গুহাচিত্র
Cave paintings
পাহাড়ের গুহার দেয়ালে বা ছাদে অঙ্কিত চিত্রকর্ম। প্রাগৈতিহাসিক যুগে যখন
মানবগোষ্ঠীর প্রধান আশ্রয়স্থল ছিল বিভিন্ন পর্বতের গুহা। এই সময় এরা গুহার দেয়ালে ও
ছাদে নানা ধরনের ছবি আঁকতো। এ সকল ছবিকেই সাধারণভাবে গুহাচিত্র বলা হয়। টারান্টিয়ান
আমলের (১.২৬ লক্ষ-১১.৭ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) ১ লক্ষ থেকে ৪০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এই ছবিগুলো অঙ্কিত হয়েছিল।
প্রায় ৩৩ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে, প্রাগৈতিহাসিক যুগ তথা
প্রস্তর যুগের সূচিত হয়েছিল
কেনিয়ান্থ্রোপাস বা
অস্ট্রালোপিথেকাস আফারেনসিস
নামক হোমো গণের প্রজাতিদের মাধ্যমে।
প্রায়
২৬
লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে আফ্রিকাতে
হোমো গণের
হোমো হ্যাবিলিস
প্রজাতি
আদিম প্রস্তরযুগের ধারাকে সামান্য উন্নতর পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। প্রত্নতত্ত্ববিদরা
এর নাম দিয়েছেন
ওল্ডুভিয়ান সভ্যতার
পাথুরে
অস্ত্র। এরপর হোমো গণের অপর প্রজাতি
হোমো এর্গাস্টারদের
একটি দল ইউরোপে
পত্তন
করেছিল নতুন সভ্যতা। এদের সৃষ্টি যন্ত্রপাতি
আশুলিয়ান যন্ত্রপাতি
নামে
অভিহিত করা হয়। এরা এই পাথুরে অস্ত্র ব্যবহার করতো প্রায় ১৭.৫ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে।
আশুলিয়ান যন্ত্রপাতির
বিশেষ যন্ত্রটি হলো পাথরের তৈরি হাত-কুঠার। পর্বর্তী দুটি
প্রজাতি
হোমো হাইডেলবার্গেনসিস ও
হোমো নিয়ানডার্থালেনসিসদের মাধ্যমে এই ধারার যন্ত্রপাতির প্রচলিত ছিল ৪ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত। এরপর বিবর্তনের ধারায়
প্রায় ৩.৫০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
হোমো স্যাপিয়েন্সরা মরোক্কোতে আবির্ভূত হওয়ার পর, ২ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে ইথিওপিয়া এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। এই সময়ের
ভিতরে এদের জীবাশ্ম ছাড়া অন্য কোনো সৃজনশীল কাজের নমুনা পাওয়া যায় নি।
বিবর্তনের এই সুদীর্ঘ ধারায় পাথুরের অস্ত্রের উন্নয়ন ঘটলেও ৩ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
পর্যন্ত শিল্পকর্মের বিকাশ লক্ষ্য করা যায় না। অবশ্য এই অনুমান করা হয়, প্রাপ্ত
প্রাচীন শৈল্পিক নিদর্শনের সূত্রে।
সম্ভবত ৫ থেকে ৩
লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
নিয়ানডার্থালদের
ভিতরে দৈবিক শক্তির ভাবনা জাগরিত হতে থাকে। এরই মধ্য দিয়ে
ধরিত্রী দেবী বা আদিমাতৃ দেবীর ভাবনা বিকশিত হয়েছিল। এই সূত্রে
৩ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
সৃষ্টি হয়েছিল
টান-টানের ভেনাস। আরও পরে
২,৩০,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
হোমো ইরেক্টাসদের সৃষ্ট আদিম মাতৃদেবী
বেরেখাত রানের ভেনাস। এরপর নানা রূপে ভাস্কর্যে ও
চিত্রে উপস্থাপিত হয়েছে
১১-১০
হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত। এর নমুনা হিসেবে আমরা উল্লেখ করতে পারি-
১১-১০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
ক্রো-ম্যাগনানদের চতুর্থ
স্তরের ম্যাডালেনিয়ান
সভ্যতার
মোনরুজ-এর
ভেনাস-কে।
নমুনা প্রাপ্তির বিচারে বলা যায় শিল্পকর্মের আদিম বিকাশ ঘটেছিল, ভাস্কর্যের মধ্য
দিয়ে। সম্ভবত আদিম প্রজাতিগুলো তাদের চারপাশের পাথরের টুকরোগুলোর ভিতরে কিছু কিছু
টুকরো মনুষ্যমূর্তির রূপ দেখতে পেয়েছিল। এসকল পাথরের টুকরোগুলোকে একটু ঘষে-মেজে
মূর্তীর রূপ দিয়েছিল।
এ সূত্রের এরা ছবি আঁকার প্রেরণা পেয়েছিল। মাটিতে দাগ কেটে নানা রূপরেখা তৈরি করা
যায়। হয়তো সেটা তারা অবসর মূহুর্তে করতোও তারা। কিন্তু পাথরের গায়ে দাগ কেটে ছবি
আঁকা যায়, সেটা এরা পাথর কাটার সূত্রে বুঝেছিল। গোড়ার দিকে পাথরে গায়ে ছবি আঁকার
জন্য কয়লা জাতীয় বস্তু ব্যবহার করতো। বহুকাল আগের সেসব নমুনা আমাদের কাছে পৌঁছায়নি।
কিন্তু পাথরে দাগ কেটে ছবি সঙ্কেত বা সাঙ্কেতিক চিত্র ফুটিয়ে তোলা যায়, তার কিছু
নমুনা পাওয়া যায় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে গুহার দেওয়ালে বা গুহায় রক্ষিত পাথরের
টুকরোতে। আঞ্চলিকতার বিচারে এসকল চিত্রকর্ম
অল্পবিস্তর
ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে
এ্যান্টার্ক্টিকা মহাদেশ
ছাড়া পৃথিবীর সকল মহাদেশেই।
দেশে দেশে গুহাচিত্র
- আফ্রিকার
গুহাচিত্র: ৩.৫০ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
হোমো স্যাপিয়েন্সরা মরোক্কোতে আবির্ভূত হওয়ার পর, ২ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে ইথিওপিয়া এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল।
এই সময়
হোমো স্যাপিয়েন্সদের
বুদ্ধি ও আকৃতির বিচারে কাছাকাছি প্রজাতি ছিল
(হোমো
নিয়ানডার্থালেনসিস।
-
ব্লোম্বোস-গুহাচিত্র
(৭৫-৭০ হাজার
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ):
হোমো স্যাপিয়েন্সদের
একটি ভ্রাম্যমান দল বর্তমান দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলে প্রবেশ করেছিল ১ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে এবং
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউন শহরের নিকটবর্তী
অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল। এই অঞ্চলে ব্লোম্বোস গুহায় পাওয়া গিয়েছে কিছু প্রাপ্ত প্রস্তরে খোদিত
চিত্রকর্ম বিশেষ। যদিও এই চিত্রকর্ম গুহার গায়ের দেয়ালে বা ছাদে আঁকা হয় নি,
তারপরেও গুহায় প্রাপ্ত বলে একে গুহাচিত্র বলা হয়। প্রাপ্তি স্থানের বিচারে এ সকল
শিল্পকর্মকে
ব্লোম্বোস-গুহাচিত্র
বলা হয়। আভিধানিক বিচারে এই চিত্রগুলো
গুহাচিত্র হিসেবে বিবেচিত হয় না। ধারণা করা হয়, প্রায় ৭৫-৭০ হাজার
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে এই চিত্রগুলো অঙ্কিত হয়েছিল।
আফ্রিকায় প্রাপ্ত প্রাগৈতিহাসিক চিত্রকর্মসমূহের ভিতরে ব্লোম্বোস গুহাচিত্রের ভিতরে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
- ডিয়েপক্লুফ চিত্র
(৬০,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ):
দক্ষিণ আফ্রিকার নর্থ কেপ শহরের নিকটবর্তী ডিয়েপক্লুফ গুহায় প্রাপ্ত অস্ট্রিকের ডিমের খোলসের উপর অঙ্কিত চিত্র।
ধারণা করা হয়, প্রায় ৬০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে চিত্রকর্ম করেছিল হোমো স্যাপিয়েন্সরা।
এই গুহায় পাওয়া গেছে ২৭০টি চিত্রকর্ম। সম্ভবত ২৫টি অস্ট্রিকের ডিমের খোলসের ভাঙা অংশে এই ছবিগুলো অঙ্কিত হয়েছিল।
ছবিগুলোতে রয়েছে নানা ধরনের সাঙ্কেতিক চিহ্ন। এই চিহ্নগুলো দিয়ে কোনো বার্তা প্রকাশ করা হয়েছিল কিনা তা জানা যায় নি।
ইন্দোনেশিয়ায়
প্রাপ্ত গুহাচিত্র:
বিজ্ঞানীরা মনে করেন আধুনিক মানুষ (হোমো স্যাপিয়েন্সরা) আফ্রিকা থেকে ইউরেশিয়া ঘুরে
ইন্দোনেশিয়াতে পৌঁছেছিল প্রায় ৪৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে। এই সময় ইন্দোনিশিয়া
নিয়াডার্থালদের আবাস ছিল। ফলে হোমো স্যাপিয়েন্সদের সাথে এদের সংঘাত হয়। হোমো
স্যাপিয়েন্সরা উন্নত অস্ত্র এবং যুদ্ধকৌশল দ্বারা নিয়াডার্থালদের পরাজিত করে
ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন দ্বীপ দখল করে নেয়। এই সময়ে হোমো স্যাপিয়েন্সদের একট দল
সুলাওয়েসি দ্বীপের প্রায় ২৪২টি গুহায় প্রাচীনকালের মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করেছিল।
ইউরোপে
প্রাপ্ত গুহাচিত্র
প্রায় ৮০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে ইউরোপে আধুনিক মানুষ প্রবেশ করেছিল। এরপর
এরা ইউরোপের
আইবেরিয়ান উপদ্বীপ (জিব্রাল্টার) থেকে রাশিয়ার উরাল অঞ্চল পর্যন্ত নানা শাখায়
বিভক্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে পাওয়া গেছে প্রায়
৩৫০টি চিত্রকর্ম-গুহা। এর ভিতরে প্রায় অর্ধেক নমুনা পাওয়া গেছে
উত্তর স্পেন এবং দক্ষিণ ফ্রান্সে। প্রায় ৪০ থেকে ১০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এ
সকল গুহাচিত্র অঙ্কিত হয়েছিল। সব মিলিয়ে এই আঞ্চলিক শিল্পকর্মকে আঞ্চলিকতার বিচারে একে ফ্রাঙ্কো-ক্যান্টাবেরিয়ান শিল্পকর্ম
(Franco-Cantabrian Cave Art)
নাম অভিহিত করা হয়।
ফ্রাঙ্কো-ক্যান্টাবেরিয়ান শিল্পকর্মে আঞ্চলিকতার বিচারে
চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা
হয়। এগুলো হলো-
১. ডোর্ডোগ্নে
(Dordogne):
এই গুহাচিত্রগুলো পাওয়া যায় দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সে। এগুলো হলো-
আব্রি-ক্যাস্টানেট খোদাইচিত্র,
কুসাক গুহা,
লাউসেল গুহাচিত্র (ভেনাস),
আব্রি দু পোইজোন খোদাইচিত্র,
লাস্ক গুহাচিত্র,
ফন্ট-ডি-গুম গুহাচিত্র,
রোয়ুফফিগ্ন্যাক গুহাচিত্র,
লেস কোম্বারেল্লেস গুহাচিত্র
এবং
ক্যাপ ব্লাঙ্ক গুহাচিত্র।
২. ফ্রেন্স পিরেনিস (French Pyrenees
):
এই গুহাচিত্রগুলো পাওয়া যায় দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সে। এগুলো হলো-
গার্গাস গুহাচিত্র, টুক ডি'অডোয়ুবের্ট
(Tuc d'Audoubert
),
ট্রোয়িস ফ্রেরেস (Trois Freres
), নিয়ক্স
(Niaux
)।
৩. ফ্রেন্স আল্পস
(French Alps
)এর
গুহাগুলো হলো-
চাওভেত গুহাচিত্র
, গ্রোট্টে ডেস ডেয়ুক্স-ওয়ুভের্টুরেস
(Grotte des Deux-Ouvertures
, চাবোট
(Chabot),
এব্বোয়ু
(Ebbou)
।
৪. ক্যান্টাব্রিয়া
(Cantabria):
স্পেনের উত্তর উপকূলীয় এলাকা। এর গুহাগুলো হলো- এল ক্যাস্টিল্লো
(El Castillo
, আলতামিরা গুহাচিত্র
,
লা পাসিয়েগা (La Pasiega
টিটো বুস্টিল্লো
(Tito Bustillo
।
এই চারটি গুহাচিত্রের
প্রধান এলাকার বাইরে উল্লেখযোগ্য গুহাচিত্র এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয় জার্মানির
বাডেন-উর্টটেমবার্গ অঞ্চলের সোয়াবিয়ান জুরা উপত্যাকাকে। এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য
গুহাগুলো হলো- হোহলেনস্টেইন-সাডেল (Hohlenstein-Stadel
), হোহলে ফেল্স
(Hohle Fels
), ভোগেলহার্ড
(Vogelherd
), গেইস্সেংক্লোস্টের্লে
(Geissenklosterle
)।
হোহলেনস্টেইন-সাডেল গুহাচিত্রের ভিতরে পাওয়া গিয়েছে ম্যামোথে দাঁতের উপর খোদাইকরা
চিত্র। অবশ্য, গুহার গায়ে অঙ্কিত নয় বলে এগুলোকে গুহাচিত্রের ভিতরে ধরা হয় না।
ফ্রান্স, স্পেন ই ইতালির বাইরে বিক্ষিপ্তভাবে আরও কিছু গুহচিত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে
পর্তুগাল, ইতালি, সিসিলি, সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, রোমানিয়া এবং রাশিয়ায়। উল্লেখ্য,
চীনের জিয়াঙ্গজি প্রদেশের জিয়ানরেন্ডোং গুহায় পাওয়া গেছে ১৮ হাজার
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মৃৎপাত্র এবং হুনান প্রদেশের ইয়ুচ্যানিয়ান গুহার ১৬ হাজার
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মৃৎপাত্র।
গুহাচিত্রে বিষয়বস্তু
গুহচিত্রের বিষয়বস্তু হিসেবে এ সকল চিত্রে অঙ্কিত হয়েছিল হাতের
ছাপ, সাঙ্কেতিক চিহ্ন এবং প্রাণীর চিত্র। এসকল ছবির ভিতরে কিছু আঁকা হয়েছিল রঙ
ব্যবহার করে, কিছু আঁকা হয়েছিল পাথরের দেওয়া খোদাই করে। রিলিফধর্মী কিছু ছবিকে
ভাষ্কর্যে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। গুহাচিত্রের সাঙ্কেতিক চিহ্নগুলো ছিল কোনো কিছুর প্রতীক। এর ভিতর দিয়ে কোনো বার্তা
প্রকাশ করা হতো। যা আমাদের কাছে এখন দুর্বোধ্য মনে হলেও এদের অর্থবহ ছিল। রিলিফের
কাছ খুব বেশি ছিল না। সম্ভবত এই জাতীয় রিলিফের মধ্য দিয়ে পৃথক পাথর খণ্ড বা
ম্যামোথের দাঁত দিয়ে আদিম ভাস্কর্য। চিত্রকর্মের ভিতরে ছিল শুধু রেখার ব্যবহার করে
মানুষের ছবি। কিন্তু পশুর ছবির ভিতরে দ্বিমাত্রিক রূপ ছিল। রঙের ব্যবহারে অনেক ছবিই
ত্রিমাত্রিক রূপ লাভ করেছিল। প্রথম দিকের ছবিগুলোতে এক রঙের ব্যবহার ছিল। এর নমুনা পাওয়া যায়, ৩০,০০০
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে আঁকা
চাওভেত গুহাচিত্রে পরবর্তী সময়ে
বহু রঙের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় । এর নমুনা পাওয়া
যায়
১৭,০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দের আঁকা
লাসকো গুহাচিত্র
বা ১৪,০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে আঁকা
আলতামিরা
গুহাচিত্রে।
বিষয়বস্তুর বিচারে সার্বিকভাবে গুহাচিত্রগুলোকে পাঁচটি ভাগে
ভাগ করা হয়ে থাকে। এগুলো হলো-
- হাতের ছাপ
(Handprints (and finger markings):
প্রাগৈতিহাসিক গুহচিত্রের হাতের ছাপের নমুনা প্রচুর দেখা যায়। এসব চিত্রে তালুসহ পাঁচটি আঙুলের ছাপ পাওয়া যায়।
প্রাচীনকালে মানুয গুহার নরম মাটির দেওয়ালের গায়ের উপর হাত চেপে ধরে ছাপ তৈরি করতো।
এছাড়া হাতে রঙ মেখে তা পাথরের দেওয়ালের উপর চেপে ধরে ছাপ তৈরি করা হতো। কোনো কোনো
ক্ষেত্রে দেওয়ালে হাত রেখে তার চারপাশে রেখা এঁকে হাতের রূপ দেওয়া হতো।
এক্ষেত্রে রঙ হিসেবে ব্যবহার করা হতো- লাল, সাদা এবং কালো। বিজ্ঞানীরা গবেষণার
সূত্রে জানতে পেরেছেন এ সকল অধিকাংশই মেয়েদের হাতের হাতের ছাপ।
- বিমূর্ত চিহ্ন
(abstract signs):
গুহার গায়ে প্রাগৈতিহাসিক মানুষ এমন কিছু চিহ্ন অঙ্কন করতো, যা সরাসরি কোনো
অর্থকে প্রকাশ করতো না। সম্ভবত এসকল চিহ্ন দিয়ে এরা কোনো অর্থকে প্রকাশ করতো।
আধুনিক কালের মানুষের কাছে অর্থ না বুঝার কারণে দুর্বোধ্য হয়ে গেছে। অনেক
নৃবিজ্ঞানী মনে করেন যে, লিখিত ভাষার আদিরূপ হিসেবে এগুলো ছিল চিত্রলিপি।
এর সূচনা হয়েছিল আফ্রিকায়। পরে এরই ধারাবাহিকতায় এই জাতীয় চিহ্ন অঙ্কিত হয়েছিল
ক্রো-ম্যাগনানদের
অরিগ্ন্যাসিয়ান সভ্যতার কালে। এই পরবর্তী অধ্যায়ে প্রতীকচিত্রগুলো নানাভাবে
অঙ্কিত হয়েছিল।
বিমূর্তচিহ্নগুলো কিছু বিশেষ জ্যামিতিক শৈলীতে আঁকা হয়েছিল। এগুলোর ভিতরে রয়েছে-
রেখা, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বৃ্ত্ত, ডিম্বাকৃত, অর্ধবৃত্ত, আড়াআড়ি-রেখাঙ্কিত,
ক্রসচিহ্ন, উন্মুক্ত কোণ, বিন্দু, পক্ষীরূপ, নখাকৃতি, হৃদপিণ্ডাকার, পাখাকার,
চিরুনি-রূপ, পালকাকার, বৃক্করূপ, মই-আকার, সর্পাকার, সর্পিলাকার, তীরাকার,
বর্শি-আকার, করাতদন্তী। এছাড়া আঁকা হয়েছিল স্ত্রী-অঙ্গ হিসেবে যোনীচিহ্ন।
এসকল চিহ্ন এরা গুহার দেয়ালে, ছাদে, মেঝেতে আঁকতো। কখনো বিক্ষিপ্তভাবে, কখনো
সারিবদ্ধভাবে অঙ্কিত হয়েছিল। অনেক সময় প্রাণী মা মানুষের ছবির পাশে এ সব ছবি
আঁকা হয়েছিল।
- প্রাণীর অবয়ব চিত্রণ
গুহাচিত্রে ভিতরে চিত্রকর্ম বলতে
এক্ষেত্রে বিশেষভাবে বুঝানো হয়ে থাকে- হাতের ছাপ, নানা ধরনের প্রাণী ও মানুষের ছবি।
এ সব ছবি অঙ্কিত হয়েছে নানা রঙে, ছাপ দিয়ে বা খোদাই করে। অধিকাংশ গুহাচিত্রগুলো অঙ্কিত হয়েছিল লাল বা কালো রঙ দিয়ে। লাল রঙের জন্য ব্যবহৃত হয়েছ হেমাটাইট (আয়রন অক্সাইড)
এবং কালো রঙের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে ম্যাঙ্গানিজ ডাই-অক্সাইড বা কয়লা।
প্রাপ্ত গুহাচিত্রের
কালানুক্রমিক সূচি
-
ব্লোম্বোস-গুহাচিত্র
(৭৫-৭০০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)
- ডিয়েপক্লুফ চিত্র
(৬০,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)
- মারোস-এর গুহাচিত্র
(৪০,০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
- সুলাওয়েসি গুহাচিত্র
(৪০,০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
- এল ক্যাস্টিলো গুহাচিত্র
(৩৯,০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
- গোরাহাম গুহাচিত্র
(৩৫,০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
-
আব্রি-ক্যাস্টানেট খোদাইচিত্র
(৩৫,০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ
-
ফুমানে
গুহাচিত্র (৩৫,০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
-
কোলিবোয়াইয়া গুহাচিত্র
(৩০,০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
-
চাওভেত গুহাচিত্র
(৩০,০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
-
ভীমবেদাকা গুহা
(৩০,০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
- গার্গাস গুহাচিত্র
(২৫-২২০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
- কোসকুয়ের গুহাচিত্র
(২৭-১৯০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
- ডুয়েক্স-ওভেরচার গুহা শিল্পকর্ম
(২৬,৫০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
- কুসাক গুহা খোদাইচিত্র
(২৫০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
- গার্গাস গুহাচিত্র
(২৫০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
- পিচ মারলে গুহাচিত্র
(২৫,০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
-
আব্রি দু পোইজোন খোদাইচিত্র
(২৩,০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
- লাস্ক গুহাচিত্র
(১৭,০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
-
ক্যাপ ব্লাঙ্ক গুহাচিত্র
(১৫,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)
- আলতামিরা গুহাচিত্র
(১৪,৮২০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
- ফন্ট-ডি-গুম গুহাচিত্র
(১৪,০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
-
লেস কোম্বারেল্লেস গুহাচিত্র
(১২,০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
-
রোয়ুফফিগ্ন্যাক
(১১,০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
-
তাসিলি ন'আজের গুহাচিত্র
(১০,০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
সূত্র:
http://www.visual-arts-cork.com/prehistoric/lion-man-hohlenstein-stadel.htm