Kingdom:
Animalia |
শিং
বাংলা সমনাম :
শিং, সিঙ্গি, শিঙি, জিয়াল, জিওল
ইংরেজি :
Stinging Catfish
বৈজ্ঞানিক নাম
Heteropneustes fossilis
(Bloch, 1794)
Heteropneustidae
গোত্রের Heteropneustes
গণের এক প্রকার মিঠা পানির মাছ। সাধারণত নদীতে এদের দেখা যায়। তবে বড় খাল বা বিলে
এই মাছ দেখা হয়। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, চীন, পাকিস্তান,
মায়ানমার এবং থাইল্যান্ডে এই মাছ পাওয়া যায়। এই মাছ খাল, বিল, নদী-নালা,
হাওড়-বাওড়-এর তলদেশে বাস করে। কখনো কখনো ধান ক্ষেতের কর্দমাক্ত বাস করে। গ্রীষ্মকালে পানি
শুকিয়ে গেলে, জলাশয়ের তলদেশের কাদায় বা গর্তের মধ্যে বাস করে।
এদের দেহ লম্বা। আকারে সর্বোচ্চ ৩৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। শিং মাছের দেহাংশের সামনের দিকে লম্বা নলাকার কিন্তু পিছনের দিক চ্যাপটা। মাথা উপরে ও নিচের দিক চ্যাপ্টা। মুখে ৪ জোড়া লম্বা শুড় এবং মাথার দুপাশে বিষাক্ত দুটি কাঁটা আছে। পূর্ণবয়স্ক মাছের গায়ের রং বাদামী অথবা কালো হয়। ছোট অবস্থায় লাল থাকে।
এদের পৃষ্ঠপাখনা এবং পায়ুপাখনা লম্বা। পৃষ্ঠপাখনায় কোনো কাঁটা থাকে না। বক্ষপাখনা কাঁটা আছে এবং এর ভিতরের দিকটা করাতের কাঁটাযুক্ত। পায়ুপাখনা বেশ লম্বা এবং পুচ্ছ পাখনা গোলাকার। এদের ফুলকার পৃষ্ঠদেশে একটি বায়ু থলি আছে। এই থলিটি পিঠের নিচ দিয়ে লেজ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই থলি থাকার কারণে এরা দীর্ঘ সময় পানির উপরে জীবিত থাকতে পারে। মূলত এই থলি জাতীয় অতিরিক্ত শ্বসন অঙ্গ দ্বারা বাতাস থেকে সরসারি অক্সিজেন গ্রহণ করে থাকে। শিং মাছের মাছের বায়ু থলিকে বলা হয় Tubular air sac।
শিং মাছকে সাধারণত রাক্ষুসে মাছ বলা হয়। এরা বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়, মাছে পোনা, জলজ প্রাণীর শূককীট বা মূককীট, জলদ উদ্ভিদ, প্রোটোজোয়া, শামুক ঝিনুক, কাদা, বালি ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে।
প্রাকৃতিক পরিবেশে ৩৫-৫০ সেমি গভীর পানিতে
শিং মাছ বছরে একবার প্রজনন করে। এপ্রিল হতে জুলাই মাস এদের প্রজননের উপযুক্ত সময়।
তবে বর্ষা মৌসুমে প্রজনন বেশি হয়। সাধারণ নিচু পতিত জলাশয় এদের ডিম ছাড়ার উপযুক্ত
স্থান। একটি পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী শিং মাছ ২,৮৪৩-৪৪,৭২৪টি ডিম ছাড়তে পারে। ডিম ছাড়ার
২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে পোনা বের হয়। প্রথম পাঁচদিন এই পোনাগুলো কুসুম থলি থেকে
খাদ্য গ্রহণ করে।
পুষ্টিগুণ : প্রতি ১০০ গ্রাম শিং মাছে ২৩.০ গ্রাম আমিষ, ০.৬ গ্রাম চর্বি, ৬৭০
মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৬৫০ মিলিগ্রাম ফসফরাস থাকে।
খেপলা জাল, টানা জাল, বেড় জাল, তোঁচা জাল, ডঁচ, বড়শি ইত্যাদি ব্যবহার করে শিং মাছ
ধরা হয়।
একসময় শিং মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে চলে গিয়েছিল। বর্তমানে এই মাছের বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়।
সূত্র :