সিমেন্ট
ইংরেজি :
Cement

খ্রিষ্টীয় ১২৫০-১৩০০ অব্দের ভিতরে ল্যাটিন ভাষায়
cēmentum (ভিন্ন শব্দরূপ caementum) পাওয়া যায়। এই শব্দটির বহুবচন হলো caementa। এর অর্থ ছিল খনি থেকে প্রাপ্ত এমন পাথরের টুকরা যা অপরিশোধিত অবস্থায় আহরিত হতো। রোমানরা opus caementicium শব্দটি ব্যবহার করতো দেয়াল বা স্তম্ভ তৈরির ক্ষেত্রে 'উপকরণ সংযোজক পদার্থ' অর্থে। এই শব্দটি প্রাচীন ফরাসি শব্দে ব্যবহৃত হয়েছে cyment। ইংরেজিতে এই শব্দটি গৃহীত হয়েছে Cement হিসাবে। বাংলা সিমেন্ট শব্দটি এসেছে ইংরেজি থেকে।

 

যদিও সিমেন্ট শব্দটি opus caementicium শব্দের সূত্রে পাওয়া গেছে। কিন্তু আধুনিক সিমেন্ট বলতে যা বোঝায় তা নয়। আধুনিক কালের সিমেন্ট হলো এমন একটি নির্মাণ উপাদান যা জলের সংস্পর্শে এলে জল ও তার ভেতরের উপাদানগুলোর মাঝে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে জমাট বেঁধে নিজে থেকেই শক্ত হয়ে যায়। নির্মাণশিল্পে দুটি ভিন্নতর উপাদানকে সংযোজিত করার জন্য সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। যাকে নির্মাণ শিল্পের আঠা বলা যেতে পারে।

 

উল্লেখ রোমানরা opus caementicium ব্যবহার করতো একালের কংক্রিটে মতো। কিন্তু এর উপাদান বা তৈরির প্রক্রিয়াটি ছিল ভিন্নতর। আধুনিক কালে একে বলা হয় রোমান কংক্রিট (Roman concrete)।
পোৎজোলানা
(
Pozzolana)

 

এই উপাদানটি সমগ্র রোমান সাম্রাজ্যের স্থাপত্যকর্মে ব্যবহৃত হয়েছে। এতে ব্যবহৃত হতো- পাথরের টুকরো, মাটির টালি, পুরানো বাড়ির ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রাপ্ত ইটের টুকরো। এই জাতীয় নির্মাণে রোমানরা কাঠামো তৈরির জন্য কোনো রকম ইস্পাত বা লোহার দণ্ড বা এই জাতীয় ধাতব উপাদান ব্যবহার করা হতো না। মূলত সে সময়ে উল্লিখিত উপকরণগুলোর সংযোজক বা আঠা হিসাবে ব্যবহার করা হতো- চুন ও জিপসাম। এছাড়া সম্ভব হলে আগ্নেয় ধুলাবালি (Volcanic dusts) ব্যবহার করতো। একে স্থানীয় ভাষায় বলা হতো পোৎজোলানা (Pozzolana) বা পিট বালি (pit sand)।

 পোৎজোলানার বিশেষত্ব ছিল, এই পদার্থটি সংযোজক হিসাবে কাজ করার পাশাপাশি লবণাক্ত পানিকে সরাসরি প্রতিরোধ করতে সক্ষম ছিল। এছাড়া লবণাক্ত ভূমিতে কংক্রিটের 'নোনা ধরা'কে প্রতিরোধ করে।


ঔদক ও অনৌদক সিমেন্ট
নির্মাণ শিল্পে সিমেন্টকে সাধারণত দুই ভাবে ভাগ করা হয়।  ভাগ দুটি হলো
ঔদক (
hydraulic) ও অনৌদক (non-hydraulic) সিমেন্ট।
 

  ঔদক (hydraulic) : ঔদক জাতীয় সিমেন্ট জমাট বাঁধার জন্য জলের উপস্থিতি আবশ্যক। সিমেন্ট মিশ্রণে জলের উপস্থিতিতে রাসায়নক বিক্রিয়াটি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে ঘটে। এই বিক্রিয়াটি জলের ভিতরে বা ভেজা আবহাওয়াতেও ঘটে থাকে। ঔদক সিমেন্ট জলের সংস্পর্শে এলে জলে অদ্রবণীয় হাইড্রেট (hydrate) উৎপন্ন করে। এবং  এই হাইড্রেট জমাট বেঁধে শক্ত পদার্থে পরিণত হয়।

এই সিমেন্টকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগদুটি হলো

         
পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট (Portland cement)
         নন-পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট (
Non-portland cement)
   

 
সিমেন্টের ব্যবহার

সাধারণত কংক্রিট ও ইঁটের গাঁধুনিতে  সিমেন্টের ব্যবহৃত হয়। কংক্রিট তৈরির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অনুপাতে সিমেন্টের সাথে ইঁট বা পাথরের টুকরো, বালি মিশ্রণ করা হয়। এরপর এর সাথে প্রয়োজনীয় পরিমাণ জল ব্যবহার করে কাদার ন্যায় থকথকে মিশ্রণ তৈরি করা হয়। এই মিশ্রণকে নির্ধারিত ছাঁচে ঢালা হয়। এই অবস্থায় জলের সাথে সিমেন্ট হাইড্রেট উৎপন্ন করে এবং তা বালি, পাথর বা ইঁটের টুকরোর সাথে মিশে কঠিন বস্তুতে পরিণত হয়। আধুনিক নির্মাণশিল্পে সাধারণত স্তম্ভ, কড়ি, ছাদ, দরজা জানালার নিচের উপরের অংশে কংক্রিট ব্যবহৃত হয়।

 

পক্ষান্তরে ইঁট, পাথর বা অন্য উপকরণ দিয়ে যখন দেয়াল জাতীয় লক্ষ্যবস্তু নির্মাণ করা হয়, তখন নির্দিষ্ট অনুপাতে সিমেন্ট ও বালির সাথে পানি মিশিয়ে যে মিশ্রণটি তৈরি করা হয়, বাংলাতে সাধারণভাবে মশল্লা (mortar) বলা হয়। এক্ষেত্রেও জল সিমেন্টের সাথে বিক্রয়া করে হাইড্রেট তৈরি করে এবং তা বালির সাথে মিশে শক্ত পদার্থে তৈরি করে। এই সময় মশল্লা-সংলগ্ন ইঁট বা পাথরকে দৃঢ়ভাবে যুক্ত করে নেয়।

 

আধুনিক সিমেন্টের উপকরণ

আধুনিক কালে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে সিমেন্ট তৈরির জন্য একটি সূত্রকে অনুসরণ করা হয়। সিমেন্ট-উৎপাদক রসায়ন শাস্ত্রে এই সূত্রকে বলা হয়-  Cement chemist notation (CCN) । এই সূত্রে ক্যালসিয়াম, সিলিকন এবং বিভিন্ন ধাতুর অক্সাইডকে নির্দিষ্ট সঙ্কেতে প্রকাশ করা হয়।