অটিজম
বানান বিশ্লেষণ : অ+ট্+ই+জ্+অ+ম্।
উচ্চারণ: ইংরেজি উচ্চারণ অটিজ
ˈɔːtɪz(ə)m শ্রবণ নমুনা>বাংলাতে এই শব্দটি উচ্চারিত হয় 'অটিজম্' [
ɔ.ʈi.ɟɔm] হিসেবে।
শব্দ-উৎস: ইংরেজি Autism [গ্রিক autos (আত্ম, স্বয়ং)+ism বিবৃতি, মতামত প্রকাশ]>বাংলা অটিজম।
পদ: বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {| লক্ষণসন্নিপাত | লক্ষণ | সাক্ষ্যপ্রমাণ | তথ্য | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক বিষয় | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}
অর্থ:
মানব-মস্তিষ্কের বিন্যাসগত ত্রুটির কারণে সমষ্টিগতভাবে সৃষ্ট একপ্রকার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী রোগ।
সমার্থক শব্দাবলি: অটিজম, আত্মসংবৃতি।

ইংরেজি:
Autism

মানব-মস্তিষ্কের বিন্যাসগত ত্রুটির কারণে সমষ্টিগতভাবে সৃষ্ট একপ্রকার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী রোগ। এই জাতীয় রোগ শৈশব থেকেই দেখা যায় বলে, সাধারণত শিশুদের নিয়েই প্রাথমিকভাবে ভাবা হয়। স্বাভাবিকভাবে
শিশুদের ভিতরে যে জানার ইচ্ছা ও উচ্ছলতা থাকে, অটিজম শিশুদের ভিতরে তা লক্ষ্য করা যায় না। এরা শুধু নিজের মধ্যে আচ্ছন্ন থাকে, নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে। ফলে তার চারপাশের মানুষ ও পরিবেশ সম্পর্কে সে জানতে পারে না।
অটিজম শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশের এই প্রতিবন্ধকতার লক্ষণ সাধারণত জন্মের ৩ বছরের ভিতরে প্রকাশ পায়।

 

এটি যে একটি রোগ এ বিষয়ে প্রথম আলোকপাত করেন হেনরি মোস্‌লে নামে একজন ব্রিটিশ সাইকিয়াট্রিস্ট । ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে এই বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণার সূত্রে তিনি তাঁর মতামত দেন। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে লিও ক্যানার নামক একজন আমেরিকান সাইকিয়াট্রিস্ট, এই অসুখের বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরেন এবং এর নাম দেন ইনফেনটাইল অটিজম।

অনেক পিতামাতা অটিস্টিক
শিশুদের নিয়ে বিব্রত বোধ করেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, একটি সুনির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ভিতরে সাধারণত প্রতি ১০০০০ জনে ১০ হতে ২০ জন অটিস্টিক শিশুর জন্ম হয়। সন্তান ছেলে, মেয়ে না নপুংসক হবে, তার জন্য পিতামাতা যেমন দোষী নয়, তেমনি অটিস্টিক শিশুর জন্মের জন্য পিতামাতাকে দোষী করা যায় না। এটি মানবশিশুর জন্ম প্রক্রিয়ার একটি স্বাভাবিক রীতি রয়েছে, তার ভিতরেই পড়ে। সুনির্দিষ্ট জনসংখ্যার কিছু সংখ্যক শিশু জন্মান্ধ হবে, কিছু শারীরীক প্রতিবন্ধী হবে, এ সবই প্রাকৃতিক বিধির ভিতরেই পড়ে।

যদিও অটিজমের যথাযথ কারণ জানা নেই, তারপরেই বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ভ্রূণের জিনঘটিত বিন্যাসের হের-ফের-এ এই জাতীয় শিশুর জন্ম হয়। সেই কারণে অটিজম চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময় হয় না। তবে বিভিন্ন থেরাপি ও ঔষধ সেবনে এদের অনেক উপসর্গের তীব্রতা লাঘব হয়। মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় অপুষ্টি বা মায়ের রোগের কারণে কিছু কিছু অটিস্টিক শিশু জন্মগ্রহণ করে থাকে। এই সব শিশুদের যথাযথ চিকিৎসা ও পরিচর্যার করলে, বয়সবৃদ্ধির সাথে সাথে তারা স্বাভাবিক মানুষের পর্যায়ে চলে আসতে পারে।


মূলত অটিজম কয়েকটি অসুখের সমষ্টি। ডাক্তারদের ভাষায় একে বলা হয় অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডার
(Autism Spectrum disorder/ASD)। এই সমস্যাকে যেভাবে শনাক্ত করা হয়, তাহলো

১. ইনফেনটাইল অটিজম (Infantile Autism): এইধরনের শিশুদের ভিতর সামাজিক আচরণ, মৌখিক ও অমৌখিক যোগাযোগ ও ত্রিুয়াকলাপের ক্ষেত্রে একই বিষয়ের পুনারবৃত্তি করতে থাকে।

২. রেটস সিনড্রম (Rett’s syndrome): এই রোগটি শুধু মেয়ে শিশুদের দেখা যায়। এই শিশুরা এক বছর পর্যন্ত শিশুর স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়, এরপর তার সামাজিক ও মানসিক বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় এরা কথা বলতে পারে না। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বুদ্ধির বিকাশ ঘটে না বলে, এরা নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হাত-পা ও ঠিক ভাবে নড়াচড়া করতে পারে না।
৩. এ্যাজপার্গার সিনড্রোম
(Aspergar syndrome): এ রোগ সাধারণত ছেলে শিশুদের মধ্যে দেখা যায়। এদেরকে অনেকসময় অটিস্টিক সাইকোপ্যাথ বলা হয়। এদের কাজের ভিতরে পুনরাবৃত্তির স্বভাব লক্ষ্য করা যায়। বেশিরভাবগ শিশুরা কথা ঠিকমত বলতে পারে। কোনো কোন শিশু কথা বলতে পারলেও, কথা বলার ধরন এবং গলার স্বর একটু ভিন্ন রকম হয়। এরা একাকী থাকতে পছন্দ করে। কোনো কোনো শিশুর ভিতরে কিছু কিছু বিষয়ের প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখা যায় ।

৪. চাইল্ডহুড ডিজইনটেগ্রেটিভ ডিজঅর্ডার (Childhood Disintegrative Disorder): এর আরেক নাম হেলারস্ ডিজিস। এদের সাধারণত দুই বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটে । পরবর্তীতে এদের সামাজিক আচরণের সমস্যা দেখা যায় । এদের সাধারনত স্নায়বিক সমস্যা প্রকট থাকে । ফলে এরা হাত পা ঠিকভাবে নাড়াচড়া করতে পারে না। অনেক সময় নিজের প্রসাব-পায়খানার কথা বলতে পারে না ।

 


সূত্র: