স্নায়ুকোষ
বানান বিশ্লেষণ: স্+ন্+আ+য়্+উ+ক্+ও+ষ্+অ।
উচ্চারণ:
sna
.u.koʃ (স্নায়্ উ. কোশ্)

স্নায়্ উ [স্না ধ্বনির সাথে অধর্ব স্বরধ্বনি রূপে য় যুক্ত হয়ে ‌একাক্ষর স্নায়্ ধ্বনি উৎপন্ন হয়। এর সাথের উ ধ্বনি বিষুক্ত হয়ে পৃথক ধ্বনি উৎপন্ন করে।]

কোশ্ [কো ধ্বনির সাথে রুদ্ধ শ ধ্বনি একত্রিত হয়ে একাক্ষর কোশ্ ধ্বনি তৈরি করে।]

শব্দ-উৎস: সংস্কৃত स्नायु (স্নায়ু)>বাংলা স্নায়ু+ সংস্কৃত कोष (কোষ)>বাংলা কোষ।
রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ: স্নায়ুর (স্নায়ুতন্ত্র) কোষ/ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস।
পদ : বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { | সোমাটিক কোষ | কোষ | জীবন্তবস্তু  | দৈহিক-লক্ষ্যবস্তু | দৈহিক সত্তা | সত্তা |}
অর্থ:
জীবদেহের স্নায়ুতন্ত্রের অন্তর্গত একটি উপাদান।
ইংরেজি :
neuron। বাংলাতে নিউরোন শব্দ ব্যবহৃত হয়।

মানবদেহের স্নায়ুতন্ত্রের অন্তর্গত স্নায়ুর একটি উপাদান। একে বলা হয়কোষদেহসহ সমস্ত রকম প্রবর্ধক নিয়ে গঠিত স্নায়ুতন্ত্রের গঠনমূলক ও কার্যমূলক একক। এই কোষ বৈদ্যুতিক এবং রাসায়নিক সঙ্কেতের মাধ্যমে তথ্যকে প্রক্রিয়াজাত করে এবং এবং অন্যত্র সঞ্চালন করে। স্নায়ুকোষের একটি প্রান্তে থাকে ডেন্ড্রাইট নামক একটি অংশে থাকে এ্যাক্সোনের শেষপ্রান্ত। এই কোষের রাসায়নিক সঙ্কেত প্রবাহিত হয় সিন্যাপ্সের মাধ্যমে। অংসখ্য নিউরোন পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে একটি নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি করে।  এই কারণে স্নায়ুকোষকে বলা হয় স্নায়ুতন্ত্রের মূল উপকরণ।

স্নায়ুকোষের গাঠনিক দিক বিবেচনা করে ২টি ভাগ ভাগ করা হয়। এই ভাগ ৩টি হলো কোষদেহ ও প্রবর্ধক।

স্নায়ুকোষের কাজের প্রকৃতি অনুসারে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়ে থাকে। এগুলো হলো সংজ্ঞাবহ স্নায়ুকোষ, আজ্ঞাবহ স্নায়ুকোষ ও সহযোগী স্নায়ুকোষ ।

কোষদেহ থেকে উৎপন্ন প্রবর্ধকের সংখ্যানুযায়ী স্নায়ুকোষকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগগুলো হলো।

উল্লেখ্য  দুটি স্নায়ুকোষের ভিতরে কিছুটা ফাঁকা জায়গা থাকে। এই ফাঁকা জায়গাকে বলা হয় সিন্যাপ্স (synaps)। এই ফাঁকা জায়গায় থেকে কিছু রাসায়ানিক দ্রব্য। এই রাসায়নিক দ্রব্যাদির হ্রাস বৃদ্ধির কারণে মানুষের নানা ধরনের আকাঙ্ক্ষা, বিষণ্নতার সৃষ্টি হয়। এই জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্যাদির ভিতরে রয়েছে সেরোটনিন, এনকেফালিন, গ্লুটামেট, গাবা ইত্যাদি।

স্নায়ুকোষের কর্ম পদ্ধতি
নিউরোনের এ্যাক্সোনের ভিতর দিয়ে তথ্য সঞ্চালিত হয় বৈদ্যুতিক স্পন্দনের দ্বারা। সাধারণত নিউরোন নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। এই অবস্থায় নিউরোনে প্রায় ৭০ মিলিভোল্ট ঋণাত্মক বিদ্যুৎ সঞ্চিত থাকে। বাইরের কোনো তথ্য ভিতরে প্রবেশ করে বৈদ্যুতিক ধনাত্মক আধান হিসেবে। নিউরোনে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১০ কোটি ধনাত্মক আধান প্রবেশ করতে পারে। একটি নিউরোনে আগত ধনাত্মক আধনের পরিমাণ নিউরোনের ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন অতিরিক্ত আধান পার্শ্ববর্তী নিউরোনে চলে যায়। এই প্রক্রিয়া নিউরোন থেকে নিউরোনে তথ্যসঙ্কেত সঞ্চালিত হয়। একবার কোনো তথ্য সঞ্চালনের কোনো ঘটনা ঘটে, তারপর কয়েক মিলি সেকেন্ড নিউরোন নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এই সময় নিউরোন কোনো তথ্য গ্রহণ বা ত্যাগ করে না। ফলে নিউরোনের তথ্য সঞ্চালন ঘটে ছোটো ছোটো খণ্ডে। 

ুটি স্নায়ুকোষের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান ঘটে দুটি স্নায়ুকোষের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা দিয়ে। এই ফাঁকা জায়গাকে বলা হয় সিন্যাপ্স। যদিও একে ফাঁকা জায়গা বলা হচ্ছে, কিন্তু এই জায়গাটা বস্তুশূন্য বা বায়ুশূন্য নয়। সিন্যাপ্সের ভিতরে থাকে তথ্য পরিবাহী কিছু রাসায়নিক তরল পদার্থ। একে বলা হয় নিউরোট্রান্সমিটার (Neurotransmitter)। তথ্য সঞ্চালনে নিউরোট্রান্সমিটার-এর অন্তর্গত বিভিন্ন উপাদান স্নায়ুকোষের মধ্যে ফেরির কাজ করে। এ্যাক্সন এর কোনো একটি উপাদান থেকে তথ্য গ্রহণ করে এবং সে তথ্য বহন করে অন্য কোষের ডেন্ড্রাইড অংশে পৌঁছে দেয়।