|
হোমো
হ্যাবিলিস
Homo habilis
হোমো
গণের প্রাচীনতম প্রজাতি। ধারণা করা হয়,
২৬
লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
আফ্রিকাতে এই
প্রজাতির
উদ্ভব হয়েছিল।
আর
১৫ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
এরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
নমুনা
Labeled OH 7
ওল্ডোয়ান পাথুরে কুঠার
এরাই প্রথম
পাথুরে কুঠার
এক সময় মনে করা হতো যে, হোমো হ্যাবিলিসরা ছিল
হোমো ইরেক্টাস-দের
পূর্ব-পুরুষ। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রাপ্ত উভয় প্রজাতির জীবাশ্মের তুলনামূলক বিচার
করে দেখা গেছে যে, উভয় প্রজাতির মধ্য অনেক মিল থাকলেও, এরা পৃথকভাবে বিকশিত হয়েছিল।
মূলত উভয় প্রজাতিই আদি কোনো প্রজাতির দুটোর
উপবিভাগ হিসেবে বিকশিত হয়েছিলো।
পিয়াসেনজিয়ান (৩৬-২৫.৮ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) আমলে
পৃথিবীর আবহাওয়া বেশ গরম ও আর্দ্র ছিল। সাগরের পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মহাসাগরীয়
উপকূলীয় অঞ্চল প্লাবিত হয়েছিল। এই সময় আবাহওয়ার পরিবর্তনের ফলে
আফ্রিকার
ইথিওপিয়া অঞ্চলের গভীর অরণ্য হাল্কা হয়ে গিয়েছিল। ফলে অনেক স্থানে ফাঁকা জায়গা
তৈরি হয়েছিল। আর এ সব ফাঁকা জায়গা পূরণ করেছিল ঘাস। এই প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে সৃষ্টি
হয়েছিল 'সাভানা' অঞ্চল।
এই সময়
অস্ট্রালোপিথেকাস
গণের
৫টি প্রজাতির উদ্ভব
হয়েছিল। এই আমলের শেষের দিকে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমে যেতে থাকে এবং বরফ যুগের পরিবেশ
সৃষ্টি হয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে এই বরফযুগের
প্রভাবে উত্তর গোলার্ধের মেরু সংলগ্ন এলাকার জলস্থল বরফ ঢেকে গিয়েছিল।
এই সময়ের ভিতরে ২৬
লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
আফ্রিকাতে হোমো হ্যাবিলিসদের উদ্ভব হয়েছিল।
পরবর্তী
গেলাসিয়ান আমল (২৫.৮-১৮.৬ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)
শেষভাগে অর্থাৎ খ্রিষ্টপূর্ব ১৮ লক্ষ ৬ হাজার অব্দের ভিতরে বরফের আগ্রাসন
বিষুব অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছেছিল। এর ফলে এই সময়ে উত্তর মহাসাগর বিশাল
বরফ-প্রান্তরে পরিণত হয়।
এদের উচ্চতা ছিল মাত্র ১-১.৫ মিটার এবং ওজন ছিল ৩০-৩২
কেজি। আধুনিক মানুষের চেয়ে
এদের হাত ছিল অপেক্ষাকৃত বড়। এরা হাতের সাহায্যে হাতিয়ার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল।
এই কারণে এদের নামকরণ করা হয়েছে হাতুরে মানব
(habillis=handy
man)।
কারণ এদের আবিষ্কৃত জীবাশ্মের কাছে কিছু পাথুরে অস্ত্র পাওয়া
যায়।
এদের মুখ ছোট হলেও,
নাক ততটা নিচু ছিল না এবং চোয়ালের গড়নও ছিল এপদের চেয়ে পাতলা। এদের মাথার খুলির
মাপ ছিল ৫০০-৬৫০ সিসি।
এরা আত্মরক্ষা এবং
শিকারের জন্য অস্ত্র তৈরি করতে শিখেছিল। এদের প্রধান শত্রু ছিল- সেকালের শিকারী
হায়না
(Chasmaporthetes nitidula)
, লেপার্ড, সাবার-টুথ, কুমির।
এদের দ্বারা সৃষ্ট সভ্যতার প্রথম নমুনা পাওয়া যায়
পূর্ব-আফ্রিকার তাঞ্জানিয়ার ওল্ডুভাই জর্জ (Olduvai Gorge) অঞ্চলে।
১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা নভেম্বর, এই অঞ্চলে এই প্রজাতির চোয়ালের দুটি অংশিক জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন
জনাথন লিকি
(Jonathan Leakey)
।
পরবর্তী সময়ে এই জীবাশ্মের বয়স নিরূপণ করা হয়েছে- ১৭ লক্ষ ৫০ হাজার বৎসর। এর নমুনা সংখ্যা
Labeled OH 7
।
এই জীবাশ্মটি আবিষ্কারের পর,
অনেকে মানুষের হোমো স্যাপিয়েন্সদের পূর্ব-পুরুষ হিসাবে এই প্রজাতিকে স্বীকৃতি দিতে চান নি। ১৯৬৪
খ্রিষ্টাব্দে
Louis Leakey,
John Napier and Phillip Tobias
এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীরা এই জীবাশ্মকে
Homo habilis
নামে ঘোষণা দেন। ধারণা করা হয় ২৪ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
এদের দ্বারাই তাঞ্জানিয়ায়
ওল্ডোয়ান সভ্যতা পত্তন ঘটেছিল।
নমুনা OH 24 |
১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে হোমো হ্যাবিলিসদের দ্বিতীয় নমুনা পাওয়া যায়, ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে তাঞ্জানিয়ার ওল্ডুভাই জর্জ অঞ্চলে। এটি ছিল একটি খুলির জীবাশ্ম আবিষ্কৃত। এর নমুনা সংখ্যা- OH 24 । বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন Twiggy। এর আবিষ্কারক ছিলেন পিটার এন্যুবে (Peter Nzube) । বিজ্ঞানীরা এর বয়স নিরূপণ করেছেব ১৮ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এর খুলির মাপ ৬০০ সিসির কিছু কম।
নমুনা ER 1813 |
১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রজাতির অপর একটি খুলির জীবাশ্ম অবিষ্কৃত হয় কেনিয়ার কুবি ফোরা (Koobi Fora) অঞ্চলে। এর নমুনা সংখ্যা ER 1813। এটি আবিষ্কার করেছিলেন কাময়া কিমেউ (Kamoya Kimeu)। ধারণা করা হয়, এর বয়স ১৯ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এর মাথার খুলির মাপ ছিল ৫১০ সিসি। এর কাছাকাছি সময়ে আরও কিছু জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয় কেনিয়ার কুবি ফোরা অঞ্চলেই। তবে এই আবিষ্কারের তারিখ ও আবিষ্কারকের নাম জানা যায় নাই। এর নমুনা সংখ্যা ১৮০৫। ধারণা করা হয় এর বয়স ১৭ লক্ষ ৪০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।