কড়ি

বানান বিশ্লেষণ: ক্+অ+ড়্+ই
উচ্চারণ:
ko.ɽi (কো.ড়ি)

কো.ড়ি [ড়ি ধ্বনির ই-কারের প্রভাবে ক ধ্বনি কো হয়। কো এবং ড়ি দুটি একাক্ষর হিসেবে উচ্চারিত হয়।]

শব্দ-উৎস: সংস্কৃত कपर्द्दिका (কপর্দ্দিকা)>প্রাকৃত কড্ডিআ>করড্ডিয়া>বাংলা কউড়িআ, কৌড়ি, কড়ি।
পদ: বিশেষ্য

ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {গ্যাস্ট্রোপোডা | মোলাস্কা | অমেরুদণ্ডী প্রাণী | প্রাণী | জীবসত্তা | জীবন্তবস্তু | দৈহিক-লক্ষ্যবস্তু | দৈহিক সত্তা | সত্তা |}

ইংরেজি: Cowry, cowrie

 

Kingdom (রাজ্য): Animalia

Phylum (পর্ব): Mollusca

Class (শ্রেণি): Gastropoda

Family (গোত্র): Cypraeidae

অর্থ: প্রাণিরাজ্যের মোলাস্কা (Mollusca) পর্বের Gastropoda শ্রেণির অন্তর্গত সামুদ্রিক প্রাণীর সাধারণ নাম। ি , ণী বা এর খোলসকে।

 

অধিকাংশ কড়ির খোলসের উপরিভাগ ডিমের মতো, কিন্তু নিচের সমান। খোলসের সমতল অংশের মাঝ বরাবর লম্বা ফাঁকা খালের মতো অংশ থাকে। এই খালের প্রান্তদেশ খাঁচ কাটা থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে নানা ধরণের কড়ি দেখতে পাওয়া যায়। রঙের বিচারে এর বহু বহু প্রকরণ লক্ষ্য করা যায়।

 

 

ভারতবর্ষে প্রাচীন ও মধ্যযুগে বিনিময়-মাধ্যম হিসেবে কড়ি ব্যবহৃত হতো। ভারতবর্ষ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকায় এর ব্যবহার ছিল। সীমিত আকারে চীন ও ইউরোপেও কড়ি বিনিময়-মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতো বলে জানা যায়।
 

বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে, বিশেষ করে মঙ্গলকাব্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যম হিসেবে কড়ির উল্লেখ রয়েছে। এই সূত্রে কড়ি শব্দের দ্বারা অনেক সময় আর্থিক পরিস্থিতিকেও বুঝানো হয়েছে। সেকালের রাজদরবারে স্বর্ণ বা রৌপ্যমুদ্রার চল থাকলেও, গ্রামাঞ্চলে কড়িই ছিল ক্রয়-বিক্রয়ের প্রধান মাধ্যম। মধ্যযুগীয় ঐতিহাসিক আল মাসুদী ও আবুল ফজল রচিত বিবরণী থেকে জানা যায়, সে সময় বাজারমূল্য মানদণ্ড ছিল কড়ির মানদণ্ড। মোগল শাসনামলে রাজস্ব বন্দোবস্তে মুদ্রা একক হিসেবে কড়ি'র উল্লেখ পাওয়া যায়। সুলতানি আমলেও কড়ি ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। মুগল আমলে রায়তরা শস্য বা কড়ি যেকোন মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব পরিশোধ করতে পারত। বাংলার সীমান্ত এলাকার রংপুর ও সিলেট জেলায় উনিশ শতকের শেষনাগাদও কড়ির প্রাধান্য ছিল।

কড়ি মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার পাশাপশি গণন-রীতিতে একক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এ বিধি অনুসারে যে, গণন-এককের ব্যবহার ছিল, তা হলো

        ৪ কড়ি = ১ গণ্ড
        ৫ গণ্ডা = ১ বড়ি
        ৪ বড়ি = ১ পণ
        ১৬ পণ = ১ কাহন
        ১০ কাহন = ১ টাকা (প্রায় ৩৪০ রতি ওজনের রৌপ্যমুদ্রা)।

কড়ির আরেকটি হিসাব-রীতি হচ্ছে:
        ৪ কড়ি = ১ গণ্ডা
        ২০ গণ্ডা = ১ পণ
        ৪ পণ = ১ আনা
        ৪ আনা = ১ কাহন
        ৪ কাহন = ১ টাকা (২৮,৮৮০ কড়ি)।


তথ্য :