- মারোস-এর গুহাচিত্র (৪০,০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
- সুলাওয়েসি গুহাচিত্র (৪০,০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
ইউরোপে
প্রাপ্ত গুহাচিত্র এই চারটি গুহাচিত্রের
প্রধান এলাকার বাইরে উল্লেখযোগ্য গুহাচিত্র এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয় জার্মানির
বাডেন-উর্টটেমবার্গ অঞ্চলের সোয়াবিয়ান জুরা উপত্যাকাকে। এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য
গুহাগুলো হলো- হোহলেনস্টেইন-সাডেল (Hohlenstein-Stadel
), হোহলে ফেল্স
(Hohle Fels
), ভোগেলহার্ড
(Vogelherd
), গেইস্সেংক্লোস্টের্লে
(Geissenklosterle
)।
হোহলেনস্টেইন-সাডেল গুহাচিত্রের ভিতরে পাওয়া গিয়েছে ম্যামোথে দাঁতের উপর খোদাইকরা
চিত্র। অবশ্য, গুহার গায়ে অঙ্কিত নয় বলে এগুলোকে গুহাচিত্রের ভিতরে ধরা হয় না। গুহাচিত্রে বিষয়বস্তু বিষয়বস্তুর বিচারে সার্বিকভাবে গুহাচিত্রগুলোকে পাঁচটি ভাগে
ভাগ করা হয়ে থাকে। এগুলো হলো-
প্রাপ্ত গুহাচিত্রের
কালানুক্রমিক সূচি সূত্র:
প্রায় ৮০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে ইউরোপে আধুনিক মানুষ প্রবেশ করেছিল। এরপর
এরা ইউরোপের
আইবেরিয়ান উপদ্বীপ (জিব্রাল্টার) থেকে রাশিয়ার উরাল অঞ্চল পর্যন্ত নানা শাখায়
বিভক্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে পাওয়া গেছে প্রায়
৩৫০টি চিত্রকর্ম-গুহা। এর ভিতরে প্রায় অর্ধেক নমুনা পাওয়া গেছে
উত্তর স্পেন এবং দক্ষিণ ফ্রান্সে। প্রায় ৪০ থেকে ১০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এ
সকল গুহাচিত্র অঙ্কিত হয়েছিল। সব মিলিয়ে এই আঞ্চলিক শিল্পকর্মকে আঞ্চলিকতার বিচারে একে ফ্রাঙ্কো-ক্যান্টাবেরিয়ান শিল্পকর্ম
(Franco-Cantabrian Cave Art)
নাম অভিহিত করা হয়।
ফ্রাঙ্কো-ক্যান্টাবেরিয়ান শিল্পকর্মে আঞ্চলিকতার বিচারে
চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা
হয়। এগুলো হলো-
১. ডোর্ডোগ্নে
(Dordogne):
এই গুহাচিত্রগুলো পাওয়া যায় দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সে। এগুলো হলো-
আব্রি-ক্যাস্টানেট খোদাইচিত্র,
কুসাক গুহা,
লাউসেল গুহাচিত্র (ভেনাস),
আব্রি দু পোইজোন খোদাইচিত্র,
লাস্ক গুহাচিত্র,
ফন্ট-ডি-গুম গুহাচিত্র,
রোয়ুফফিগ্ন্যাক গুহাচিত্র,
লেস কোম্বারেল্লেস গুহাচিত্র
এবং
ক্যাপ ব্লাঙ্ক গুহাচিত্র।
২. ফ্রেন্স পিরেনিস (French Pyrenees
):
এই গুহাচিত্রগুলো পাওয়া যায় দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সে। এগুলো হলো-
গার্গাস গুহাচিত্র, টুক ডি'অডোয়ুবের্ট
(Tuc d'Audoubert
),
ট্রোয়িস ফ্রেরেস (Trois Freres
), নিয়ক্স
(Niaux
)।
৩. ফ্রেন্স আল্পস
(French Alps
)এর
গুহাগুলো হলো-
চাওভেত গুহাচিত্র
, গ্রোট্টে ডেস ডেয়ুক্স-ওয়ুভের্টুরেস
(Grotte des Deux-Ouvertures
, চাবোট
(Chabot),
এব্বোয়ু
(Ebbou)
।
৪. ক্যান্টাব্রিয়া
(Cantabria):
স্পেনের উত্তর উপকূলীয় এলাকা। এর গুহাগুলো হলো- এল ক্যাস্টিল্লো
(El Castillo
, আলতামিরা গুহাচিত্র
,
লা পাসিয়েগা (La Pasiega
টিটো বুস্টিল্লো
(Tito Bustillo
।
ফ্রান্স, স্পেন ই ইতালির বাইরে বিক্ষিপ্তভাবে আরও কিছু গুহচিত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে
পর্তুগাল, ইতালি, সিসিলি, সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, রোমানিয়া এবং রাশিয়ায়। উল্লেখ্য,
চীনের জিয়াঙ্গজি প্রদেশের জিয়ানরেন্ডোং গুহায় পাওয়া গেছে ১৮ হাজার
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মৃৎপাত্র এবং হুনান প্রদেশের ইয়ুচ্যানিয়ান গুহার ১৬ হাজার
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মৃৎপাত্র।
গুহচিত্রের বিষয়বস্তু হিসেবে এ সকল চিত্রে অঙ্কিত হয়েছিল হাতের
ছাপ, সাঙ্কেতিক চিহ্ন এবং প্রাণীর চিত্র। এসকল ছবির ভিতরে কিছু আঁকা হয়েছিল রঙ
ব্যবহার করে, কিছু আঁকা হয়েছিল পাথরের দেওয়া খোদাই করে। রিলিফধর্মী কিছু ছবিকে
ভাষ্কর্যে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। গুহাচিত্রের সাঙ্কেতিক চিহ্নগুলো ছিল কোনো কিছুর প্রতীক। এর ভিতর দিয়ে কোনো বার্তা
প্রকাশ করা হতো। যা আমাদের কাছে এখন দুর্বোধ্য মনে হলেও এদের অর্থবহ ছিল। রিলিফের
কাছ খুব বেশি ছিল না। সম্ভবত এই জাতীয় রিলিফের মধ্য দিয়ে পৃথক পাথর খণ্ড বা
ম্যামোথের দাঁত দিয়ে আদিম ভাস্কর্য। চিত্রকর্মের ভিতরে ছিল শুধু রেখার ব্যবহার করে
মানুষের ছবি। কিন্তু পশুর ছবির ভিতরে দ্বিমাত্রিক রূপ ছিল। রঙের ব্যবহারে অনেক ছবিই
ত্রিমাত্রিক রূপ লাভ করেছিল। প্রথম দিকের ছবিগুলোতে এক রঙের ব্যবহার ছিল। এর নমুনা পাওয়া যায়, ৩০,০০০
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে আঁকা
চাওভেত গুহাচিত্রে পরবর্তী সময়ে
বহু রঙের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় । এর নমুনা পাওয়া
যায়
১৭,০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দের আঁকা
লাসকো গুহাচিত্র
বা ১৪,০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে আঁকা
আলতামিরা
গুহাচিত্রে।
(Handprints (and finger markings):
প্রাগৈতিহাসিক গুহচিত্রের হাতের ছাপের নমুনা প্রচুর দেখা যায়। এসব চিত্রে তালুসহ পাঁচটি আঙুলের ছাপ পাওয়া যায়।
প্রাচীনকালে মানুয গুহার নরম মাটির দেওয়ালের গায়ের উপর হাত চেপে ধরে ছাপ তৈরি করতো।
এছাড়া হাতে রঙ মেখে তা পাথরের দেওয়ালের উপর চেপে ধরে ছাপ তৈরি করা হতো। কোনো কোনো
ক্ষেত্রে দেওয়ালে হাত রেখে তার চারপাশে রেখা এঁকে হাতের রূপ দেওয়া হতো।
এক্ষেত্রে রঙ হিসেবে ব্যবহার করা হতো- লাল, সাদা এবং কালো। বিজ্ঞানীরা গবেষণার
সূত্রে জানতে পেরেছেন এ সকল অধিকাংশই মেয়েদের হাতের হাতের ছাপ।
গুহার গায়ে প্রাগৈতিহাসিক মানুষ এমন কিছু চিহ্ন অঙ্কন করতো, যা সরাসরি কোনো
অর্থকে প্রকাশ করতো না। সম্ভবত এসকল চিহ্ন দিয়ে এরা কোনো অর্থকে প্রকাশ করতো।
আধুনিক কালের মানুষের কাছে অর্থ না বুঝার কারণে দুর্বোধ্য হয়ে গেছে। অনেক
নৃবিজ্ঞানী মনে করেন যে, লিখিত ভাষার আদিরূপ হিসেবে এগুলো ছিল চিত্রলিপি।
এর সূচনা হয়েছিল আফ্রিকায়। পরে এরই ধারাবাহিকতায় এই জাতীয় চিহ্ন অঙ্কিত হয়েছিল
ক্রো-ম্যাগনানদের
অরিগ্ন্যাসিয়ান সভ্যতার কালে। এই পরবর্তী অধ্যায়ে প্রতীকচিত্রগুলো নানাভাবে
অঙ্কিত হয়েছিল।
বিমূর্তচিহ্নগুলো কিছু বিশেষ জ্যামিতিক শৈলীতে আঁকা হয়েছিল। এগুলোর ভিতরে রয়েছে-
রেখা, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বৃ্ত্ত, ডিম্বাকৃত, অর্ধবৃত্ত, আড়াআড়ি-রেখাঙ্কিত,
ক্রসচিহ্ন, উন্মুক্ত কোণ, বিন্দু, পক্ষীরূপ, নখাকৃতি, হৃদপিণ্ডাকার, পাখাকার,
চিরুনি-রূপ, পালকাকার, বৃক্করূপ, মই-আকার, সর্পাকার, সর্পিলাকার, তীরাকার,
বর্শি-আকার, করাতদন্তী। এছাড়া আঁকা হয়েছিল স্ত্রী-অঙ্গ হিসেবে যোনীচিহ্ন।
এসকল চিহ্ন এরা গুহার দেয়ালে, ছাদে, মেঝেতে আঁকতো। কখনো বিক্ষিপ্তভাবে, কখনো
সারিবদ্ধভাবে অঙ্কিত হয়েছিল। অনেক সময় প্রাণী মা মানুষের ছবির পাশে এ সব ছবি
আঁকা হয়েছিল।
প্রাণীর অবয়ব চিত্রণ
গুহাচিত্রে ভিতরে চিত্রকর্ম বলতে
এক্ষেত্রে বিশেষভাবে বুঝানো হয়ে থাকে- হাতের ছাপ, নানা ধরনের প্রাণী ও মানুষের ছবি।
এ সব ছবি অঙ্কিত হয়েছে নানা রঙে, ছাপ দিয়ে বা খোদাই করে। অধিকাংশ গুহাচিত্রগুলো অঙ্কিত হয়েছিল লাল বা কালো রঙ দিয়ে। লাল রঙের জন্য ব্যবহৃত হয়েছ হেমাটাইট (আয়রন অক্সাইড)
এবং কালো রঙের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে ম্যাঙ্গানিজ ডাই-অক্সাইড বা কয়লা।