মারসেলিনো দ্যা সাওতুলা (Marcelino
Sanz de Sautuola)
নামক জনৈক সৌখিন প্রত্নতাত্ত্বিক, ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর আট বছরের কন্যাকে সাথে
নিয়ে স্পেনের আলতামিরা গুহার কাছে প্রাচীন মানববসতির সন্ধানে
নমুনা খুঁজছিলেন। সেই সূত্রে তিনি কিছু চকমকি পাথর এবং কিছু বাঁকানো হাড়ের সন্ধান
পান। একদিন তাঁর কন্যা জঞ্জালভর্তি একটি স্বল্পালোকিত গুহার ছাদের দিকে অঙ্গুলি
নির্দেশ করে 'ষাড় ষাড়' বলে চিৎকার করে উঠেন। এরপর সাওতুলা আলোর ব্যবস্থা করে এই
ছবি পর্যবেক্ষণ করে, প্রাগৈতিহাসিক মানুষের আঁকা ছবি হিসেবে শনাক্ত করেন। পরে দেখা যায়, এই গুহায় বাইসন
ছাড়াও অঙ্কিত হয়েছে দুটি ঘোড়া, এক পাল বাইসন, বড় আকারের হরিণ,বন্য শুকর।
১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দে লিসবনের প্রাগৈতিহাসিক নৃতত্ত্ব বিষয়ক কংগ্রেস একে জালিয়াতি বলে
সাব্যস্ত করে। এরপর ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সের গিরন্দি জেলার পেঁয়া ন-পেঁয়া-তে
আরও কিছু ছবি আবিষ্কৃত হয়। শেষ পর্যন্ত গবেষকরা নানাভাবে পরীক্ষা করে স্বীকার করে
নেন যে, আলতামিরার ছবিগুলো প্রাগৈতিহাসিক মানুষের
আঁকা।
আলতামিরার গুহাটি প্রায়
৩০০ মিটার দীর্ঘ। গুহাটিতে রয়েছে আঁকাবাঁকা কয়েকটি অলিন্দ। মূল গুহাটির ছাদের
উচ্চতা কোথায় দুই মিটার, আবার কোথাও ছয় মিটার। গবেষকদের মতে, এই গুহার ছাদে ছবিটি
আঁকা হয়েছিল প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ১৪,৮২০
থেকে ১৩১৩০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে। ১৩,০০০
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে পাথর পড়ে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দীর্ঘদিন এই
গুহাটি মানুষের দৃষ্টির বাইরে ছিল।
এই ছবি আঁকার সময় শিল্পী ব্যবহার করেছিলেন কয়লা, মেটে হলুদ এবং লাল হেমাটাইট। এছাড়া অন্য আদ্য রঙ-উপাদান (পিগমেন্ট) গুলিয়ে রঙের বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। মানুষের আনাগোনায় ছবিটি ক্ষতিগ্রস্থ হবে, এই ধারণা থেকে,গুহটি বন্ধ রাখা হয়। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিকভাবে গুহাটি বন্ধ করা হয়। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে স্থায়ীভাবেই দর্শকদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে লটারির মাধ্যমে দর্শকদের গুহাটি দেখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। লাটারিত সপ্তাহে একদিন মাত্র পাঁচজন দর্শককে আসল গুহা দেখতে নিয়ে যাওয়া হবে। বাছাই করা এই দর্শকদের বিশেষ পোশাক, মুখোশ ও জুতো পরে গুহায় ভেতরে প্রবেশ করতে হবে এবং একজন গাইডের সহায়তায় ৩৭ মিনিটের পরিদর্শনের সুযোগ পাবেন।
নিচ থেকে ছাদে দেখা ছবি | বাইসনের ছবি |