্সিজেন গ্রহণ করে থাকে। মাগুর মাছের বায়ু শোষক এই অঙ্গকে বলা হয় আরবোরিসেন্ট অঙ্গ (Arborescent organ)। পুরুষ মাছের দেহে বলয় দেখা যায়। স্ত্রী মাছের দেহে বলয় নেই।

শিং মাছের মতো এই মাছও সাধারণত রাক্ষুসে । এরা বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়, মাছে পোনা, জলজ প্রাণীর শূককীট বা মূককীট, জলদ উদ্ভিদ, প্রোটোজোয়া, শামুক ঝিনুক, কাদা, বালি ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে।

শিং-মাগুর মাছ এক বছরেই পরিপক্বতা লাভ করে এবং প্রজননক্ষম হয়। এরা সাধারণত বছরে একবার প্রজনন করে থাকে। প্রথম বৎসরেই এ মাছ লম্বায় প্রায় ২০-৩০ সেমি হয়ে যৌবন প্রাপ্ত হয়। সাধারণত মাগুর মাছের উপযুক্ত প্রজননকাল এপ্রিল মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে মে-জুন-জুলাই মাসে সর্বোচ্চ প্রজনন সম্পন্ন করে থাকে। ৮০-১৫০ গ্রাম ওজনের মাগুর মাছের ডিম ধারণ ক্ষমতা ৮-১২ হাজার।
এরা প্লাবনভূমি, ধানক্ষেত, পাটক্ষেত এর মত প্রাকৃতিক পরিবেশের অগভীর ও উদ্ভিদময় এলাকার (জলজ ঝোপ-ঝাড়ে) জলাশয়ে অগভীর তলদেশে গর্তের মতো গঠন তৈরি করে তার মধ্যে মায়েরা ডিম পাড়ে। এর পরপরই বাবারা শুক্রাণু নির্গত করে ডিমকে নিষিক্ত করে থাকে। পরিপক্ব ডিম হালকা সবুজ থেকে তামাটে বর্ণের হয়। নিষিক্ত ডিম আঠালো হয় এবং গর্ত সংলগ্ন নিমজ্জিত আগাছা, তৃণ, ডাল-পালা ইত্যাদিতে লেগে থাকে। মা-বাবা মাছ নিষিক্ত ডিমগুলো পাহারা দেয় যা ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবার পর যতদিনে না তারা স্বনির্ভর হয় ততদিন পর্যন্ত চলে।

পুষ্টিগুণ : প্রতি ১০০ গ্রাম শিং মাছে ৩২.০ গ্রাম আমিষ, ২.০ গ্রাম চর্বি, ১৭২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩০০ মিলিগ্রাম ফসফরাস ও ০.৭ মিলিগ্রাম লৌহ থাকে।

খেপলা জাল, টানা জাল, বেড় জাল, তোঁচা জাল, ডঁচ, বড়শি ইত্যাদি ব্যবহার করে শিং মাছ ধরা হয়।


সূত্র :